নান্দাইল, ময়মনসিংহ, ১৯ জুন ২০২৫: ধারদেনা ও সহায় সম্পদ বিক্রি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে গিয়ে কাজ না পেয়ে হতাশায় মো. রাজিব মিয়া ওরফে হিরো আলম (৩২) আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়নের মহাবৈ ছাবালিচর গ্রামের বাসিন্দা। আজ সোমবার সকালে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি এই মর্মান্তিক পথ বেছে নেন। খবর পেয়ে বিকেলে তার বাড়িতে গেলে শোকের মাতম দেখা যায়।
আনোয়ারা বেগম (৮০) নামের বৃদ্ধা মা চিৎকার করে কান্না করছেন এবং বলছেন, “আমার বাজানরে মাইর্যালছে আজিজুইল্যা। হেরে তোমরা ধরো। আমি অহন কারে লইয়া বাঁচবাম।”
পরিবারের লোকজন জানায়, আজিজুল নামের এক আদম ব্যবসায়ী, যার বাড়ি পাশের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে, তার মাধ্যমে প্রায় এক বছর আগে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে হিরো আলম সৌদি আরবের দাম্মাম যান। কথা ছিল সেখানে একটি ফ্যাক্টরিতে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার পর আকামা না থাকায় তিনি কাজ পাননি এবং লুকিয়ে জীবনযাপন করছিলেন। পরে ভাইয়ের সহায়তায় কিছু কাজ করলেও নিজের খরচের ব্যয় মেটাতে পারছিলেন না।
এ অবস্থায় দেশে থাকা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পাওনাদাররা তার স্ত্রী চাঁদনি বেগমকে চাপ দিচ্ছিল। স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পাওনাদারদের তোপের মুখে বেকায়দায় পড়েছিলেন। হিরো আলমের স্ত্রী চাঁদনি বেগম ফোনে প্রায় প্রতিদিনই স্বামীর সাথে কথা বলতেন, কিন্তু হিরো আলম টাকা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করতেন এবং সাফ জানিয়ে দিতেন যে তার পক্ষে টাকা পাঠানো সম্ভব হবে না। এক পর্যায়ে বাড়িতে যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
হিরো আলমের ভাবি নিপা আক্তার জানান, গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে হিরো আলম লাইভে এসে তার নম্বরে ফোন দেন। এ সময় স্ত্রী চাঁদনির সাথে ২ মিনিট কথা বলার পর টাকা পাঠানো নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক হয়। এক পর্যায়ে হিরো আলম ফোনটি তাকে (ভাবীকে) দিতে বলেন এবং জানান, তার পক্ষে দেশে টাকা পাঠানো সম্ভব হবে না। তিনি নিজেই খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছেন। এ সময় তিনি তার মা ও দুই সন্তানকে দেখে রাখার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর বড় মেয়ে আশা মনি (১২) ও ছোট মেয়ে হাবিবা আক্তারকে (৭) ফোনটি দিতে বলেন। ছোট মেয়ে হাবিবার সাথে কথা বলতে বলতে একটি গাছে ফাঁসিতে ঝুলে যান তিনি। পরে মোবাইলটির স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে যায়।
নিহত হিরো আলমের ছোট মেয়ে হাবিবা জানায়, বাবা তাকে ফোন করে ভালো করে পড়ালেখা করতে এবং তার জন্য দোয়া করতে বলেন। এই বলেই ফাঁসিতে ঝুলে যান। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর সৌদি আরবে অবস্থান করা বড় ভাই আরিফুল ইসলাম ফোন করে ভাই হিরো আলম ফাঁসিতে ঝুলে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এলাকার লোকজন জানায়, হিরো আলম খুবই ভালো ছেলে ছিল। সংসারের ব্যয় মেটাতে এবং একটি স্বপ্ন নিয়ে সে সৌদি আরব গিয়েছিল। কিন্তু আদম ব্যবসায়ীর কথার ফাঁদে পড়ে এখন সবই শেষ হলো। এ ঘটনার জন্য আদম ব্যবসায়ী আজিজুলের বিচার দাবি করেছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজিজুল মোবাইলে বলেন, “পাঠানোর তিন মাস পর আমার কোনো দায়িত্ব থাকে না।” এই বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।