Hi

১২:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানে ৯ ইউরোপীয় দেশ: অবৈধ বসতি নিয়ে বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ২০ জুন ২০২৫: গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক আগ্রাসন এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের ঘটনায় এবার সরাসরি তেলআবিবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ইউরোপের নয়টি দেশ। যুদ্ধের অষ্টম মাসে গড়িয়ে যাওয়া এই সংঘাতে প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েল কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে চলেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) আল জাজিরা এবং রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেন—এই নয়টি ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্য পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

একটি গোপন কূটনৈতিক চিঠিতে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউরোপীয় কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের সঙ্গে যুক্ত পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য বন্ধে একটি প্রস্তাব তৈরি করে।

চিঠিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (ICJ) একটি মতামতে ফিলিস্তিনি ভূমিতে বসতি স্থাপনকে অবৈধ ঘোষণা করা হতে পারে এবং তা বন্ধে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া, ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৪২.৬ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য বাণিজ্যের মধ্যে কতটা অংশ এই অবৈধ বসতির সঙ্গে জড়িত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ইউরোপীয় নেতারা।

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোট বলেছেন, “বাণিজ্য আমাদের আইনি ও নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। ইউরোপকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের নীতিগুলো কোনো অবৈধ স্থিতিকে সমর্থন না করে।”

চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ইউরোপীয় কমিশন অবৈধ বসতি সংক্রান্ত বাণিজ্য বন্ধে কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্মিলিতভাবে বলছেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত এখনই এমন পদক্ষেপ নেওয়া, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”

এই প্রস্তাব এমন এক সময়ে এলো, যখন ইসরায়েল সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ২২টি অবৈধ বসতি স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে। এসব বসতির মধ্যে কিছু ‘আউটপোস্ট’ ইতোমধ্যেই অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল আরও একঘরে হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আগামী ২৩ জুন বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচনার জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে।

গাজার গণহত্যা ও পশ্চিম তীর দখলের প্রশ্নে এবার ইউরোপ শুধু মৌখিক নিন্দা নয়—অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চাপ সামলানো ইসরায়েলের জন্য সহজ হবে না।

সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স

লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

মৌলভীবাজারে ‘জুলাই মঞ্চ’-এর জেলা কাঠামো প্রকাশ: আহ্বায়ক তানজিয়া শিশির, মুখপাত্র মো. তানিম হোসেন রুহিন

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানে ৯ ইউরোপীয় দেশ: অবৈধ বসতি নিয়ে বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান

আপডেট : ০৫:১২:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ২০ জুন ২০২৫: গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক আগ্রাসন এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের ঘটনায় এবার সরাসরি তেলআবিবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ইউরোপের নয়টি দেশ। যুদ্ধের অষ্টম মাসে গড়িয়ে যাওয়া এই সংঘাতে প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েল কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে চলেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) আল জাজিরা এবং রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেন—এই নয়টি ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্য পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

একটি গোপন কূটনৈতিক চিঠিতে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউরোপীয় কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের সঙ্গে যুক্ত পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য বন্ধে একটি প্রস্তাব তৈরি করে।

চিঠিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (ICJ) একটি মতামতে ফিলিস্তিনি ভূমিতে বসতি স্থাপনকে অবৈধ ঘোষণা করা হতে পারে এবং তা বন্ধে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া, ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৪২.৬ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য বাণিজ্যের মধ্যে কতটা অংশ এই অবৈধ বসতির সঙ্গে জড়িত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ইউরোপীয় নেতারা।

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোট বলেছেন, “বাণিজ্য আমাদের আইনি ও নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। ইউরোপকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের নীতিগুলো কোনো অবৈধ স্থিতিকে সমর্থন না করে।”

চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ইউরোপীয় কমিশন অবৈধ বসতি সংক্রান্ত বাণিজ্য বন্ধে কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্মিলিতভাবে বলছেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত এখনই এমন পদক্ষেপ নেওয়া, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”

এই প্রস্তাব এমন এক সময়ে এলো, যখন ইসরায়েল সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ২২টি অবৈধ বসতি স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে। এসব বসতির মধ্যে কিছু ‘আউটপোস্ট’ ইতোমধ্যেই অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল আরও একঘরে হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আগামী ২৩ জুন বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচনার জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে।

গাজার গণহত্যা ও পশ্চিম তীর দখলের প্রশ্নে এবার ইউরোপ শুধু মৌখিক নিন্দা নয়—অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চাপ সামলানো ইসরায়েলের জন্য সহজ হবে না।

সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স