আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ২১ জুন ২০২৫: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের চলমান পরিস্থিতির কারণে ব্যক্তিগত জীবনে আরও একবার ক্ষতির শিকার হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।1 চলমান সংঘাতের জেরে তার ছেলে আবনার নেতানিয়াহুর বিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে তিনি ঘোষণা করেছেন।2 যুদ্ধকালীন বাস্তবতা এবং পারিবারিক নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগই এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ বলে জানানো হয়েছে।
নেতানিয়াহু নিজেই এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, এই যুদ্ধের জন্য তাকে ও তার পরিবারকে ‘ব্যক্তিগত মাশুল’ চোকাতে হচ্ছে।3 তিনি আরও বলেন, “আমার স্ত্রী সারা ও ছেলে আবনার খুব কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু দেশের এই অবস্থায় ত্যাগ ছাড়া উপায় নেই।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমার পরিবার অন্য সবার মতোই ত্যাগ স্বীকার করছে।4 আমরা সবাই যুদ্ধের ভারী মূল্য দিচ্ছি।”
পরপর দু’বার স্থগিত, সমালোচিত নেতানিয়াহু
আবনারের বিয়ের প্রথম তারিখ নির্ধারিত ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরে।5 কিন্তু ঠিক তার আগেই হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে সেই বিয়েও স্থগিত করা হয়। সেই সময় গাজায় বহু ইসরায়েলি নাগরিক বন্দি থাকায় বিয়ের আয়োজন করায় নেতানিয়াহু সমালোচিত হয়েছিলেন।
চলতি বছরের ১৬ জুন নতুন করে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলের ইরান আক্রমণ এবং তেহরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে সেই অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়।
বিয়ের স্থগিতাদেশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সোরোকা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা এখন এমন এক মুহূর্তে আছি যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটেনের মতো। আমার স্ত্রী সারা একজন হিরো, যিনি পারিবারিক আঘাত সামলে যুদ্ধকালীন বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন।”
জনমনে বিভাজন ও সমালোচনা
তবে নেতানিয়াহুর এই আবেগঘন বক্তব্য ইসরায়েলিদের কাছে ভালোভাবে ধরা পড়েনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইসরায়েলি বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, দেশজুড়ে যখন নিরাপত্তাহীনতা, সেনা হতাহত এবং যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তখন একজন প্রধানমন্ত্রীর নিজের পরিবারের বিয়ে স্থগিতের গল্প বলে পরিস্থিতিকে লঘু করে দেখেছেন। বিশেষ করে স্ত্রী সারাকে ‘হিরো’ আখ্যা দেওয়া নিয়েও অনেকে নেতানিয়াহুকে ‘আত্মমুগ্ধ’ ও ‘আলোচনায় থাকার জন্য নাটকীয়তা করার’ অভিযোগ তুলেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্যে জনসাধারণের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। অনেকে এটিকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে দেখলেও, আরও বড় একটি অংশ মনে করছেন—একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাবনায় জাতির ক্ষতির চেয়ে পারিবারিক ক্ষতির প্রাধান্য পাওয়া উচিত নয়।