বীরগঞ্জ, দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জে নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী তানভীর ইসলাম-এর বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকেও রমরমা ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। তিনি হাজী দানেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত থাকা সত্ত্বেও ভাড়াটে ডাক্তার দিয়ে চেম্বার ও ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছেন বলে জানা গেছে। বহুল আলোচিত একতা ক্লিনিকে সিজারের অন্তরালে চিকিৎসক ইয়াসমিন ইসলামের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি উঠে এসেছে, যেখানে ইয়াসমিনকে “খুনি ডাক্তার ইয়াসমিনের রক্ষক আশ্রয় প্রশ্রয় দানকারী তথা সেল্টার দাতা” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তানভীরের রাজনৈতিক পরিচয় ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ
তানভীর ইসলামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল থানায় এবং তিনি সেখানকার ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, তানভীর ইসলাম ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ও পরিবর্তন করেন। একসময় তিনি “স্বৈরাচার, পতিত, দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী’র পিএস আবুল বাসারের বন্ধু” পরিচয় দিয়ে সকল দুর্নীতি চালিয়েছেন। বর্তমানে তিনি “খোলস পাল্টে বিএনপি সেজে বীরগঞ্জের জনৈক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর নাম ভাঙ্গাতে শুরু করেছেন।”
নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম
বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ রোডে ভাড়া ঘরে খান সুপার মার্কেটে অবস্থিত নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এই সেন্টারে শুক্রবারসহ সপ্তাহে দুই-তিন দিন “অদক্ষ” ডাক্তার ইয়াসমিন ইসলাম নিয়মিত রোগী দেখেন এবং একতা ক্লিনিকে সিজার করেন।
ডাক্তার ইয়াসমিন ইসলাম সম্পর্কে অন্যান্য ক্লিনিক মালিকদের অভিযোগ
বীরগঞ্জের সা’দ ক্লিনিকের মালিক আহসান হাবিব শামীম সহ অন্যান্য ক্লিনিক মালিকেরা জানান, ডাক্তার ইয়াসমিন ইসলাম বদরাগী, রোগী ও রোগীর লোকজনের সাথে খুব দুর্ব্যবহার করেন এবং হাতভারী। এছাড়াও তিনি এনেসথেসিয়া অভিজ্ঞ ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে সাথে না নিয়ে ছাত্রদের নেন এবং কোনো এসিস্ট্যান্ট রাখেন না, যা সম্পূর্ণ অনিয়ম। এসব অনিয়মের কারণেই প্রসূতি মৃত্যুর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে বলে তারা মনে করেন। এই কারণে তারা ইয়াসমিন ইসলামকে কোনো কাজেই ডাকেন না। কেবলমাত্র নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সহযোগিতায় তিনি চেম্বারে রোগী দেখেন এবং একতা ক্লিনিকে সিজার করেন। সিজারের পর ডাক্তার চলে যান, আর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মোকাবেলা করতে হয় ক্লিনিক মালিকদের। তাদের প্রশ্ন, ডাক্তারের কি কোনো দায়ভার নেই?
তানভীরের দ্বৈত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী তানভীর ইসলাম হাজী দানেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত থাকা সত্ত্বেও কিভাবে বীরগঞ্জে একটি বৃহৎ ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
তানভীরের প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনের অবস্থান
অভিযুক্ত ডাক্তার ইয়াসমিন ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী তানভীর ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অনেকে ভিন্নমত প্রকাশ করলেও তিনি সততার সাথে চাকরি ও ব্যবসা করেন এবং “কে কি বলল তাতে আমার যায় আসে না।”
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার আফরোজ সুলতানা লুনা বলেন, পর্যায়ক্রমে বীরগঞ্জের প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের অনিয়ম দূর করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একতা ক্লিনিকের মতো ঝুঁকি নিয়ে চলমান, অনুমোদনহীন, ত্রুটিপূর্ণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।