Hi

০৫:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আরএমও’র বিরুদ্ধে শৈলকুপা হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ: চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত

শৈলকুপা, ঝিনাইদহ, ২৭ জুন ২০২৫: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: আব্দুল্লাহ আল মামুন-এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে উপজেলার সিংহভাগ মানুষের নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি শৈলকুপা হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিকে ‘দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য’তে পরিণত করেছেন।

ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে আঁতাত এবং কমিশন বাণিজ্য

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী, তাদের স্বজন এবং স্থানীয়রা জানান, আরএমও ডা: আব্দুল্লাহ আল মামুন বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন নিয়ে থাকেন। ফলে সামান্য অসুস্থ রোগীকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে পছন্দসই ক্লিনিকে পাঠাতে বাধ্য করেন। হাসপাতালে সকল অপারেশন বন্ধ করে ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের কাছে রোগী পাঠিয়ে সেখানে গিয়ে নিজেই অপারেশন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ব্যক্তিগত চেম্বার ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা

অভিযোগকারীরা আরও জানান, তিনি বেশিরভাগ সময় নিজের কোয়ার্টারে রোগী দেখে ভিজিট নেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী দেখেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে অন্য কোনো ডাক্তারকে রাউন্ডে যেতে বাধাদান করেন এবং তিনি নিজে ক্লিনিক দালালদের সাথে নিয়ে রাউন্ডে যান। ক্লিনিকের কমিশন পেতে রোগীদের ওপর চাপিয়ে দেন অপ্রয়োজনীয় অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আরএমও’র বরাত দিয়ে দালালরা জোর করে রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। নামমাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগীদের ওপর চাপিয়ে দেয় বিলের বোঝা। শৈলকুপা হাসপাতাল এখন আরএমও’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও অনেকে দাবী করেন।

প্রেসক্রিপশন ও ঔষধ কোম্পানির প্রভাব

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি প্রেসক্রিপশনের উপরে টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে পছন্দসই ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতালে ভর্তি ও জরুরী বিভাগে আগত রোগী নিজের সরকারী চেম্বারে ডেকে নিয়ে ভিজিট নেওয়ার অহরহ অভিযোগ তো রয়েছেই। এছাড়াও তিনি হাসপাতালে একাই রাউন্ড দেবেন, অন্য কোনো চিকিৎসক রাউন্ডে যেতে পারবে না—এমন নির্দেশনা দেন। মনোনীত ক্লিনিক দালালদের সাথে নিয়ে রাউন্ডে গেলেই মেলে টেস্টের কমিশন। অন্যদিকে বিভিন্ন নিম্নমানের ঔষধ কোম্পানির ঔষধ লিখে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা।

ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি

হাসপাতালের আরএমও তার কোয়ার্টারে ব্যক্তিগত চেম্বার খুলে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখার কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একজন বিশেষ ব্যক্তির নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি চিকিৎসা বাণিজ্যে মেতেছেন এবং এ কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। যদি কেউ মুখ খোলে, তাহলে তাকে হামলা-মামলার ভয় দেখানোসহ লালিত গুন্ডা বাহিনী দিয়ে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় বলে শত শত অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

সাংবাদিকদের সাথে আরএমও’র আচরণ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মন্তব্য

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য নিতে তার কোয়ার্টারে গেলে দেখা মেলে ব্যক্তিগত চেম্বারের। সেখানে তিনি শত শত রোগী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। এমতাবস্থায় সাংবাদিক দেখে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। সাংবাদিকরা তার বক্তব্য নিতে গেলে তিনি উল্টো সাংবাদিকদেরই চাঁদাবাজ বলে ফাঁসানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আল মামুন বলেন, “হাসপাতালে কর্মরত সকল ডাক্তারের রাউন্ড দেয়ার অধিকার রয়েছে। রাউন্ডের সময় বহিরাগত ও ক্লিনিক দালাল এবং ঔষদ কোম্পানির লোকজন সাথে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

আরএমও’র বিরুদ্ধে শৈলকুপা হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ: চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত

আরএমও’র বিরুদ্ধে শৈলকুপা হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ: চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত

আপডেট : ০৮:১৪:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

শৈলকুপা, ঝিনাইদহ, ২৭ জুন ২০২৫: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: আব্দুল্লাহ আল মামুন-এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে উপজেলার সিংহভাগ মানুষের নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি শৈলকুপা হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিকে ‘দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য’তে পরিণত করেছেন।

ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে আঁতাত এবং কমিশন বাণিজ্য

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী, তাদের স্বজন এবং স্থানীয়রা জানান, আরএমও ডা: আব্দুল্লাহ আল মামুন বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন নিয়ে থাকেন। ফলে সামান্য অসুস্থ রোগীকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে পছন্দসই ক্লিনিকে পাঠাতে বাধ্য করেন। হাসপাতালে সকল অপারেশন বন্ধ করে ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের কাছে রোগী পাঠিয়ে সেখানে গিয়ে নিজেই অপারেশন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ব্যক্তিগত চেম্বার ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা

অভিযোগকারীরা আরও জানান, তিনি বেশিরভাগ সময় নিজের কোয়ার্টারে রোগী দেখে ভিজিট নেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী দেখেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে অন্য কোনো ডাক্তারকে রাউন্ডে যেতে বাধাদান করেন এবং তিনি নিজে ক্লিনিক দালালদের সাথে নিয়ে রাউন্ডে যান। ক্লিনিকের কমিশন পেতে রোগীদের ওপর চাপিয়ে দেন অপ্রয়োজনীয় অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আরএমও’র বরাত দিয়ে দালালরা জোর করে রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। নামমাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগীদের ওপর চাপিয়ে দেয় বিলের বোঝা। শৈলকুপা হাসপাতাল এখন আরএমও’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও অনেকে দাবী করেন।

প্রেসক্রিপশন ও ঔষধ কোম্পানির প্রভাব

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি প্রেসক্রিপশনের উপরে টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে পছন্দসই ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতালে ভর্তি ও জরুরী বিভাগে আগত রোগী নিজের সরকারী চেম্বারে ডেকে নিয়ে ভিজিট নেওয়ার অহরহ অভিযোগ তো রয়েছেই। এছাড়াও তিনি হাসপাতালে একাই রাউন্ড দেবেন, অন্য কোনো চিকিৎসক রাউন্ডে যেতে পারবে না—এমন নির্দেশনা দেন। মনোনীত ক্লিনিক দালালদের সাথে নিয়ে রাউন্ডে গেলেই মেলে টেস্টের কমিশন। অন্যদিকে বিভিন্ন নিম্নমানের ঔষধ কোম্পানির ঔষধ লিখে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা।

ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি

হাসপাতালের আরএমও তার কোয়ার্টারে ব্যক্তিগত চেম্বার খুলে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখার কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একজন বিশেষ ব্যক্তির নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি চিকিৎসা বাণিজ্যে মেতেছেন এবং এ কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। যদি কেউ মুখ খোলে, তাহলে তাকে হামলা-মামলার ভয় দেখানোসহ লালিত গুন্ডা বাহিনী দিয়ে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় বলে শত শত অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

সাংবাদিকদের সাথে আরএমও’র আচরণ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মন্তব্য

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য নিতে তার কোয়ার্টারে গেলে দেখা মেলে ব্যক্তিগত চেম্বারের। সেখানে তিনি শত শত রোগী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। এমতাবস্থায় সাংবাদিক দেখে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। সাংবাদিকরা তার বক্তব্য নিতে গেলে তিনি উল্টো সাংবাদিকদেরই চাঁদাবাজ বলে ফাঁসানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আল মামুন বলেন, “হাসপাতালে কর্মরত সকল ডাক্তারের রাউন্ড দেয়ার অধিকার রয়েছে। রাউন্ডের সময় বহিরাগত ও ক্লিনিক দালাল এবং ঔষদ কোম্পানির লোকজন সাথে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।”