ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতা ও সরকারের ওপর চাপ
বিএনপি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতার বিষয়টি বর্তমানে বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছে এবং আগামী আরও বেশ কিছুদিন একইভাবে তা অব্যাহত রেখে সরকারের ওপর চাপ বজায় রাখবে। দলটির নীতিনির্ধারকদের অভিমত, যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা ব্যর্থ হতে দিতে চান না এবং শুরু থেকেই সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে আসছেন, সেহেতু সরকারের ওপর তাদের এখনো প্রত্যাশা, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। বিরাজমান সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সামনের দিকে অগ্রসর হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
গত সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ষড়যন্ত্রের শঙ্কা
বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, বিভিন্ন পক্ষ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে হঠাৎ করে মাঠে নামায় এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অবনতিশীল। কেউ কেউ মনে করেন, সরকারকে বিপদে ফেলতে নানা চক্রান্ত চলছে। সম্প্রতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ নয়, এমন কিছু ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে বিভিন্ন পক্ষের মাঠে আন্দোলনে নামার ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তারা। তাদের শঙ্কা, পতিত স্বৈরাচারের লোকজনও সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
এনসিপি ও অন্যান্য ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ
বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেন, ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা যে থেমে থেমে নিত্যনতুন দাবি তুলছে এবং দাবি আদায়ে রাজপথে নামছে, এর মধ্য দিয়েও বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। বিএনপির কারও কারও শঙ্কা, রাষ্ট্রপতি অপসারণ, সংবিধান বাতিল, গণভোট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন—এই ইস্যুগুলোতে তারা (এনসিপি) সামনে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। সরকার সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি না, কিংবা সরকারের অবস্থান তখন কী হয়, সেটি নিয়েও তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কেউ কেউ বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানালেও সরকার এখনো সেটাকে সেভাবে আমলে নিচ্ছে না। বরং সংস্কার ও নির্বাচনকে তারা মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে সরকার আসলে কী করতে চায় কিংবা সরকার আদৌ নির্বাচন দেবে কি না, তা নিয়েও নেতারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।
ইশরাকের মেয়র শপথ ও আন্দোলন
বৈঠকে আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়াতে সরকারের গড়িমসি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি নীতিগতভাবে মনে করে, এমন অবস্থায় ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার কর্মী-সমর্থক, দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং ঢাকাবাসী যে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ করছে, সেটিকে ‘যৌক্তিক ও সংগত’ মনে করে বিএনপি।