বীরগঞ্জে একতা ক্লিনিক ও ডা. ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ: সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যুতে ফুঁসছে এলাকাবাসী
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: রনজিৎ সরকার রাজ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে একতা ক্লিনিক এবং জনৈক ডা. ইয়াসমিন-এর বিরুদ্ধে সিজারিয়ান অপারেশনের পর এক প্রসূতি, আশা মনি (১৯), মারা যাওয়ার ঘটনায় তীব্র জনরোষ এবং গণআন্দোলনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতিতেই এই মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে এবং পরবর্তীতে মৃতদেহকে ‘আইসিইউতে ভর্তি’ দেখিয়ে স্বজনদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
অভিযোগের মূল বিষয়বস্তু
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিজারিয়ান অপারেশনের নামে প্রসূতি আশা মনির মৃত্যুর পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। ক্লিনিক মালিক পক্ষ এবং তাদের কথিত ‘মানুষ মারার সিন্ডিকেট’ মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় স্বজনদের ধোঁকা দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনার পর থেকেই বীরগঞ্জের সাধারণ জনগণ চরম ক্ষোভে ফুঁসছে। এলাকায় বর্তমানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং যেকোনো মুহূর্তে গণআন্দোলন ও ক্লিনিক ঘেরাও কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনগণের একটাই প্রশ্ন, “একটা নিরীহ মা মারা গেল, তার দায় কে নেবে?”
ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষের নীরবতা
ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় সচেতন মহলের গুরুতর অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে একতা ক্লিনিকসহ আরও বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক অদক্ষ জনবল এবং নিম্নমানের যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। বারবার এমন অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে কোনো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করছে না, যা এলাকাবাসীকে হতবাক করেছে।
এলাকাবাসী আরও জানিয়েছে, এর আগেও এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সাময়িকভাবে ভয়ভীতির সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ও তদন্ত কমিটি গঠন
বর্তমানে জনগণ অনুমোদনবিহীন ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপারেশনের জন্য মানসম্মত যন্ত্রপাতি, সার্বক্ষণিক দক্ষ ডাক্তার এবং প্রয়োজনীয় জনবল ছাড়া এসব ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন তারা। ইউপি সদস্য সেলিম রেজাসহ অসংখ্য সচেতন নাগরিক একতা ক্লিনিক ও ভাড়া করা ডাক্তার দিয়ে সিজার বন্ধে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সিজারের নামে প্রসূতির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটনায় ভুক্তভোগীরা টাকার বিনিময়ে নীরব থাকলেও বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ অফিসার ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা জানিয়েছেন যে, এই ঘটনায় একটি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনা বীরগঞ্জের স্বাস্থ্যসেবার মান এবং বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর জবাবদিহিতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে।