Hi

০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে হানিফ মেম্বার, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মামলার আসামি

প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে হানিফ মেম্বার, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মামলার আসামি

দিনাজপুর, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: রনজিৎ সরকার রাজ

দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসের সঙ্গে ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবু হানিফের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। উভয় পক্ষের সমর্থকদের দাবি অনুযায়ী, এই বিরোধের বিষয়টি বীরগঞ্জ প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ অবগত। প্রায় দুই বছর আগেও চেয়ারম্যান ও মেম্বার একটি চলমান বৈঠকে হাতাহাতি করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলেন।

তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করা হলেও হানিফ মেম্বার “প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছেন” এবং প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গতকালের ঘটনা: চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা ও মামলা

গত ২৬ জুন, ২০২৫ সন্ধ্যায় খলসী বাজার সংলগ্ন হানিফ মেম্বারের বাড়ির আশেপাশে বাবুল ও দুলুর জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য দিনব্যাপী জমি পরিমাপের পর একটি উঠান বৈঠক বসে। অভিযোগ উঠেছে, সুযোগ সন্ধানী আবু হানিফ মেম্বার (যিনি গণঅধিকার পরিষদের বহিষ্কৃত উপজেলা সভাপতি ও অনেক পদধারী), সেই বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার জন্য তেড়ে আসেন। চেয়ারম্যানের সমর্থকরা, যার মধ্যে মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে ফরিদ আলীও ছিলেন, তাদের বাধায় হানিফ মেম্বার পিছু হটতে বাধ্য হন।

এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে হানিফ মেম্বারের ছেলে রাজিব ও স্ত্রী রোজিনা সহ কেউই তার পক্ষ অবলম্বন করেননি বলে জানা গেছে। হানিফ মেম্বার এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন।

মারপিট ও চুরির অভিযোগ, পুলিশের অভিযান

তবে, অভিযোগ উঠেছে যে হানিফ মেম্বার, তার স্ত্রী রোজিনা এবং ছেলে রজিবুল মিলে চেয়ারম্যানের সমর্থক ফরিদ আলীকে মারপিট করে তার পকেট থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং চেয়ারম্যানকে আটকে রেখে তার পকেট থেকে ৭৫ হাজার টাকা “অসৎ উদ্দেশ্যে চুরি” করেছেন। এই ঘটনায় ফরিদ আলী বাদী হয়ে হানিফ মেম্বারকে প্রধান অভিযুক্ত করে একটি মামলা (নম্বর ২২) দায়ের করেছেন।

গতকাল রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত হানিফের বাড়িতে অভিযান চালালেও তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। এদিকে, একটি ফেসবুক লাইভে অভিযুক্ত হানিফ মেম্বার দাবি করেছেন যে তার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছিল, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

জনতা ও নেতৃবৃন্দের বিক্ষোভ

মেম্বার আবু হানিফ কর্তৃক আনিস চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থক ঘটনাস্থলে হাজির হন। তারা চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে মিছিল সহকারে থানা গেটে এসে হানিফ মেম্বারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

উপস্থিত বিপুল সংখ্যক জনতাকে শান্ত করতে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু, ফজলে আলম শাহীন, আলহাজ্ব তানভীর আহমেদ চৌধুরী, শাহজাহান সিরাজ শিপন, আরিফ মাসুম পল্লব, আব্দুল জব্বার সহ অন্যান্যরা।

বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল গফুর ছুটিতে থাকায় ইন্সপেক্টর তদন্ত শিহাব উদ্দিন দায়িত্ব পালন করছিলেন। মারপিট ও চুরির ঘটনায় ফরিদ আলীর এজাহারের ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত মেম্বার আবু হানিফকে এখনো পাওয়া যায়নি, তবে তিনি “বীরগঞ্জ টিভি” নামে একটি ফেসবুক পেজে ঘটনার বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা ও বক্তারা আবু হানিফকে “নানা অপকর্মের হোতা” এবং “এলাকার মানুষকে অহেতুক হয়রানি করার” অভিযোগ করেছেন।

এ সময় বীরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাওন সরকার, ইন্সপেক্টর তদন্ত শিহাব উদ্দিন, এসআই জাহাঙ্গীর বাদশা রনি, এএসআই সিরাজুল আওলাদ সুমন এবং অন্যান্য সকল স্টাফ উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

ব্যবসায়ীকে দাড়ি ধরে টানা-হেঁচড়া করায় আশুলিয়া থেকে নাসিম ভূঁইয়া গ্রেফতার

প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে হানিফ মেম্বার, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মামলার আসামি

আপডেট : ০২:৩২:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে হানিফ মেম্বার, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মামলার আসামি

দিনাজপুর, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: রনজিৎ সরকার রাজ

দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসের সঙ্গে ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবু হানিফের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। উভয় পক্ষের সমর্থকদের দাবি অনুযায়ী, এই বিরোধের বিষয়টি বীরগঞ্জ প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ অবগত। প্রায় দুই বছর আগেও চেয়ারম্যান ও মেম্বার একটি চলমান বৈঠকে হাতাহাতি করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলেন।

তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করা হলেও হানিফ মেম্বার “প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছেন” এবং প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গতকালের ঘটনা: চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা ও মামলা

গত ২৬ জুন, ২০২৫ সন্ধ্যায় খলসী বাজার সংলগ্ন হানিফ মেম্বারের বাড়ির আশেপাশে বাবুল ও দুলুর জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য দিনব্যাপী জমি পরিমাপের পর একটি উঠান বৈঠক বসে। অভিযোগ উঠেছে, সুযোগ সন্ধানী আবু হানিফ মেম্বার (যিনি গণঅধিকার পরিষদের বহিষ্কৃত উপজেলা সভাপতি ও অনেক পদধারী), সেই বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার জন্য তেড়ে আসেন। চেয়ারম্যানের সমর্থকরা, যার মধ্যে মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে ফরিদ আলীও ছিলেন, তাদের বাধায় হানিফ মেম্বার পিছু হটতে বাধ্য হন।

এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে হানিফ মেম্বারের ছেলে রাজিব ও স্ত্রী রোজিনা সহ কেউই তার পক্ষ অবলম্বন করেননি বলে জানা গেছে। হানিফ মেম্বার এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন।

মারপিট ও চুরির অভিযোগ, পুলিশের অভিযান

তবে, অভিযোগ উঠেছে যে হানিফ মেম্বার, তার স্ত্রী রোজিনা এবং ছেলে রজিবুল মিলে চেয়ারম্যানের সমর্থক ফরিদ আলীকে মারপিট করে তার পকেট থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং চেয়ারম্যানকে আটকে রেখে তার পকেট থেকে ৭৫ হাজার টাকা “অসৎ উদ্দেশ্যে চুরি” করেছেন। এই ঘটনায় ফরিদ আলী বাদী হয়ে হানিফ মেম্বারকে প্রধান অভিযুক্ত করে একটি মামলা (নম্বর ২২) দায়ের করেছেন।

গতকাল রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত হানিফের বাড়িতে অভিযান চালালেও তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। এদিকে, একটি ফেসবুক লাইভে অভিযুক্ত হানিফ মেম্বার দাবি করেছেন যে তার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছিল, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

জনতা ও নেতৃবৃন্দের বিক্ষোভ

মেম্বার আবু হানিফ কর্তৃক আনিস চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থক ঘটনাস্থলে হাজির হন। তারা চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে মিছিল সহকারে থানা গেটে এসে হানিফ মেম্বারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

উপস্থিত বিপুল সংখ্যক জনতাকে শান্ত করতে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু, ফজলে আলম শাহীন, আলহাজ্ব তানভীর আহমেদ চৌধুরী, শাহজাহান সিরাজ শিপন, আরিফ মাসুম পল্লব, আব্দুল জব্বার সহ অন্যান্যরা।

বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল গফুর ছুটিতে থাকায় ইন্সপেক্টর তদন্ত শিহাব উদ্দিন দায়িত্ব পালন করছিলেন। মারপিট ও চুরির ঘটনায় ফরিদ আলীর এজাহারের ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত মেম্বার আবু হানিফকে এখনো পাওয়া যায়নি, তবে তিনি “বীরগঞ্জ টিভি” নামে একটি ফেসবুক পেজে ঘটনার বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা ও বক্তারা আবু হানিফকে “নানা অপকর্মের হোতা” এবং “এলাকার মানুষকে অহেতুক হয়রানি করার” অভিযোগ করেছেন।

এ সময় বীরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাওন সরকার, ইন্সপেক্টর তদন্ত শিহাব উদ্দিন, এসআই জাহাঙ্গীর বাদশা রনি, এএসআই সিরাজুল আওলাদ সুমন এবং অন্যান্য সকল স্টাফ উপস্থিত ছিলেন।