পাবনার জনবহুল বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত মহেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয় নাক চেপে ধরে। কারণ বিদ্যালয়টির ঠিক পাশেই গড়ে উঠেছে একটি বিশাল ময়লার ভাগাড়। এই ভাগাড় থেকে ছড়াচ্ছে অসহ্য দুর্গন্ধ, যা মশা-মাছির বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ স্থান। দূষিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের আশপাশের পরিবেশ, যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাবনা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাস টার্মিনালের অদূরে মহেন্দ্রপুর রেলগেট এবং ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের কোল ঘেঁষে উন্মুক্ত স্থানে পৌরসভার আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। মহেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসরুমে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে এক করুণ দৃশ্য – শিক্ষার্থীরা এক হাতে নাক চেপে ধরে রেখেছে, আর অন্য হাতে লেখার চেষ্টা করছে। শিক্ষিকাও সামনের চেয়ারে বসে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন। এই চিত্র বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি কক্ষে একই রকম।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, সাধারণ সময়ে দুর্গন্ধ কিছুটা সহনীয় থাকলেও রোদ ও গরমে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। গত তিন মাস ধরে পৌরসভা বিদ্যালয়ের পাশে মহাসড়ক ঘেঁষে আবর্জনা ফেলা শুরু করেছে। খোলা আকাশের নিচে পচা আবর্জনা স্তূপীকৃত থাকায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। এর ফলে বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোখলেসুর রহমান রাসেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাগাড়ের এত কাছে একটি স্কুল অবস্থিত, কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলার আগে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়নি। হঠাৎ করে ময়লা ফেলা শুরু করায় স্কুলের বাচ্চারা ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছে না। আমরা শিক্ষকরাও ঠিকভাবে পাঠদান করতে পারছি না। এমনকি অনেক শিক্ষক বদলি হওয়ারও চিন্তা করছেন।
শিক্ষিকা সালেহা পারভীন ও শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম জানান, ভাগাড়ে প্রতিনিয়ত অসহ্য দুর্গন্ধ থাকে। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই পেটের পীড়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। অসুস্থ হলে অভিভাবকদের ডেকে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়। দ্রুত এই ময়লার ভাগাড় বিদ্যালয়ের পাশ থেকে সরানো জরুরি।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী, তোয়া ও রাব্বি জানায়, দরজা-জানালা বন্ধ করেও নাকের ডগা চেপে ক্লাস করতে হয়। দুর্গন্ধে ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। তারা এই ময়লার ভাগাড় বিদ্যালয়ের পাশে দেখতে চায় না।
শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী শহরের রাঘবপুর মহল্লাসহ বিভিন্ন মেসে বসবাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে এই সড়ক দিয়েই তাদের ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে হয়। ময়লার এই তীব্র দুর্গন্ধে তারাও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসহাক জানান, এই সড়ক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আটটি বাস দিনে ১৫-১৬ বার চলাচল করে। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দুটি মিনিবাসও চলাচল করে। এই দুর্গন্ধে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফ ও মেহেদী হাসান বলেন, এটি একটি জনবহুল এলাকা। ময়লার ভাগাড়ের পাশেই তাদের বসতবাড়ি। দুর্গন্ধে ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। ঘর ও বিছানাপত্র মাছি আর পোকায় ভরে গেছে।
আশপাশের আরও কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দুর্গন্ধে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করাও সম্ভব হচ্ছে না। তার উপর মাঝেমধ্যে শতাধিক শূকর ছাড়া হয়, যারা ময়লা ঘেঁটে দুর্গন্ধ আরও বাড়িয়ে তোলে। এলাকার পরিবেশ চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। মহেন্দ্রপুর শাহিন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক শাহিন আলম বলেন, দুর্গন্ধে তার কারখানায় শ্রমিকরা কাজে আসতে চায় না। পৌরসভায় অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে পাবনা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. ওবায়েদ উল হক জানান, ফকিরপুরে বর্জ্য ফেলার মূল স্টেশনটিতে প্রকল্পের কাজ চলমান, যা দ্রুতই শেষ হবে। বর্তমানে বাধ্য হয়েই মহেন্দ্রপুরে বর্জ্য ফেলতে হচ্ছে। তবে দুর্গন্ধ কমাতে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হচ্ছে এবং সড়কের পাশে টিন দিয়ে আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপাতত এর কোনো বিকল্প পথ নেই বলে তিনি জানান।