Hi

০৩:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেরপুরের গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ শুরু

শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে আনারস চাষ। ভালো ফলন এবং স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।

চাষীরা জানিয়েছেন, বন্য হাতির আক্রমণে ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হলেও আনারস চাষে কৃষকেরা সফলতা পেয়েছেন। জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে শ্রীবরদি, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক আনারস চাষ করে তারা সফল হয়েছেন। চাষীদের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গারো পাহাড়ের হাজার হাজার একর পতিত জমি আনারস চাষের আওতায় আসবে এবং কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে সীমান্তঘেঁষা ঝিনাইগাতি উপজেলার বাঁকাকুড়াতে জনসন ম্রং নামে এক আদিবাসী কৃষক ৫০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আনারস চাষ করেছিলেন। সেই বছর চারা ক্রয়, বাগান পরিচর্যা, সেচ, সার ও শ্রমিকসহ তার খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। আনারস বিক্রির পর খরচ বাদে তার লাভ হয়েছিল আরও ৫০ হাজার টাকা। লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ২০২৪ সালে তিনি একই উপজেলার গজনী অবকাশ কেন্দ্রের পাশে ১০০ শতক জমিতে আনারসের চাষ করেন। এ বছর আনারস বিক্রির পর তিনি দেড় লাখ টাকারও বেশি মুনাফা পাবেন বলে আশাবাদী।

এছাড়াও শেরপুরের পাহাড়ি এলাকায় আনারস চাষের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় করছেন। নিজের চোখে দেখে এবং হাতে তুলে মিষ্টি আনারস খেয়ে অনেকেই অবাক হচ্ছেন এবং ফেরার পথে পরিবারের সদস্যদের জন্য আনারস নিয়ে যাচ্ছেন।

আনারস দেখতে আসা দর্শনার্থী নজরুল ইসলাম (৪০) জানান, তিনি পাশের জেলা জামালপুরের ইসলামপুরে থাকেন। বন্ধুর মাধ্যমে শেরপুরের পাহাড়ি এলাকায় মিষ্টি আনারসের চাষের খবর জানতে পেরে দেখতে ও খেতে এসেছেন। ইউটিউবার ফারহানা প্রেমা (৩৫) বলেন, শেরপুরেও এত মিষ্টি আনারসের চাষ হয়েছে, এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের সহযোগিতা করা হলে গারো পাহাড়ের হাজার হাজার একর পতিত জমি আনারস চাষের আওতায় আসবে।

স্থানীয় কৃষক কুমেন্দ্র ম্রং (৪৫) জানান, পাহাড়ি এলাকায় বুনো হাতির উপদ্রবে ধান ও সবজি চাষ করা কঠিন। আনারস কাঁটাযুক্ত ফল হওয়ায় পাহাড়ি জমিতে এটি চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব, কারণ হাতি কাঁটাকে ভয় পায়। কৃষক এনথনি মারাক (৪২) বলেন, আকার ছোট হলেও এখানকার আনারস দারুণ মিষ্টি। গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষের সম্ভাবনা বাড়ছে এবং শেরপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী আসছে। তারা বাগান থেকে আনারস কিনে খাচ্ছেন এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও আগামী বছর ১ একর জমিতে আনারস চাষ করবেন এবং সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার চাষীরা আনারস চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন বলে আশাবাদী।

আনারস চাষী জনসং ম্রং (৫০) বলেন, ১৯৯৩ সালে তিনি প্রথম টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারস চাষের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে শেরপুরে ফিরে পরীক্ষামূলক চাষ করেন এবং বর্তমানে আনারস চাষে তার লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। কোনো কৃষক আনারস চাষে আগ্রহী হলে তিনি চারা সহ অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

ঝিনাইগাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ঝিনাইগাতির গারো পাহাড়ে আনারস চাষে সফলতা দেখে এখন নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীতেও এই চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বন্য হাতির আক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া গেলে শেরপুরের পাহাড়ি অঞ্চলটি দেশের অন্যতম প্রধান আনারস উৎপাদন অঞ্চলে পরিচিতি পাবে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদি, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতির মাটি আনারস চাষের জন্য উপযোগী। উচ্চমূল্যের এই ফল চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কৃষি কর্মকর্তা। (বাসস)

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

পলাতক হাসিনার জন্মদিন পালন ও গোপন বৈঠক, কলেজ অধ্যক্ষ বেলাল গ্রেফতার

শেরপুরের গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ শুরু

আপডেট : ১২:০৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে আনারস চাষ। ভালো ফলন এবং স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।

চাষীরা জানিয়েছেন, বন্য হাতির আক্রমণে ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হলেও আনারস চাষে কৃষকেরা সফলতা পেয়েছেন। জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে শ্রীবরদি, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক আনারস চাষ করে তারা সফল হয়েছেন। চাষীদের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গারো পাহাড়ের হাজার হাজার একর পতিত জমি আনারস চাষের আওতায় আসবে এবং কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে সীমান্তঘেঁষা ঝিনাইগাতি উপজেলার বাঁকাকুড়াতে জনসন ম্রং নামে এক আদিবাসী কৃষক ৫০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আনারস চাষ করেছিলেন। সেই বছর চারা ক্রয়, বাগান পরিচর্যা, সেচ, সার ও শ্রমিকসহ তার খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। আনারস বিক্রির পর খরচ বাদে তার লাভ হয়েছিল আরও ৫০ হাজার টাকা। লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ২০২৪ সালে তিনি একই উপজেলার গজনী অবকাশ কেন্দ্রের পাশে ১০০ শতক জমিতে আনারসের চাষ করেন। এ বছর আনারস বিক্রির পর তিনি দেড় লাখ টাকারও বেশি মুনাফা পাবেন বলে আশাবাদী।

এছাড়াও শেরপুরের পাহাড়ি এলাকায় আনারস চাষের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় করছেন। নিজের চোখে দেখে এবং হাতে তুলে মিষ্টি আনারস খেয়ে অনেকেই অবাক হচ্ছেন এবং ফেরার পথে পরিবারের সদস্যদের জন্য আনারস নিয়ে যাচ্ছেন।

আনারস দেখতে আসা দর্শনার্থী নজরুল ইসলাম (৪০) জানান, তিনি পাশের জেলা জামালপুরের ইসলামপুরে থাকেন। বন্ধুর মাধ্যমে শেরপুরের পাহাড়ি এলাকায় মিষ্টি আনারসের চাষের খবর জানতে পেরে দেখতে ও খেতে এসেছেন। ইউটিউবার ফারহানা প্রেমা (৩৫) বলেন, শেরপুরেও এত মিষ্টি আনারসের চাষ হয়েছে, এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের সহযোগিতা করা হলে গারো পাহাড়ের হাজার হাজার একর পতিত জমি আনারস চাষের আওতায় আসবে।

স্থানীয় কৃষক কুমেন্দ্র ম্রং (৪৫) জানান, পাহাড়ি এলাকায় বুনো হাতির উপদ্রবে ধান ও সবজি চাষ করা কঠিন। আনারস কাঁটাযুক্ত ফল হওয়ায় পাহাড়ি জমিতে এটি চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব, কারণ হাতি কাঁটাকে ভয় পায়। কৃষক এনথনি মারাক (৪২) বলেন, আকার ছোট হলেও এখানকার আনারস দারুণ মিষ্টি। গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষের সম্ভাবনা বাড়ছে এবং শেরপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী আসছে। তারা বাগান থেকে আনারস কিনে খাচ্ছেন এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও আগামী বছর ১ একর জমিতে আনারস চাষ করবেন এবং সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার চাষীরা আনারস চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন বলে আশাবাদী।

আনারস চাষী জনসং ম্রং (৫০) বলেন, ১৯৯৩ সালে তিনি প্রথম টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারস চাষের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে শেরপুরে ফিরে পরীক্ষামূলক চাষ করেন এবং বর্তমানে আনারস চাষে তার লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। কোনো কৃষক আনারস চাষে আগ্রহী হলে তিনি চারা সহ অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

ঝিনাইগাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ঝিনাইগাতির গারো পাহাড়ে আনারস চাষে সফলতা দেখে এখন নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীতেও এই চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বন্য হাতির আক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া গেলে শেরপুরের পাহাড়ি অঞ্চলটি দেশের অন্যতম প্রধান আনারস উৎপাদন অঞ্চলে পরিচিতি পাবে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদি, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতির মাটি আনারস চাষের জন্য উপযোগী। উচ্চমূল্যের এই ফল চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কৃষি কর্মকর্তা। (বাসস)