এ প্রজন্মের দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী সারিকা সাবাহ দীর্ঘ বিরতির পর আবারও অভিনয়ে ফিরেছেন। অনেক নাটকে কাজ করে দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া এই অভিনেত্রী ওয়েব সিরিজেও নিয়মিত মুখ। তবে মাঝে দুই বছর অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলেন তিনি। এবার তিনি বিগ বাজেটের ওয়েব সিরিজ ‘গুলমোহর’-এ অভিনয় করে আবারও দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলেছেন। নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকীর এই নতুন সিরিজে শান্তা চরিত্রে দেখা যাচ্ছে তাকে। সম্প্রতি এই কাজ এবং ব্যক্তিগত বিরতি নিয়ে সারিকার সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।

দীর্ঘ বিরতির কারণ জানতে চাইলে সারিকা বলেন, একটা সময় মনে হচ্ছিল যেসব নাটকে অভিনয় করছি, সেগুলোর গল্প ও বিষয়বস্তু প্রায় একই রকম। খুব একঘেয়ে লাগছিল। এছাড়া সহশিল্পী সংকটও দেখা দিয়েছিল। সবাই নিজেদের পছন্দের বলয়ে কাজ করছিলেন। তাই একটু বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পাঁচ বছর আগে ক্যারিয়ার শুরু করলেও আমার নাটকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তারপরও সন্তুষ্ট হতে না পারায় সরে দাঁড়িয়েছিলাম। তবে এই সময়টাতে প্রচুর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছি এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শুভেচ্ছাদূতও হয়েছি।

‘গুলমোহর’-এর জন্য কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকীর প্রশংসা করেন। ‘তাকদীর’ ও ‘কারাগার’-এর মতো দর্শকপ্রিয় কাজ তিনি আগেই উপহার দিয়েছেন। তাই এই সিরিজের শুরু থেকেই সারিকা চিন্তামুক্ত ছিলেন। সিরিজটি মুক্তির পর তিনি এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। প্রচুর দর্শক তাকে মেসেজ করছেন এবং অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, সিরিজটি ইতোমধ্যে সাফল্য লাভ করেছে।

‘গুলমোহর’-এ তার চরিত্র শান্তা প্রসঙ্গে সারিকা বলেন, এতদিন তিনি যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এটি তার থেকে ভিন্ন। এটি একটি খুব পরিণত চরিত্র, যা সচরাচর বাংলাদেশের পরিবারগুলোতে দেখা যায় না। তার চরিত্রে অনেকগুলো স্তর রয়েছে। কখনো সে বন্ধুর মতো, কখনো বাড়ির বউ, আবার কখনো ট্র্যাজেডির শিকার। এই চরিত্রটি করতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত।

এই সিরিজে ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে সারিকা তার অভিনয়ের ভক্ত বলে জানান। যদিও এই সিরিজে তাদের স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগ হয়নি, তবে একসঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে। শাশ্বত দাদা মেপে কথা বলেন এবং অভিনয় নিয়ে বিভিন্ন টিপস দেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তিনি বাংলাদেশের নাটক ও সিনেমা প্রচুর দেখেন।

ওটিটির কাজগুলোতে অডিশন দিয়ে সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে অনেক শিল্পীর মধ্যে ইগো কাজ করে বলে শোনা যায়। অডিশন দেওয়াটা তার কাছে কেমন লাগে জানতে চাইলে সারিকা বলেন, তিনি অডিশনের পক্ষেই। ‘গুলমোহর’-এর জন্যও তাকে অডিশন দিতে হয়েছিল এবং এরপরই তিনি নির্বাচিত হন। কোনো শিল্পীর অনেক ভিউ বা দর্শক থাকতে পারে, কিন্তু তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করবেন সেটি তো আগে করেননি। অডিশন ছাড়া নির্মাতা কীভাবে বুঝবেন যে তিনি সেই চরিত্রের জন্য উপযুক্ত কিনা? সারিকা টিভি কমার্শিয়াল থেকে এসেছেন, তাই প্রথম দিন থেকেই তার অডিশনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং এটিকে নিয়ে ইগো দেখানোর কিছু নেই বলে তিনি মনে করেন।

ঈদের কোনো নাটক বা ওয়েবের কাজ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আপাতত তিনি এই সিরিজটি নিয়েই থাকতে চান। দর্শক যেহেতু এখনো সিরিজটিতে বুঁদ হয়ে আছেন, তাই এর মাঝে নতুন কোনো কনটেন্ট দিতে চান না। ঈদের পর তিনি নাটকে ফিরবেন এবং কিছু পাণ্ডুলিপি তার হাতে রয়েছে। জুলাই মাস থেকে দর্শক তাকে আবারও নিয়মিত দেখতে পাবেন বলে আশা করছেন।

নাটক বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এই বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে সারিকা বলেন, তিনি সিন্ডিকেটের পক্ষেও নন, বিপক্ষেও নন। একেকজন নির্মাতা হয়তো তার পছন্দের শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং এতে দোষের কিছু নেই। আবার কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী অনেকের সঙ্গেই কাজ করছেন, যদিও তাদের সংখ্যাটা কম হতে পারে। তিনি মনে করেন, যেভাবে হোক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ থাকা দরকার।

এখনকার নাটকের গল্প ও নাম নিয়ে অনেকের আপত্তি প্রসঙ্গে সারিকা বলেন, এখন আবার ভালো গল্পের নাটকের ট্রেন্ড শুরু হয়েছে এবং কমেডি বা রোমান্টিক গল্পের নাটক কম হচ্ছে, যা একটি ভালো দিক। সেইসঙ্গে নাটকের বাজেটও অনেক বেড়েছে, ফলে লোকেশন ও সময় নিয়ে শুটিং করার প্রবণতাও বেড়েছে। এই কারণগুলোর জন্যই তিনি আবারও নাটকে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।