Hi

০২:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহানবী (সা.)-এর হজের পদ্ধতি ও কার্যাবলি

মহানবী (সা.)-এর হজের পদ্ধতি ও কার্যাবলি

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ, এক মহিমান্বিত ইবাদত যেখানে বান্দা প্রভুর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রকাশ ঘটায়। হজের প্রকৃত রূপ ও পদ্ধতি বুঝতে আমাদের আদর্শ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ অপরিহার্য।

নবী করিম (সা.)-এর ইহরাম গ্রহণ:

বিদায় হজ ছিল শুধু একটি ইবাদতের পরিপূর্ণতা নয়, বরং মানবজীবনের শুদ্ধতা, তাওহিদের পূর্ণতা ও নববী শিক্ষার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন। হজের সূচনা হয় জিলকদ মাসের ২৫ তারিখে মদিনা থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যাত্রার মাধ্যমে। যাত্রার পূর্বে তিনি সাহাবিদের সামনে ইহরাম গ্রহণের নিয়মাবলী ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নিয়ে খুতবা দেন। জুলহুলাইফায় (আবিয়ার আলী) এক রাত অবস্থানের পর গোসল করে দুটি সাদা কাপড় পরিধান করেন, যা দুনিয়াবি আভিজাত্য ত্যাগ ও পরিচয়ের ভেদাভেদ ঘোচানোর প্রতীক ছিল। এরপর তিনি ইহরামের নিয়ত করেন: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকেই সাড়া দিয়ে হাজির হচ্ছি হজের নিয়তে।’ এই উচ্চারণ ছিল আল্লাহর পথে আত্মসমর্পণের ও চিরন্তন অনন্তের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রেমময় অঙ্গীকার।

আরাফার দিন নবীজির হজযাত্রার পবিত্র অধ্যায়:

জিলহজের নবম দিন, ইয়াওমু আরাফাহ ছিল হজের আধ্যাত্মিক শিখর। আরাফার প্রান্তরে নামিরাহ নামক স্থানে নবীজির জন্য তাঁবু স্থাপন করা হয়, যেখানে তিনি ‘খুতবাতুল বিদা’ (বিদায় খুতবা) প্রদান করেন। এই খুতবায় তিনি মানবতার সর্বজনীন বার্তা, নারীর অধিকার, মানুষের রক্ত ও সম্মানের মর্যাদা, উম্মাহর ঐক্য ও তাওহিদের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরপর তিনি ‘জামে তাকদিম’ পদ্ধতিতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। এরপর কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি ও দোয়া করেন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর তিনি মুজদালিফার দিকে যাত্রা করেন এবং সেখানে পৌঁছে ‘জামে তাখির’ পদ্ধতিতে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন এবং রাতটি সেখানেই কাটান।

দশম জিলহজ ও তাশরিকের দিন : ত্যাগ, তাকওয়া ও আনুগত্যের প্রতীক:

ঈদের সকালে নবী করিম (সা.) মুজদালিফায় ‘মাশআরুল হারাম’-এ দোয়ায় মশগুল হন। এরপর মিনায় পৌঁছে জামরাতুল আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন এবং প্রতিটি নিক্ষেপে ‘আল্লাহু আকবার’ বলেন। এরপর তিনি কোরবানি করেন ও ইহরাম থেকে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোশাকে ফেরেন। মক্কায় ফিরে ‘তাওয়াফুল ইফাজাহ’ সম্পন্ন করেন ও জোহরের নামাজ আদায় করেন। যেহেতু তিনি কুদুমের সময় সাঈ করেছিলেন, তাই আর সাঈ করেননি। এরপর তিনি মিনায় ফিরে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ প্রতিদিন তিনটি জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন এবং ছোট ও মাঝারি জামরায় নিক্ষেপের পর দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করেন। ১৩ জিলহজ তিনি আল-মুহাসসাবে জোহরের নামাজ আদায় করেন। এরপর বাইতুল্লাহয় বিদায়ি তাওয়াফ (তাওয়াফুল বিদা) আদায় করে মদিনার পথে যাত্রা করেন।

বিদায় হজ : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক অভিযাত্রা:

১০ হিজরির বিদায় হজ ছিল নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের প্রথম ও শেষ হজ। এটি কেবল একটি ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং ছিল একটি আধ্যাত্মিক বিপ্লব ও মানবতার প্রতি চূড়ান্ত ঐশ্বরিক বার্তা।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

হাজারো শঙ্খর ধ্বনি ও প্রদীপের আলোয় বিতর্কিত পুজোর– প্রতিমার নিরঞ্জন শোভাযাত্রা।

মহানবী (সা.)-এর হজের পদ্ধতি ও কার্যাবলি

আপডেট : ০৮:৩৩:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

মহানবী (সা.)-এর হজের পদ্ধতি ও কার্যাবলি

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ, এক মহিমান্বিত ইবাদত যেখানে বান্দা প্রভুর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রকাশ ঘটায়। হজের প্রকৃত রূপ ও পদ্ধতি বুঝতে আমাদের আদর্শ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ অপরিহার্য।

নবী করিম (সা.)-এর ইহরাম গ্রহণ:

বিদায় হজ ছিল শুধু একটি ইবাদতের পরিপূর্ণতা নয়, বরং মানবজীবনের শুদ্ধতা, তাওহিদের পূর্ণতা ও নববী শিক্ষার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন। হজের সূচনা হয় জিলকদ মাসের ২৫ তারিখে মদিনা থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যাত্রার মাধ্যমে। যাত্রার পূর্বে তিনি সাহাবিদের সামনে ইহরাম গ্রহণের নিয়মাবলী ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নিয়ে খুতবা দেন। জুলহুলাইফায় (আবিয়ার আলী) এক রাত অবস্থানের পর গোসল করে দুটি সাদা কাপড় পরিধান করেন, যা দুনিয়াবি আভিজাত্য ত্যাগ ও পরিচয়ের ভেদাভেদ ঘোচানোর প্রতীক ছিল। এরপর তিনি ইহরামের নিয়ত করেন: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকেই সাড়া দিয়ে হাজির হচ্ছি হজের নিয়তে।’ এই উচ্চারণ ছিল আল্লাহর পথে আত্মসমর্পণের ও চিরন্তন অনন্তের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রেমময় অঙ্গীকার।

আরাফার দিন নবীজির হজযাত্রার পবিত্র অধ্যায়:

জিলহজের নবম দিন, ইয়াওমু আরাফাহ ছিল হজের আধ্যাত্মিক শিখর। আরাফার প্রান্তরে নামিরাহ নামক স্থানে নবীজির জন্য তাঁবু স্থাপন করা হয়, যেখানে তিনি ‘খুতবাতুল বিদা’ (বিদায় খুতবা) প্রদান করেন। এই খুতবায় তিনি মানবতার সর্বজনীন বার্তা, নারীর অধিকার, মানুষের রক্ত ও সম্মানের মর্যাদা, উম্মাহর ঐক্য ও তাওহিদের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরপর তিনি ‘জামে তাকদিম’ পদ্ধতিতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। এরপর কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি ও দোয়া করেন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর তিনি মুজদালিফার দিকে যাত্রা করেন এবং সেখানে পৌঁছে ‘জামে তাখির’ পদ্ধতিতে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন এবং রাতটি সেখানেই কাটান।

দশম জিলহজ ও তাশরিকের দিন : ত্যাগ, তাকওয়া ও আনুগত্যের প্রতীক:

ঈদের সকালে নবী করিম (সা.) মুজদালিফায় ‘মাশআরুল হারাম’-এ দোয়ায় মশগুল হন। এরপর মিনায় পৌঁছে জামরাতুল আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন এবং প্রতিটি নিক্ষেপে ‘আল্লাহু আকবার’ বলেন। এরপর তিনি কোরবানি করেন ও ইহরাম থেকে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোশাকে ফেরেন। মক্কায় ফিরে ‘তাওয়াফুল ইফাজাহ’ সম্পন্ন করেন ও জোহরের নামাজ আদায় করেন। যেহেতু তিনি কুদুমের সময় সাঈ করেছিলেন, তাই আর সাঈ করেননি। এরপর তিনি মিনায় ফিরে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ প্রতিদিন তিনটি জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন এবং ছোট ও মাঝারি জামরায় নিক্ষেপের পর দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করেন। ১৩ জিলহজ তিনি আল-মুহাসসাবে জোহরের নামাজ আদায় করেন। এরপর বাইতুল্লাহয় বিদায়ি তাওয়াফ (তাওয়াফুল বিদা) আদায় করে মদিনার পথে যাত্রা করেন।

বিদায় হজ : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক অভিযাত্রা:

১০ হিজরির বিদায় হজ ছিল নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের প্রথম ও শেষ হজ। এটি কেবল একটি ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং ছিল একটি আধ্যাত্মিক বিপ্লব ও মানবতার প্রতি চূড়ান্ত ঐশ্বরিক বার্তা।