বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের গত মার্চ মাসের চীন সফর এবং সেখানে তার করা কিছু মন্তব্য কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে তার বক্তব্য ভারতীয় কূটনীতিকদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর ড. ইউনূস মন্তব্য করেন যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল একটি স্থলবেষ্টিত এলাকা এবং এই অঞ্চলের জন্য একমাত্র কার্যকর সমুদ্রপথ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, এই বন্দর ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সরাসরি উপকৃত হতে পারে, যার লক্ষ্য সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন।
বাংলাদেশের এই অবস্থানে উদ্বিগ্ন ভারত তাদের প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো বাজেটে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলায় ভারত ২২ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে শিলং-শিলচর চার লেনের হাই স্পিড মহাসড়ক নির্মাণ শুরু করেছে। এই মহাসড়কটি ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (NHIDCL) কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ নামক একটি সংকীর্ণ স্থলপথের মাধ্যমে যুক্ত। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ এই করিডোর বন্ধ করে দিলে ভারত তার ‘সেভেন সিস্টারস’ অঞ্চল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। এই কৌশলগত দুর্বলতা কমাতে ভারত মিয়ানমার রুটের দিকে ঝুঁকছে এবং কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দর হয়ে নদী ও সড়কপথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে।
সামরিক ও লজিস্টিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনার ফলস্বরূপ ভারতের এই নতুন মহাসড়ক ও বিকল্প করিডোর নির্মাণ একটি “কৌশলগত প্যানিক রেসপন্স”। তবে মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের এই বিকল্প পথকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে।