Hi

০১:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৯০ বছর বয়সী মায়ের ঠাঁই মেলেনি তিন ছেলের ঘরে, অবশেষে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মিলল আশ্রয়

  • আপডেট : ০৬:০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • ৫৮৪ জন দেখেছে

বগুড়া: নিজের গর্ভের জন্ম দেওয়া তিন সন্তানের ঘরে ঠাঁই হয়নি ৯০ বছর বয়সী শ্রীমতী বিমলা রানীর। কখনো বাড়ির এক কোণে, আবার কখনো বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড়ের নিচে তার দিন কাটছিল। দু’বেলা পেটপুরে খাবারও জুটতো না কোনো ছেলের ঘরেই। এমন অমানবিক ঘটনার খবর পেয়ে বগুড়া সদর উপজেলার বড়কুমিড়া হিন্দুপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি দল হস্তক্ষেপ করে বৃদ্ধা মাকে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছে।

জানা যায়, বিমলা রানী বগুড়া সদর উপজেলার বড়কুমিড়া হিন্দুপাড়া এলাকার হরিপদ চন্দ্রের স্ত্রী। তার তিন ছেলের মধ্যে দুজন কাঠমিস্ত্রি এবং আরেকজন দর্জির কাজ করেন। স্বামী হরিপদ চন্দ্র মারা যাওয়ার পর থেকেই বিমলা রানীর সুখের সংসারে বিপর্যয় নেমে আসে। তিন ছেলের কেউই বৃদ্ধা মাকে ঠিকভাবে দেখেন না।

৯৫ বছর বয়সী বিমলা রানী এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। চোখে দেখেন না বললেই চলে, কানেও স্বাভাবিকের চেয়ে কম শোনেন এবং ঠিকভাবে চলাফেরা করতেও পারেন না। ছেলেরা দেখভাল করার ভয়ে প্রতিদিন সকালে মাকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে রেখে আসতেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও অসহায় বিমলার কপালে খাবার জুটতো না।

সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গত সোমবার (১৬ জুন ২০২৫) রাতে, যখন মেজো ছেলে লব সরকার মা বিমলাকে তার বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে স্থানীয়দের চাপে মাকে বাড়িতে নিয়ে গেলেও মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) সকালে আবারও মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তিনি। ঘড়ির কাঁটা বিকেল ৪টা পেরিয়ে গেলেও এক ফোঁটা পানিও জোটেনি বিমলার কপালে। খা খা রোদে পড়ে থেকে জীবন প্রায় যায় যায় অবস্থা।

মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) বিকেলে স্থানীয়দের মাধ্যমে এমন অভিযোগ পেয়ে বগুড়া সদরের বড় কুমিড়া হিন্দুপাড়ার ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল। তারা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে কিছু খাবার কিনে দেন। এরপর তাকে ছেলেদের ঘরে তুলে দেওয়া হয়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এক সেনা কর্মকর্তা। পরে ভুল স্বীকার করে বিমলাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।

এ সময় লেফটেন্যান্ট ফাহাদ বৃদ্ধা বিমলা রানীর ছেলেদের সতর্ক করেন এবং নিজে হাতে বৃদ্ধাকে খাবার খাইয়ে দেন। এ ঘটনায় প্রতিবেশীরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং বৃদ্ধার ছেলেদের অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তুলে ধরেন।

সেনাবাহিনীর সদর ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট আল ফাহাদ জানান, “মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তার ছেলেরা ভুল স্বীকার করেছেন। তাদের আর্থিক সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সহযোগিতাও করা হবে।”

এই ঘটনা সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সন্তানদের অবহেলা এবং মানবিকতার চরম সংকটের এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছে।

লেখক সম্পর্কে তথ্য

হাজারো শঙ্খর ধ্বনি ও প্রদীপের আলোয় বিতর্কিত পুজোর– প্রতিমার নিরঞ্জন শোভাযাত্রা।

৯০ বছর বয়সী মায়ের ঠাঁই মেলেনি তিন ছেলের ঘরে, অবশেষে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মিলল আশ্রয়

আপডেট : ০৬:০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

বগুড়া: নিজের গর্ভের জন্ম দেওয়া তিন সন্তানের ঘরে ঠাঁই হয়নি ৯০ বছর বয়সী শ্রীমতী বিমলা রানীর। কখনো বাড়ির এক কোণে, আবার কখনো বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড়ের নিচে তার দিন কাটছিল। দু’বেলা পেটপুরে খাবারও জুটতো না কোনো ছেলের ঘরেই। এমন অমানবিক ঘটনার খবর পেয়ে বগুড়া সদর উপজেলার বড়কুমিড়া হিন্দুপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি দল হস্তক্ষেপ করে বৃদ্ধা মাকে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছে।

জানা যায়, বিমলা রানী বগুড়া সদর উপজেলার বড়কুমিড়া হিন্দুপাড়া এলাকার হরিপদ চন্দ্রের স্ত্রী। তার তিন ছেলের মধ্যে দুজন কাঠমিস্ত্রি এবং আরেকজন দর্জির কাজ করেন। স্বামী হরিপদ চন্দ্র মারা যাওয়ার পর থেকেই বিমলা রানীর সুখের সংসারে বিপর্যয় নেমে আসে। তিন ছেলের কেউই বৃদ্ধা মাকে ঠিকভাবে দেখেন না।

৯৫ বছর বয়সী বিমলা রানী এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। চোখে দেখেন না বললেই চলে, কানেও স্বাভাবিকের চেয়ে কম শোনেন এবং ঠিকভাবে চলাফেরা করতেও পারেন না। ছেলেরা দেখভাল করার ভয়ে প্রতিদিন সকালে মাকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে রেখে আসতেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও অসহায় বিমলার কপালে খাবার জুটতো না।

সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গত সোমবার (১৬ জুন ২০২৫) রাতে, যখন মেজো ছেলে লব সরকার মা বিমলাকে তার বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে স্থানীয়দের চাপে মাকে বাড়িতে নিয়ে গেলেও মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) সকালে আবারও মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তিনি। ঘড়ির কাঁটা বিকেল ৪টা পেরিয়ে গেলেও এক ফোঁটা পানিও জোটেনি বিমলার কপালে। খা খা রোদে পড়ে থেকে জীবন প্রায় যায় যায় অবস্থা।

মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) বিকেলে স্থানীয়দের মাধ্যমে এমন অভিযোগ পেয়ে বগুড়া সদরের বড় কুমিড়া হিন্দুপাড়ার ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল। তারা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে কিছু খাবার কিনে দেন। এরপর তাকে ছেলেদের ঘরে তুলে দেওয়া হয়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এক সেনা কর্মকর্তা। পরে ভুল স্বীকার করে বিমলাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।

এ সময় লেফটেন্যান্ট ফাহাদ বৃদ্ধা বিমলা রানীর ছেলেদের সতর্ক করেন এবং নিজে হাতে বৃদ্ধাকে খাবার খাইয়ে দেন। এ ঘটনায় প্রতিবেশীরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং বৃদ্ধার ছেলেদের অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তুলে ধরেন।

সেনাবাহিনীর সদর ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট আল ফাহাদ জানান, “মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তার ছেলেরা ভুল স্বীকার করেছেন। তাদের আর্থিক সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সহযোগিতাও করা হবে।”

এই ঘটনা সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সন্তানদের অবহেলা এবং মানবিকতার চরম সংকটের এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছে।