দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর, ১৮ জুন ২০২৫: ঈদ শেষ হয়ে যাওয়ার দশ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় এখনো কমেনি। তবে, এই ভিড়কে কাজে লাগিয়ে আন্তঃনগর ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা ট্রেনের দায়িত্বরত স্টুয়ার্ডদের টিকিটবিহীন যাত্রী পরিবহনের দৌরাত্ম্য থামছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের এই কর্মকাণ্ডে একদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে টিকিট কেটে আসা যাত্রীরা প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছেন।
দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে গাইবান্ধা, ফুলছড়ি, কুড়িগ্রাম, রৌমারী, রাজীবপুর, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার লোকজন রেলপথে যাতায়াত করে থাকেন। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, স্টুয়ার্ডদের যাত্রীসেবার জন্য নিজ নিজ নির্ধারিত ট্রেনের বগির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার কথা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, তারা এই নিয়ম মানছেন না। স্টেশনের কাছে যাত্রীরা রিকশা বা অটো থেকে নামামাত্রই স্টুয়ার্ডরা তাদের কাছে এগিয়ে যান এবং টিকিট না থাকলে “টিকিট লাগবে না- আসেন আমার সঙ্গে” বলে ফুসলিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে নেন। যাত্রী তোলা নিয়ে মাঝেমধ্যেই স্টুয়ার্ডদের নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা যায়।
দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন প্লাটফর্ম ঘুরে জানা যায়, আসনবিহীন টিকিট কাটার জন্য কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদেরও টিকিট কাটা ছাড়াই ফুসলিয়ে ট্রেনে উঠানো হচ্ছে। এসব যাত্রীকে বিনা টিকিটের ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি গলায় রেলওয়ের ফিতা টানানো মনির নামের এক স্টুয়ার্ড প্লাটফর্মের নিচ থেকে টিকিটবিহীন যাত্রী জনপ্রতি দুইশ টাকা করে নিয়ে ট্রেনের বগিতে তুলে নেন। পরে পুনরায় যাত্রী নেওয়ার জন্য আসলে সহকর্মী স্টুয়ার্ডদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এভাবে অধিকাংশ স্টুয়ার্ড টিকিটবিহীন যাত্রী নেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে। দেওয়ানগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত জনপ্রতি দুইশ থেকে তিনশ টাকা করে নিয়ে এসব যাত্রীকে ট্রেনের করিডোরে, ওয়াশরুমের সামনে, দরজার কাছে, বগির মাঝখানে, টুল ও বালতিতে, ক্যারেটে, খাবার বগিতে এবং পেপার বিছিয়ে বসিয়ে ঢাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে স্টুয়ার্ড ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্টুয়ার্ডদের এসব ঠিক করে ফেলব। ঈদ পরবর্তীতে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে বিধায় অনেকেই নিয়ম মানেন না। সামনের দিনে এরকম আর হবে না।”
দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন জানান, স্টুয়ার্ডদের যেখানে-সেখানে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “তারা কথা মানে না। কারো কথায় তোয়াক্কা না করে এগুলো করে থাকে ট্রেনের স্টুয়ার্ডরা।”