Hi

১২:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি: মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সামরিক প্রত্যাহার, হোয়াইট হাউসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

ওয়াশিংটন/তেহরান/দোহা, ১৯ জুন ২০২৫: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা বুধবার রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন যে, সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও নৌযান প্রত্যাহার করেছে।

এই পদক্ষেপ এমন সময় এলো, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো স্পষ্টভাবে জানাননি—যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলায় অংশ নেবে কি না। সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপের সময় ট্রাম্প বলেন, “আমি এটা করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। কেউই জানে না আমি কী করব।” সূত্র জানায়, হোয়াইট হাউস এখনো ইরান হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে সপ্তাহান্তেই হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের সিনিয়র কর্মকর্তারা এরই মধ্যে জরুরি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মার্কিন সামরিক প্রস্তুতি ও সতর্কতা:

  • বৃহস্পতিবার কাতারের মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে এবং আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা।
  • বাহরাইনের মার্কিন নৌঘাঁটি থেকেও যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাহার করা হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর অবস্থান করে।
  • যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব যুদ্ধবিমান শেল্টারবিহীন অবস্থায় ছিল, সেগুলো সরানো হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কতগুলো সরানো হয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
  • রয়টার্সের তথ্যমতে, ইউরোপে বিপুলসংখ্যক ট্যাংকার বিমান মোতায়েন করা হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে।
  • ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে একটি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা দিয়েছে।

পাল্টাপাল্টি হামলা ও ইরানের হুঁশিয়ারি:

ইসরায়েল গত শুক্রবার থেকে ইরানে ধারাবাহিক বিমান হামলা শুরু করেছে।1 ইসরায়েল আরাক শহরে অবস্থিত ইরানের খন্দাব ভারী পানির চুল্লিতে হামলা চালিয়েছে।2 এই স্থাপনা প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। তেহরান জানিয়েছে, হামলার আগে কেন্দ্রটি খালি করা হয়েছিল, ফলে বিকিরণ ঝুঁকি নেই।3 এপি জানায়, এই চুল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিউটেরিয়াম অক্সাইড’ দ্বারা শীতল হয় এবং আগামী বছর চালু করার পরিকল্পনা ছিল।

এদিকে, বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হলে, ইরান কঠোর জবাব দেবে।”

ইরান পাল্টা হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের বির শেবা ও তেল আবিব লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। বির শেবায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে অন্তত ৩০ জন আহত হন, দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোরোকা হাসপাতাল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্ফোরণের তরঙ্গে। তেল আবিবে হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন। বিস্ফোরণে ভবনের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানি মিডিয়া দাবি করেছে, লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি ‘সংবেদনশীল’ সামরিক স্থাপনা—যা হাসপাতালের পাশে অবস্থিত।

মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে সামরিক রক্ষণশীলতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে আক্রমণাত্মক কৌশলের পথও খোলা রেখেছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাস্তবায়িত হলে, সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন হোয়াইট হাউসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও ইরানের পরবর্তী জবাবের দিকে।

তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, রয়টার্স, এপি, আইএসএনএ, আলজাজিরা।

লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

মৌলভীবাজারে ‘জুলাই মঞ্চ’-এর জেলা কাঠামো প্রকাশ: আহ্বায়ক তানজিয়া শিশির, মুখপাত্র মো. তানিম হোসেন রুহিন

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি: মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সামরিক প্রত্যাহার, হোয়াইট হাউসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

আপডেট : ১০:৩৭:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

ওয়াশিংটন/তেহরান/দোহা, ১৯ জুন ২০২৫: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা বুধবার রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন যে, সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও নৌযান প্রত্যাহার করেছে।

এই পদক্ষেপ এমন সময় এলো, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো স্পষ্টভাবে জানাননি—যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলায় অংশ নেবে কি না। সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপের সময় ট্রাম্প বলেন, “আমি এটা করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। কেউই জানে না আমি কী করব।” সূত্র জানায়, হোয়াইট হাউস এখনো ইরান হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে সপ্তাহান্তেই হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের সিনিয়র কর্মকর্তারা এরই মধ্যে জরুরি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মার্কিন সামরিক প্রস্তুতি ও সতর্কতা:

  • বৃহস্পতিবার কাতারের মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে এবং আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা।
  • বাহরাইনের মার্কিন নৌঘাঁটি থেকেও যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাহার করা হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর অবস্থান করে।
  • যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব যুদ্ধবিমান শেল্টারবিহীন অবস্থায় ছিল, সেগুলো সরানো হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কতগুলো সরানো হয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
  • রয়টার্সের তথ্যমতে, ইউরোপে বিপুলসংখ্যক ট্যাংকার বিমান মোতায়েন করা হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে।
  • ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে একটি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা দিয়েছে।

পাল্টাপাল্টি হামলা ও ইরানের হুঁশিয়ারি:

ইসরায়েল গত শুক্রবার থেকে ইরানে ধারাবাহিক বিমান হামলা শুরু করেছে।1 ইসরায়েল আরাক শহরে অবস্থিত ইরানের খন্দাব ভারী পানির চুল্লিতে হামলা চালিয়েছে।2 এই স্থাপনা প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। তেহরান জানিয়েছে, হামলার আগে কেন্দ্রটি খালি করা হয়েছিল, ফলে বিকিরণ ঝুঁকি নেই।3 এপি জানায়, এই চুল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিউটেরিয়াম অক্সাইড’ দ্বারা শীতল হয় এবং আগামী বছর চালু করার পরিকল্পনা ছিল।

এদিকে, বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হলে, ইরান কঠোর জবাব দেবে।”

ইরান পাল্টা হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের বির শেবা ও তেল আবিব লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। বির শেবায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে অন্তত ৩০ জন আহত হন, দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোরোকা হাসপাতাল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্ফোরণের তরঙ্গে। তেল আবিবে হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন। বিস্ফোরণে ভবনের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানি মিডিয়া দাবি করেছে, লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি ‘সংবেদনশীল’ সামরিক স্থাপনা—যা হাসপাতালের পাশে অবস্থিত।

মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে সামরিক রক্ষণশীলতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে আক্রমণাত্মক কৌশলের পথও খোলা রেখেছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাস্তবায়িত হলে, সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন হোয়াইট হাউসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও ইরানের পরবর্তী জবাবের দিকে।

তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, রয়টার্স, এপি, আইএসএনএ, আলজাজিরা।