Hi

০২:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সাংবাদিক সম্মেলন: ‘বেঙ্গল ফাইলস’ ও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব বিশিষ্টজনেরা

কলকাতা, ২০ জুন ২০২৫: বিজেপি ও আরএসএস-এর ‘অপপ্রচার’ এবং ‘কালিমালিপ্ত বাংলা’ বাঁচানোর লক্ষ্যে আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ

এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, কবি আবুল বাশার, সঙ্গীত শিল্পী সৈকত মিত্র, দোলা সেন, বিশিষ্ট ফুটবলার সমরেশ চৌধুরী, সুমন ভট্টাচার্য্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা।

উপস্থিত বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, আরএসএস ও বিজেপি প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াচ্ছে, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং বাংলা ও বাঙালিকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, এই ষড়যন্ত্রের নবতম সংযোজন হলো বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘বেঙ্গল ফাইলস’। ইতিমধ্যেই এর টিজার সমাজমাধ্যমে এসেছে, যা বাংলার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বক্তারা ‘কাশ্মীর ফাইলস’ চলচ্চিত্রের উদাহরণ টেনে বলেন, সেই চলচ্চিত্রেরও উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো।

বক্তারা আরও উল্লেখ করেন যে, যেকোনো নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানো বিজেপির একটি পুরোনো রাজনৈতিক কৌশল। তাঁরা দাবি করেন, মুর্শিদাবাদ ও মালদাতে বিজেপির সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু রাজ্যের হিন্দু-মুসলমান জনগোষ্ঠী এবং রাজ্য প্রশাসন তা বানচাল করে দিয়েছে।

‘বেঙ্গল ফাইলস’ চলচ্চিত্রটি বিধানসভা ভোটের আগে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এর মাধ্যমে ‘পশ্চিমবঙ্গ ভবিষ্যতে কাশ্মীর হয়ে যাবে’ – এমন বিকৃত তথ্য প্রচারের চেষ্টা চলছে। তবে বাংলার সম্প্রীতির শিকড় এতটাই গভীর যে হাজার প্ররোচনাও ব্যর্থ হবে। তাঁরা রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন বসু, মেঘনাথ সাহা সহ বাংলার বিভিন্ন মনীষীদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যারা বিজ্ঞান, শিক্ষা ও রেনেসাঁ আন্দোলনে ভারতকে পথ দেখিয়েছেন। চৈতন্যদেব থেকে রামকৃষ্ণ দেব, রামপ্রসাদ সেন থেকে লালন ফকির পর্যন্ত বাংলার সমন্বয়ের বাণী এবং রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের বিশ্বজনীন সংস্কৃতির কথা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বাংলার মানুষ বিজেপি-আরএসএসের সংজ্ঞায়িত ‘হিন্দুত্ব’ মেনে নেবে না।

বক্তারা আরও জানান, বাঙালি দেবী দুর্গাকে কন্যা জ্ঞানে আহ্বান করে, তাই তার ‘জ্বলন্ত কাঠামো’ প্রদর্শন বাঙালির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। তারা বলেন, বাংলার দুর্গোৎসব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, যা প্রমাণ করে এই রাজ্যে হিন্দু ধর্মাচরণে কোনো আঘাত লাগেনি। বরং দিল্লির বিজেপি সরকার একটি হিন্দু কালী মন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু সে বিষয়ে বিজেপি নীরব। বক্তারা অভিযোগ করেন, রাজ্যের বিজেপি সাংসদ ও বিধায়করা বাংলাকে কালিমালিপ্ত করে বাঙালির পেটে লাথি মারতে চান, বাংলার সামাজিক প্রকল্পগুলো বন্ধ করতে দিল্লিতে ধরনা দেন এবং বাঙালি যুবক-যুবতীদের চাকরি আটকাতে আদালতের দ্বারস্থ হতে দ্বিধা করেন না।

তারা বলেন, বিজেপির এই বাঙালি বিদ্বেষ নতুন নয়। এর আগেও ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাঙালি শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশী’ তকমা দিয়ে মারধর করা হয়েছে। এমনকি বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কিছু শ্রমিককে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যদিও পরে তারা ফিরে আসতে পেরেছেন।

বক্তারা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার মানুষকে পাশে রাখার এবং খেলা থেকে মেলা, পুজো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সকল মানুষকে এক করার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, বাঙালির দুর্গোৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, একটি সামাজিক উৎসব যেখানে সর্ব ধর্মের, সর্ব বর্ণের মানুষ জড়িয়ে থাকেন। রাজ্য সরকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় স্থানের উন্নতিতেও সর্বদা সচেষ্ট।

দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের প্রতিনিধিরা দৃঢ়তার সাথে বলেন, যারা বাংলার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে, তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে যে “বাংলা বড় কঠিন ঠাঁই”। বাংলার শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, উদ্যোগপতি, ক্রীড়াবিদ – যারা বাংলার জল-হাওয়ায় বড় হয়েছেন এবং বাংলাকে ভালোবেসেছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে কুৎসার বিরুদ্ধে সত্যের জয় হবেই।


লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

জামালগঞ্জে ৪ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ: ১১ কৃষক পেলেন পৌনে ১৮ লাখ টাকা

দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সাংবাদিক সম্মেলন: ‘বেঙ্গল ফাইলস’ ও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব বিশিষ্টজনেরা

আপডেট : ০৪:৫০:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

কলকাতা, ২০ জুন ২০২৫: বিজেপি ও আরএসএস-এর ‘অপপ্রচার’ এবং ‘কালিমালিপ্ত বাংলা’ বাঁচানোর লক্ষ্যে আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ

এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, কবি আবুল বাশার, সঙ্গীত শিল্পী সৈকত মিত্র, দোলা সেন, বিশিষ্ট ফুটবলার সমরেশ চৌধুরী, সুমন ভট্টাচার্য্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা।

উপস্থিত বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, আরএসএস ও বিজেপি প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াচ্ছে, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং বাংলা ও বাঙালিকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, এই ষড়যন্ত্রের নবতম সংযোজন হলো বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘বেঙ্গল ফাইলস’। ইতিমধ্যেই এর টিজার সমাজমাধ্যমে এসেছে, যা বাংলার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বক্তারা ‘কাশ্মীর ফাইলস’ চলচ্চিত্রের উদাহরণ টেনে বলেন, সেই চলচ্চিত্রেরও উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো।

বক্তারা আরও উল্লেখ করেন যে, যেকোনো নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানো বিজেপির একটি পুরোনো রাজনৈতিক কৌশল। তাঁরা দাবি করেন, মুর্শিদাবাদ ও মালদাতে বিজেপির সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু রাজ্যের হিন্দু-মুসলমান জনগোষ্ঠী এবং রাজ্য প্রশাসন তা বানচাল করে দিয়েছে।

‘বেঙ্গল ফাইলস’ চলচ্চিত্রটি বিধানসভা ভোটের আগে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এর মাধ্যমে ‘পশ্চিমবঙ্গ ভবিষ্যতে কাশ্মীর হয়ে যাবে’ – এমন বিকৃত তথ্য প্রচারের চেষ্টা চলছে। তবে বাংলার সম্প্রীতির শিকড় এতটাই গভীর যে হাজার প্ররোচনাও ব্যর্থ হবে। তাঁরা রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন বসু, মেঘনাথ সাহা সহ বাংলার বিভিন্ন মনীষীদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যারা বিজ্ঞান, শিক্ষা ও রেনেসাঁ আন্দোলনে ভারতকে পথ দেখিয়েছেন। চৈতন্যদেব থেকে রামকৃষ্ণ দেব, রামপ্রসাদ সেন থেকে লালন ফকির পর্যন্ত বাংলার সমন্বয়ের বাণী এবং রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের বিশ্বজনীন সংস্কৃতির কথা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বাংলার মানুষ বিজেপি-আরএসএসের সংজ্ঞায়িত ‘হিন্দুত্ব’ মেনে নেবে না।

বক্তারা আরও জানান, বাঙালি দেবী দুর্গাকে কন্যা জ্ঞানে আহ্বান করে, তাই তার ‘জ্বলন্ত কাঠামো’ প্রদর্শন বাঙালির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। তারা বলেন, বাংলার দুর্গোৎসব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, যা প্রমাণ করে এই রাজ্যে হিন্দু ধর্মাচরণে কোনো আঘাত লাগেনি। বরং দিল্লির বিজেপি সরকার একটি হিন্দু কালী মন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু সে বিষয়ে বিজেপি নীরব। বক্তারা অভিযোগ করেন, রাজ্যের বিজেপি সাংসদ ও বিধায়করা বাংলাকে কালিমালিপ্ত করে বাঙালির পেটে লাথি মারতে চান, বাংলার সামাজিক প্রকল্পগুলো বন্ধ করতে দিল্লিতে ধরনা দেন এবং বাঙালি যুবক-যুবতীদের চাকরি আটকাতে আদালতের দ্বারস্থ হতে দ্বিধা করেন না।

তারা বলেন, বিজেপির এই বাঙালি বিদ্বেষ নতুন নয়। এর আগেও ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাঙালি শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশী’ তকমা দিয়ে মারধর করা হয়েছে। এমনকি বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কিছু শ্রমিককে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যদিও পরে তারা ফিরে আসতে পেরেছেন।

বক্তারা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার মানুষকে পাশে রাখার এবং খেলা থেকে মেলা, পুজো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সকল মানুষকে এক করার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, বাঙালির দুর্গোৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, একটি সামাজিক উৎসব যেখানে সর্ব ধর্মের, সর্ব বর্ণের মানুষ জড়িয়ে থাকেন। রাজ্য সরকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় স্থানের উন্নতিতেও সর্বদা সচেষ্ট।

দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের প্রতিনিধিরা দৃঢ়তার সাথে বলেন, যারা বাংলার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে, তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে যে “বাংলা বড় কঠিন ঠাঁই”। বাংলার শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, উদ্যোগপতি, ক্রীড়াবিদ – যারা বাংলার জল-হাওয়ায় বড় হয়েছেন এবং বাংলাকে ভালোবেসেছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে কুৎসার বিরুদ্ধে সত্যের জয় হবেই।