Hi

১০:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাগমারায় ‘আমির ও সোহাগ বাহিনী’র বেপরোয়া অপরাধ কর্মকাণ্ড: নীরব প্রশাসন, অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

রাজশাহী, ২২ জুন ২০২৫: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ‘আমির ও সোহাগ বাহিনী’ নামের একটি চক্রের বিরুদ্ধে আন্তজেলা গরু চুরি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, ভূমি দখল, এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এই বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তাদের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন।

অভিযুক্তরা হলেন, পিরুলিসেন পাড়া গ্রামের মধ্যঝিনা এলাকার আমির হোসেন ওরফে আমির চোরা (পিতা: লেদাই প্রাং) এবং তার ছেলে সোহাগ হোসেন ওরফে সোহাগ চোরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা আন্তজেলা চোর চক্রের প্রধান, অপহরণকারী, চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগ ও অপরাধের বিবরণ:

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই চক্রের সদস্যরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও চুরি চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি, ঝিকরা ইউনিয়নের পিরুলিসেন পাড়া গ্রামের মসজিদের পুকুরের মাছ প্রকাশ্যে লুট করার অভিযোগ উঠেছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়দের দাবি।

এছাড়াও, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হাটবাজার, অটো-টেম্পু স্ট্যান্ডে অবৈধ টোল আদায়, অবৈধ পুকুর খননসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ই আগস্টের পর থেকে কালীগঞ্জ বাজারের প্রায় ৯৫% দোকান থেকে চাঁদা আদায় করেছে এবং চাঁদা না দিলে দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এমনকি পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলা বা মোটা অংকের চাঁদা দাবির ঘটনাও ঘটেছে।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ:

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমির হোসেন বর্তমানে বাগমারা উপজেলার ১২ নং ঝিকরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা তারেক জিয়া প্রজন্মদলের অন্যতম সদস্য। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপি ও জামায়াতের প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে প্রায় কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে (বাগমারা থানার মামলা নং ১৫, তারিখ ১৭/০৮/২০০৯, জি আর নং ১৫১/২০০৯ এবং বাগমারা থানার মামলা নং ১৬, তারিখ ১৭/০৮/২০০৯, জি আর নং ১৫২/২০০৯)।

এছাড়াও, এই চক্রের সাথে ‘ক্যাসিনো ফিরোজ’ (এমটিএফই অনলাইন প্রতারণামূলক অ্যাপসের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ) এবং ‘সর্বহারা শহীদ’ নামের চক্রের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ, এই দুই ব্যক্তি গণঅভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে থাকলেও পরবর্তীতে আমির ও সোহাগ চক্রকে অর্থের বিনিময়ে এলাকায় ফিরে আসেন এবং তাদের বডিগার্ড হিসেবে এই চোর ও ক্যাডার চক্র কাজ করে।

প্রশাসনের নীরব ভূমিকা:

স্থানীয়দের অভিযোগ, আমির ও সোহাগ চক্রের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হত্যা, গরু চুরি, বাইক চুরি, অপহরণসহ এক ডজনের বেশি মামলা রাজশাহী ও নওগাঁ জেলায় থাকলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ভয়াবহ নির্যাতন, অপহরণ এমনকি মিথ্যা ধর্ষণ মামলা পর্যন্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ভয়ে স্থানীয় শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও মুখ খুলতে সাহস পান না।

এলাকাবাসীর আকুতি, দ্রুত এই সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।

লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

জামালগঞ্জে ৪ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ: ১১ কৃষক পেলেন পৌনে ১৮ লাখ টাকা

বাগমারায় ‘আমির ও সোহাগ বাহিনী’র বেপরোয়া অপরাধ কর্মকাণ্ড: নীরব প্রশাসন, অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

আপডেট : ১০:১৩:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

রাজশাহী, ২২ জুন ২০২৫: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ‘আমির ও সোহাগ বাহিনী’ নামের একটি চক্রের বিরুদ্ধে আন্তজেলা গরু চুরি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, ভূমি দখল, এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এই বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তাদের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন।

অভিযুক্তরা হলেন, পিরুলিসেন পাড়া গ্রামের মধ্যঝিনা এলাকার আমির হোসেন ওরফে আমির চোরা (পিতা: লেদাই প্রাং) এবং তার ছেলে সোহাগ হোসেন ওরফে সোহাগ চোরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা আন্তজেলা চোর চক্রের প্রধান, অপহরণকারী, চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগ ও অপরাধের বিবরণ:

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই চক্রের সদস্যরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও চুরি চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি, ঝিকরা ইউনিয়নের পিরুলিসেন পাড়া গ্রামের মসজিদের পুকুরের মাছ প্রকাশ্যে লুট করার অভিযোগ উঠেছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়দের দাবি।

এছাড়াও, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হাটবাজার, অটো-টেম্পু স্ট্যান্ডে অবৈধ টোল আদায়, অবৈধ পুকুর খননসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ই আগস্টের পর থেকে কালীগঞ্জ বাজারের প্রায় ৯৫% দোকান থেকে চাঁদা আদায় করেছে এবং চাঁদা না দিলে দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এমনকি পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলা বা মোটা অংকের চাঁদা দাবির ঘটনাও ঘটেছে।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ:

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমির হোসেন বর্তমানে বাগমারা উপজেলার ১২ নং ঝিকরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা তারেক জিয়া প্রজন্মদলের অন্যতম সদস্য। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপি ও জামায়াতের প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে প্রায় কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে (বাগমারা থানার মামলা নং ১৫, তারিখ ১৭/০৮/২০০৯, জি আর নং ১৫১/২০০৯ এবং বাগমারা থানার মামলা নং ১৬, তারিখ ১৭/০৮/২০০৯, জি আর নং ১৫২/২০০৯)।

এছাড়াও, এই চক্রের সাথে ‘ক্যাসিনো ফিরোজ’ (এমটিএফই অনলাইন প্রতারণামূলক অ্যাপসের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ) এবং ‘সর্বহারা শহীদ’ নামের চক্রের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ, এই দুই ব্যক্তি গণঅভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে থাকলেও পরবর্তীতে আমির ও সোহাগ চক্রকে অর্থের বিনিময়ে এলাকায় ফিরে আসেন এবং তাদের বডিগার্ড হিসেবে এই চোর ও ক্যাডার চক্র কাজ করে।

প্রশাসনের নীরব ভূমিকা:

স্থানীয়দের অভিযোগ, আমির ও সোহাগ চক্রের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হত্যা, গরু চুরি, বাইক চুরি, অপহরণসহ এক ডজনের বেশি মামলা রাজশাহী ও নওগাঁ জেলায় থাকলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ভয়াবহ নির্যাতন, অপহরণ এমনকি মিথ্যা ধর্ষণ মামলা পর্যন্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ভয়ে স্থানীয় শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও মুখ খুলতে সাহস পান না।

এলাকাবাসীর আকুতি, দ্রুত এই সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।