Hi

১০:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলার সংস্কৃতির নবজাগরণে মুখরিত “বন্দেমাতরম”: ইসকনের উদ্যোগে ১৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন


বাংলার সংস্কৃতির নবজাগরণে মুখরিত “বন্দেমাতরম”: ইসকনের উদ্যোগে ১৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন

কলকাতা, ২৫ জুন ২০২৫: বাংলার সংস্কৃতির নবজাগরণ এবং “বন্দেমাতরম”-এর ১৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে, গতকাল ২৩শে জুন সোমবার বিকেল ৪টায় সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জগন্নাথ সরকারের উদ্যোগে, এবং বন্দেমাতরম শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ফাউন্ডেশন ও সনাতনী এডুকেশন এন্ড কালচারাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ঐতিহাসিক “বন্দেমাতরম” সংগীত। লক্ষ্য কণ্ঠে গীতা পাঠের পর, সবার উপস্থিতিতে এই গানটি গাওয়া হয়। এর সাথে মঞ্চস্থ হয় “সত্য শ্যামা প্রসাদ” শীর্ষক একটি নাটক, যার ভাবনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ এবং পরিচালনায় দেবাশীষ বিশ্বাস।


অনুষ্ঠানের সূচনা ও অতিথিদের সম্মাননা

অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভারতমাতা এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মূর্তিতে মাল্যদান ও ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয়। মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন পরমাত্মানন্দ মহারাজ, অশ্বিনী জি, দিলীপ ঘোষ, সজল ঘোষ, ভারতী ঘোষ সহ বিভিন্ন সাধু-সন্ন্যাসী এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি সজল চট্টোপাধ্যায়। একে একে সকল অতিথিদের চন্দনের ফোঁটা ও পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মানিত করা হয়।


শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মূর্তি স্থাপনের দাবি

আজকের “বন্দেমাতরম” সংগীতের মধ্য দিয়ে, সকল কর্মী ও উপস্থিত সুধীজনের মধ্য থেকে একটি দাবি উঠে আসে—গঙ্গার পাড়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর সবচেয়ে উঁচু একটি মূর্তি বসানোর জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। উপস্থিত অতিথিরা এই দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতিও দেন।


“বন্দেমাতরম” ও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব

সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় এবং হাজারো কণ্ঠে “বন্দেমাতরম” সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ওপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা তুলে ধরা হয়। বক্তারা উল্লেখ করেন, ১৭৭৩ সালে সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস “আনন্দমঠ”, আর সেই উপন্যাসেরই অন্তর্ভুক্ত গান “বন্দেমাতরম” আজ হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে। বক্তারা স্মরণ করিয়ে দেন যে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন এই গানটি লিখেছিলেন, তখন তার বড় মেয়ে এর তাৎপর্য বুঝতে পারেননি। জবাবে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন, “একদিন বুঝতে পারবি নাড়া ঘাটা করলে।” আজ সেই গান সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, যা তার দূরদর্শিতাকেই প্রমাণ করে।

বক্তারা আরও বলেন, যারা “বন্দেমাতরম”-এর পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন, সেই বাংলায় আজও “বন্দেমাতরম” চলছে। কিন্তু যেখান থেকে ভারত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সেখানে “বন্দেমাতরম” উচ্চারণ হয় না, তাই আজ পাকিস্তানেও “বন্দেমাতরম” ধ্বনিত হয় না।


বঙ্কিমচন্দ্রের নাতির আক্ষেপ ও কৃতজ্ঞতা

সবার শেষে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি সজল চট্টোপাধ্যায় কিছুটা দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে বলেন যে, যে গান আমাদের একতা এনেছে, যে গান সবার মুখে মুখে ধ্বনিত হয়, আজ তাদের কেউ মনে রাখে না। তবে তিনি গর্বিত যে, “আমরা যে দেশে বাস করি সেই দেশের সরকার আমাদের মনে রেখেছে, এটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা।” তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন, নৈহাটির সম্পত্তি বা অন্য কোনো বিষয়ে আপত্তি করতে গেলে তাদেরকে (বঙ্কিমচন্দ্রের বংশধর) নিয়েই আপত্তি করা হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “এই হচ্ছে আমাদের বাংলা, আমাদের ভারত বর্ষ, যারা সব কিছু করে, তাকে ভুলে যায়।” তবে তিনি আবারও বলেন, “আজ আমরা গর্বিত, ভারত সরকার আমাদের মনে রেখেছে।” পরিশেষে তিনি সবার কণ্ঠে “বন্দেমাতরম” ধ্বনিত হওয়ার আহ্বান জানান।


প্রতিবেদক: সমরেশ রায় ও শম্পা দাস, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

জামালগঞ্জে ৪ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ: ১১ কৃষক পেলেন পৌনে ১৮ লাখ টাকা

বাংলার সংস্কৃতির নবজাগরণে মুখরিত “বন্দেমাতরম”: ইসকনের উদ্যোগে ১৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন

আপডেট : ০৫:০৬:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

বাংলার সংস্কৃতির নবজাগরণে মুখরিত “বন্দেমাতরম”: ইসকনের উদ্যোগে ১৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন

কলকাতা, ২৫ জুন ২০২৫: বাংলার সংস্কৃতির নবজাগরণ এবং “বন্দেমাতরম”-এর ১৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে, গতকাল ২৩শে জুন সোমবার বিকেল ৪টায় সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জগন্নাথ সরকারের উদ্যোগে, এবং বন্দেমাতরম শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ফাউন্ডেশন ও সনাতনী এডুকেশন এন্ড কালচারাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ঐতিহাসিক “বন্দেমাতরম” সংগীত। লক্ষ্য কণ্ঠে গীতা পাঠের পর, সবার উপস্থিতিতে এই গানটি গাওয়া হয়। এর সাথে মঞ্চস্থ হয় “সত্য শ্যামা প্রসাদ” শীর্ষক একটি নাটক, যার ভাবনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ এবং পরিচালনায় দেবাশীষ বিশ্বাস।


অনুষ্ঠানের সূচনা ও অতিথিদের সম্মাননা

অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভারতমাতা এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মূর্তিতে মাল্যদান ও ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয়। মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন পরমাত্মানন্দ মহারাজ, অশ্বিনী জি, দিলীপ ঘোষ, সজল ঘোষ, ভারতী ঘোষ সহ বিভিন্ন সাধু-সন্ন্যাসী এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি সজল চট্টোপাধ্যায়। একে একে সকল অতিথিদের চন্দনের ফোঁটা ও পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মানিত করা হয়।


শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মূর্তি স্থাপনের দাবি

আজকের “বন্দেমাতরম” সংগীতের মধ্য দিয়ে, সকল কর্মী ও উপস্থিত সুধীজনের মধ্য থেকে একটি দাবি উঠে আসে—গঙ্গার পাড়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর সবচেয়ে উঁচু একটি মূর্তি বসানোর জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। উপস্থিত অতিথিরা এই দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতিও দেন।


“বন্দেমাতরম” ও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব

সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় এবং হাজারো কণ্ঠে “বন্দেমাতরম” সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ওপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা তুলে ধরা হয়। বক্তারা উল্লেখ করেন, ১৭৭৩ সালে সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস “আনন্দমঠ”, আর সেই উপন্যাসেরই অন্তর্ভুক্ত গান “বন্দেমাতরম” আজ হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে। বক্তারা স্মরণ করিয়ে দেন যে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন এই গানটি লিখেছিলেন, তখন তার বড় মেয়ে এর তাৎপর্য বুঝতে পারেননি। জবাবে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন, “একদিন বুঝতে পারবি নাড়া ঘাটা করলে।” আজ সেই গান সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, যা তার দূরদর্শিতাকেই প্রমাণ করে।

বক্তারা আরও বলেন, যারা “বন্দেমাতরম”-এর পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন, সেই বাংলায় আজও “বন্দেমাতরম” চলছে। কিন্তু যেখান থেকে ভারত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সেখানে “বন্দেমাতরম” উচ্চারণ হয় না, তাই আজ পাকিস্তানেও “বন্দেমাতরম” ধ্বনিত হয় না।


বঙ্কিমচন্দ্রের নাতির আক্ষেপ ও কৃতজ্ঞতা

সবার শেষে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি সজল চট্টোপাধ্যায় কিছুটা দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে বলেন যে, যে গান আমাদের একতা এনেছে, যে গান সবার মুখে মুখে ধ্বনিত হয়, আজ তাদের কেউ মনে রাখে না। তবে তিনি গর্বিত যে, “আমরা যে দেশে বাস করি সেই দেশের সরকার আমাদের মনে রেখেছে, এটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা।” তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন, নৈহাটির সম্পত্তি বা অন্য কোনো বিষয়ে আপত্তি করতে গেলে তাদেরকে (বঙ্কিমচন্দ্রের বংশধর) নিয়েই আপত্তি করা হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “এই হচ্ছে আমাদের বাংলা, আমাদের ভারত বর্ষ, যারা সব কিছু করে, তাকে ভুলে যায়।” তবে তিনি আবারও বলেন, “আজ আমরা গর্বিত, ভারত সরকার আমাদের মনে রেখেছে।” পরিশেষে তিনি সবার কণ্ঠে “বন্দেমাতরম” ধ্বনিত হওয়ার আহ্বান জানান।


প্রতিবেদক: সমরেশ রায় ও শম্পা দাস, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ।