Hi

০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ইসরায়েল কি তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারলো?

তেহরান/জেরুজালেম, ২৬ জুন ২০২৫: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে তীব্র সংঘাতময় ১২ দিন শেষে আপাতত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে, ইরানে টানা ১২ দিন ধরে ভয়াবহ বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল কী অর্জন করল, যেখানে সংঘাতের শুরুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুটি প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন: ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা এবং শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন? কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে এর একটি মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে।


ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য ও বাস্তব চিত্র

আল জাজিরার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্যগুলো পূরণ হয়নি। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসন যেমন বহাল তবিয়তে টিকে আছে, তেমনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোও রয়ে গেছে অক্ষত। উল্টো, মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরায়েলের প্রতিটি হামলার জবাব ইরান যেভাবে চোখে চোখ রেখে দিয়েছে, তা এক কথায় ‘হতবাক’ করেছে পুরো বিশ্বকে।


ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা

বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাতের ১২ দিনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বহরের সামনে একপ্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে ইসরায়েলের ‘মহাশক্তিশালী’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ইরানের শত শত মিসাইল ঠেকাতে গিয়ে দেশটির প্রতিরোধের ক্ষমতা এতটাই তলানিতে নেমে গেছে যে, সংঘাত যদি আরও সপ্তাহখানেক স্থায়ী হতো, তাহলে প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়ানোর শক্তিই হয়তো হারিয়ে ফেলতো তারা।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা

এমন কঠিন পরিণতির সামনে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকে বাঙ্কার-বাস্টিং বোমা, ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে হয়েছে। তবে ইসরায়েল ও মার্কিন হামলায় ইরানের ধ্বংসের পরিমাণ মূল্যায়ন করা সহজ নয়; কারণ ইরান বাইরের কাউকে এ নিয়ে সরাসরি তদন্ত করতে দেবে না।


শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যর্থতা ও অভ্যন্তরীণ সংহতি

অন্যদিকে, ইরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করতে গিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই বিপদে পড়ে গেছেন। তার প্রশাসন ইরানের বিভিন্ন নিরাপত্তা কাঠামোর সামরিক নেতাদের হত্যা করে শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এটি কখনও কাজই করেনি। একমাত্র সম্ভাব্য ব্যতিক্রম ছিল হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর প্রভাব লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর, কিন্তু এর সাথে লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিশীলতার অনেক সম্পর্ক ছিল। অন্য সব ক্ষেত্রে, ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড কোনও বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

আর ইরানের ক্ষেত্রে এই হত্যাকাণ্ড বরং সরকারের চারপাশের জনগণকে একত্রিত করেছিল। ইসরায়েল ইরানি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC) এর সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যা করেছিল, যারা সম্ভবত বর্তমান ইরানি রাজনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান, কিন্তু ইরানি জনগণের দ্বারা সবচেয়ে ঘৃণিত। তা সত্ত্বেও, অনেক ইরানি যারা নিজেদেরকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের এবং বিশেষ করে আইআরজিসির কট্টর বিরোধী বলে মনে করেন, তারাও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নিজেদের সরকার ও বাহিনীকেই সমর্থন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ইরানিরা কেবল ‘শাসন’ নয়, পুরো ইরানকেই আক্রমণের মুখে দেখেছিলেন।


নেতানিয়াহুর সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি

তবে, ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে নিজ দেশেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন নেতানিয়াহু; একইসঙ্গে হারিয়েছেন পশ্চিমা মিত্রদের একাংশের সমর্থনও। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লেও তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়নি। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ইরানকে দেখছে ইসরায়েলি হামলার শিকার হিসেবে।


আন্তর্জাতিক সমর্থন ও পারমাণবিক কর্মসূচি

এছাড়া, আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে: যদি ইসরায়েল তার ঘোষিত যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, তাহলে কি তারা অন্তত বিশ্বকে তাদের পিছনে একত্রিত করতে পেরেছিল, যাতে জনগণ গাজার কথা ভুলে গিয়ে ইসরায়েলকে আবারও ভালো লড়াইয়ের লড়াইকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে? আল জাজিরা বলছে, এখানেও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হয়েছে।

সত্য হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক আইনের বেশ কয়েকটি প্রধান নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়ে সমর্থন আদায় করতে পারেননি। হামলার পরপরই কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো ফিরে আসে যুক্তরাষ্ট্রে।

বোমা হামলার আগে এবং পরে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে একটি চুক্তির জন্য তার আকাঙ্ক্ষার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন এবং পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন, যাতে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মনে হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার নিজস্ব স্বার্থ এবং উপসাগরে তার মিত্রদের স্বার্থ রক্ষায় ইসরায়েলকে সহায়তা করেছেন। যদিও বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা, বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, মার্কিন হামলা এবং ‘ইসরায়েলের তথাকথিত আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিয়েছিলেন, তবুও কেউই ‘ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হতে দেওয়া উচিত নয়’- ইসরায়েলের এমন দাবি মেনে নেননি।

সবাই বলেছে, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করে। আর ইরানও বরাবরই বলে এসেছে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও বলছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনও প্রমাণ পায়নি তারা। এছাড়া, ইরানকে ব্যবসা করার জন্য একটি বৈধ অংশীদার হিসেবে মনে করে বিশ্ব। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি ক্ষতি এবং ইরানের জন্য একটি জয়।


ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতার দুর্বলতা

ইসরায়েল খুব দ্রুত ইরানের ওপর আকাশপথে আধিপত্য অর্জন করেছিল এবং প্রায় ইচ্ছামতো আঘাত করেছিল। তবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বারবার বিখ্যাত ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল, ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থল এবং সমগ্র দেশ জুড়ে আঘাত করেছিল এবং অভূতপূর্ব সংখ্যক হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল। ইসরায়েলের কাছে ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব ছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে পুনরুত্পাদনের আশা ছিল না। ইসরায়েলি অর্থনীতিও দ্রুত স্থবির হয়ে পড়ছিল। ইরানের জন্য আরেকটি বিজয় ছিল এটি।


লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

জামালগঞ্জে ৪ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ: ১১ কৃষক পেলেন পৌনে ১৮ লাখ টাকা

১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ইসরায়েল কি তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারলো?

আপডেট : ১১:৩০:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

তেহরান/জেরুজালেম, ২৬ জুন ২০২৫: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে তীব্র সংঘাতময় ১২ দিন শেষে আপাতত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে, ইরানে টানা ১২ দিন ধরে ভয়াবহ বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল কী অর্জন করল, যেখানে সংঘাতের শুরুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুটি প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন: ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা এবং শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন? কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে এর একটি মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে।


ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য ও বাস্তব চিত্র

আল জাজিরার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্যগুলো পূরণ হয়নি। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসন যেমন বহাল তবিয়তে টিকে আছে, তেমনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোও রয়ে গেছে অক্ষত। উল্টো, মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরায়েলের প্রতিটি হামলার জবাব ইরান যেভাবে চোখে চোখ রেখে দিয়েছে, তা এক কথায় ‘হতবাক’ করেছে পুরো বিশ্বকে।


ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা

বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাতের ১২ দিনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বহরের সামনে একপ্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে ইসরায়েলের ‘মহাশক্তিশালী’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ইরানের শত শত মিসাইল ঠেকাতে গিয়ে দেশটির প্রতিরোধের ক্ষমতা এতটাই তলানিতে নেমে গেছে যে, সংঘাত যদি আরও সপ্তাহখানেক স্থায়ী হতো, তাহলে প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়ানোর শক্তিই হয়তো হারিয়ে ফেলতো তারা।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা

এমন কঠিন পরিণতির সামনে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকে বাঙ্কার-বাস্টিং বোমা, ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে হয়েছে। তবে ইসরায়েল ও মার্কিন হামলায় ইরানের ধ্বংসের পরিমাণ মূল্যায়ন করা সহজ নয়; কারণ ইরান বাইরের কাউকে এ নিয়ে সরাসরি তদন্ত করতে দেবে না।


শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যর্থতা ও অভ্যন্তরীণ সংহতি

অন্যদিকে, ইরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করতে গিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই বিপদে পড়ে গেছেন। তার প্রশাসন ইরানের বিভিন্ন নিরাপত্তা কাঠামোর সামরিক নেতাদের হত্যা করে শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এটি কখনও কাজই করেনি। একমাত্র সম্ভাব্য ব্যতিক্রম ছিল হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর প্রভাব লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর, কিন্তু এর সাথে লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিশীলতার অনেক সম্পর্ক ছিল। অন্য সব ক্ষেত্রে, ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড কোনও বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

আর ইরানের ক্ষেত্রে এই হত্যাকাণ্ড বরং সরকারের চারপাশের জনগণকে একত্রিত করেছিল। ইসরায়েল ইরানি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC) এর সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যা করেছিল, যারা সম্ভবত বর্তমান ইরানি রাজনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান, কিন্তু ইরানি জনগণের দ্বারা সবচেয়ে ঘৃণিত। তা সত্ত্বেও, অনেক ইরানি যারা নিজেদেরকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের এবং বিশেষ করে আইআরজিসির কট্টর বিরোধী বলে মনে করেন, তারাও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নিজেদের সরকার ও বাহিনীকেই সমর্থন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ইরানিরা কেবল ‘শাসন’ নয়, পুরো ইরানকেই আক্রমণের মুখে দেখেছিলেন।


নেতানিয়াহুর সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি

তবে, ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে নিজ দেশেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন নেতানিয়াহু; একইসঙ্গে হারিয়েছেন পশ্চিমা মিত্রদের একাংশের সমর্থনও। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লেও তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়নি। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ইরানকে দেখছে ইসরায়েলি হামলার শিকার হিসেবে।


আন্তর্জাতিক সমর্থন ও পারমাণবিক কর্মসূচি

এছাড়া, আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে: যদি ইসরায়েল তার ঘোষিত যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, তাহলে কি তারা অন্তত বিশ্বকে তাদের পিছনে একত্রিত করতে পেরেছিল, যাতে জনগণ গাজার কথা ভুলে গিয়ে ইসরায়েলকে আবারও ভালো লড়াইয়ের লড়াইকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে? আল জাজিরা বলছে, এখানেও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হয়েছে।

সত্য হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক আইনের বেশ কয়েকটি প্রধান নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়ে সমর্থন আদায় করতে পারেননি। হামলার পরপরই কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো ফিরে আসে যুক্তরাষ্ট্রে।

বোমা হামলার আগে এবং পরে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে একটি চুক্তির জন্য তার আকাঙ্ক্ষার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন এবং পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন, যাতে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মনে হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার নিজস্ব স্বার্থ এবং উপসাগরে তার মিত্রদের স্বার্থ রক্ষায় ইসরায়েলকে সহায়তা করেছেন। যদিও বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা, বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, মার্কিন হামলা এবং ‘ইসরায়েলের তথাকথিত আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিয়েছিলেন, তবুও কেউই ‘ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হতে দেওয়া উচিত নয়’- ইসরায়েলের এমন দাবি মেনে নেননি।

সবাই বলেছে, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করে। আর ইরানও বরাবরই বলে এসেছে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও বলছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনও প্রমাণ পায়নি তারা। এছাড়া, ইরানকে ব্যবসা করার জন্য একটি বৈধ অংশীদার হিসেবে মনে করে বিশ্ব। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি ক্ষতি এবং ইরানের জন্য একটি জয়।


ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতার দুর্বলতা

ইসরায়েল খুব দ্রুত ইরানের ওপর আকাশপথে আধিপত্য অর্জন করেছিল এবং প্রায় ইচ্ছামতো আঘাত করেছিল। তবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বারবার বিখ্যাত ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল, ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থল এবং সমগ্র দেশ জুড়ে আঘাত করেছিল এবং অভূতপূর্ব সংখ্যক হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল। ইসরায়েলের কাছে ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব ছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে পুনরুত্পাদনের আশা ছিল না। ইসরায়েলি অর্থনীতিও দ্রুত স্থবির হয়ে পড়ছিল। ইরানের জন্য আরেকটি বিজয় ছিল এটি।