ঢাকা, ১৬ জুলাই ২০২৫: বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত এক ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি ঐতিহাসিক আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বুধবার (১৬ জুলাই) প্রথমবারের মতো পালিত ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক মর্মস্পর্শী বাণীতে তিনি এই আহ্বান জানান। তার এই আহ্বান দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
‘জুলাই শহীদদের স্বপ্ন ছিল এক নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার’
জুলাই শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে অধ্যাপক ইউনূস তার বাণীতে বলেন, “জুলাই শহীদরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশের পথে দৃপ্ত পদভারে একযোগে সবাই এগিয়ে যাবো—আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”
গণ-অভ্যুত্থানের স্মরণে প্রথম ‘জুলাই শহীদ দিবস’ – রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা!
গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের স্মরণে প্রথমবারের মতো আজ (বুধবার) দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’।1 এই উপলক্ষে সরকার আজ এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশের মাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দেশব্যাপী মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও শহীদদের শান্তির জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই: এক অবিস্মরণীয় আত্মদান
প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, “প্রথমবারের মতো আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী সব শহীদকে।”
অধ্যাপক ইউনূস স্মরণ করিয়ে দেন, “২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ও সন্ত্রাসীদের হামলায় এই দিনে চট্টগ্রাম, রংপুর ও ঢাকায় অন্তত ছয় জন শহীদ হন।” তিনি বলেন, ক্ষণজন্মা অকুতোভয় এই বীরদের আত্মদান আন্দোলনে তীব্র গতির সঞ্চার করে। প্রতিবাদে দেশজুড়ে রাজপথে নেমে আসে লাখো শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতা। আন্দোলনের তীব্রতার সঙ্গে বাড়তে থাকে শহীদদের সংখ্যা।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বৈষম্য ও কোটাবিরোধী আন্দোলন অচিরেই রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। সর্বস্তরের মানুষের দুর্বার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় স্বৈরাচার। হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে হয় মুক্তির নতুন সূর্যোদয়।
শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ!
শহীদদের স্মরণ ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকটি কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ইউনুনস। তিনি জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ এবং ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। জুলাই শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত ও গেজেটে প্রকাশের কার্যক্রম চলমান আছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা ও মাসিক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণেও একই রকম নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।2
বাণীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আত্মদানকারী সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।3 তার এই বার্তা দেশজুড়ে এক নতুন প্রেরণা ও সংকল্পের জন্ম দিয়েছে।
ট্যাগস: #অধ্যাপকমুহাম্মদইউনূস #জুলাইশহীদদিবস #নতুনবাংলাদেশ #গণঅভ্যুত্থান #স্বৈরাচারমুক্ত #দুর্নীতিমুক্ত #বৈষম্যহীন #ব্রেকিংনিউজ #রাষ্ট্রীয়শোক