রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট বাজার কেন্দ্রিক দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ও উত্তেজনার অবসান ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের উসকানিতে প্রায় এক মাস ধরে চলা বাজার বর্জন কর্মসূচী শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করেছেন স্থানীয় পাহাড়ি জনগণ। এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে বাঘাইহাট সেনা জোনের উদ্যোগে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় সভায় বাজার বর্জন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সেনাবাহিনীর ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড ও খাগড়াছড়ি রিজিয়নের আওতাধীন বাঘাইহাট জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাসুদ রানা। সভায় বঙ্গলতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞানোজ্যোতি চাকমা, সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা, বাঘাইহাট বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন, কাঠ মালিক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, বাঘাইহাট জীপ মালিক সমিতির সঙ্গে বিরোধের জেরে আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর উসকানীতে স্থানীয় পাহাড়িরা বাঘাইহাট বাজার বর্জনের ঘোষণা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই কর্মসূচির ফলে বাজারে বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার আলোচনা করে ব্যর্থ হওয়ার পর, সেনাবাহিনী উদ্যোগ নিয়ে সকল পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসাতে সক্ষম হয়।
জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাসুদ রানা বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে থাকে। পাহাড়েও এর ব্যতিক্রম নয়। সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালি জনগণের ভোগান্তি দূর করতে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি এবং আজ এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান সম্ভব হয়েছে।” তিনি আরও জানান, আগামী ২২ জুন (রবিবার) থেকে বাঘাইহাট বাজারের সাপ্তাহিক হাট আগের মতোই জমজমাট হবে এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও বাজার কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বাজার বর্জনের পেছনে কিছু অস্ত্রধারী আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল। তারা সাধারণ পাহাড়ি জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাজারে যেতে নিষেধ করে এবং সামাজিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ও দৃঢ় ভূমিকা সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। বাজার পূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা শুধু একটি অর্থনৈতিক সাফল্য নয়, বরং এটি পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতির বড় উদাহরণ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণ সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আর জনগণকে জিম্মি করে নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবে না।