ঢাকা, ১৭ জুন ২০২৫: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সহ ১৭টি পরিবেশবাদী সংগঠন। আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর শ্যামলী পার্ক মাঠে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই জোরালো দাবি জানানো হয়। একই সাথে, পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে কয়লা ও এলএনজিতে জাপানের বিনিয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে মূল বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, “জুন মাসে জাপানের কর্মপরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং আমরা জানতে পেরেছি, আবারও বাংলাদেশে অনেকগুলো এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের মাধ্যমে গ্যাস বিস্তারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা তা চাই না। আমরা চাই, জাপান যেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প স্থাপনের দিকে ধাবিত হয়।” তিনি সরকারকেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এ এস এম বদরুল আলম বলেন, “জাপান বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে, কিন্তু এর ফলে কী ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা জানি না। ওই বিনিয়োগের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বাড়ছে। এতে উত্তরবঙ্গে খরা ও মরুকরণ হচ্ছে, ঋতুচক্রে পরিবর্তন হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আশা করি, জাপান এই বিনিয়োগ থেকে বের হয়ে আসবে।”
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, যার ফলে অসংখ্য মানুষ জীবিকা হারাচ্ছে এবং এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রত্যাশা করেন।
চলনবিল রক্ষায় আমরার মেহনাজ মালা চলনবিলের বর্তমান সংকটাপন্ন অবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলনবিলের অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। কৃষকরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। খরা মৌসুমে মাটির ৫ ফুট নিচে পানি তোলার জন্য মেশিন স্থাপন করতে হচ্ছে, আর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির আগেই পানিতে ফসলের ক্ষেত ভরে যাচ্ছে।”
ব্রাইটারসের সাইদুর রহমান সিয়াম বলেন, “জাপানের গ্যাস প্রকল্প সম্প্রসারণের ফলে কার্বন নিঃসরণ আরও বেড়ে যাচ্ছে। জাপানের এলএনজি সম্প্রসারণের টার্গেট পূরণে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করছে। এর মাধ্যমে জাপান আমাদেরকে বিভ্রান্ত করছে।”
সমাবেশে শাওন মাইম একাডেমী পরিবেশিত মুখাভিনয়ের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের কারণে পরিবেশের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে এবং এর ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকা কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়।
সমাবেশ থেকে আশা প্রকাশ করা হয় যে, জাপান সরকার বাংলাদেশ এবং অন্যান্য এশীয় দেশগুলিকে আরও জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে ঠেলে দেওয়া বন্ধ করবে এবং তাদের সংস্থাসমূহ তাদের নীতি ও কার্যক্রম পরিবর্তন করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির রূপান্তরের দিকে অগ্রসর হবে।
উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণকারীরা: বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এ এস এম বদরুল আলম, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কিম, সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, ইকুইটিবিডির নেটওয়ার্ক কো-অর্ডিনেটর মোস্তফা কামাল আকন্দ, গ্লোবাল ল’ থিংকারস সোসাইটির (জিএলটিএস) চেয়ারপারসন রাওমান স্মিতা, সচেতন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, ব্রাইটারসের সাইদুর রহমান সিয়াম, সিপিআরডির নূর আতায়া রাব্বি, খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ব্লেস্মি বাড়ৈ, চলনবিল রক্ষায় আমরার মেহনাজ মালা, ইউক্যানের যুধিষ্টির চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ।