Hi

১০:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি পশ্চিমা শক্তির প্রধান টার্গেট?

  • আপডেট : ০৩:২৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
  • ৬৪৯ জন দেখেছে

তেহরান, ২৬ জুন ২০২৫: বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইরানের শাসনব্যবস্থা এক ভিন্ন কাঠামোর অধীন। এখানে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও, প্রকৃত ক্ষমতা থাকে একজন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দায়িত্বে রয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, যিনি ইরানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যাচেষ্টার সম্ভাবনা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানের কথিত সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়ে আছেন আমি জানি, কিন্তু এখনই তাকে মারা হবে না।” এই মন্তব্য শুধু বিতর্কই নয়, বরং ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের নিরাপত্তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

অনেকে প্রশ্ন করছেন, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নয়, বরং কেন আয়াতুল্লাহ খামেনি আমেরিকা ও ইসরায়েলের মূল টার্গেট? এর উত্তর নিহিত রয়েছে ইরানের জটিল রাজনৈতিক কাঠামো এবং খামেনির প্রভাবের গভীরতায়।

খামেনির উত্থান ও বিপ্লবী ভূমিকা:

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং শাহ রেজা পাহলভির পরিবর্তে ইসলামি প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। এই নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি, যার বিশ্বস্ত অনুসারী ছিলেন তরুণ আলি খামেনি। ১৯৩৯ সালে ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মাশহাদ শহরে জন্ম নেওয়া আলি খামেনি শৈশবে ধর্মীয় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। পরে শিয়া মুসলিমদের তীর্থস্থান কোমে গিয়ে তার চিন্তাধারায় মৌলিক পরিবর্তন আসে। ১৯৬২ সালে তিনি আয়াতুল্লাহ খোমেনির আন্দোলনে যোগ দেন এবং ইসলামী বিপ্লবের অগ্রভাগের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।

ইরানে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর খামেনি বিপ্লবী পরিষদে যুক্ত হন, পরে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন এবং ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর (IRGC) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে এই গার্ড কোর ইরানের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৮১ সালে এক বোমা হামলায় গুরুতর আহত হলেও এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও কঠোর ও দৃঢ়চেতা নেতা হিসেবে গড়ে তোলে।

আঞ্চলিক প্রভাব ও পশ্চিমা শক্তির উদ্বেগ:

আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসনামলে ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন ও গাজার মতো অঞ্চলগুলিতে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে তাকে শুধুমাত্র ইরানের নেতা হিসেবে নয়, বরং পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি প্রতিরোধের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও দেখা হয়।

সুতরাং, পশ্চিমা শক্তির কাছে প্রেসিডেন্ট নয়, আয়াতুল্লাহ খামেনিই ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে প্রধান শত্রু। তিনি শুধু রাষ্ট্রীয় প্রধান নন, একজন আদর্শিক প্রতীক—যিনি ইরানিদের আত্মপরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তার এই আদর্শিক ও প্রকৃত ক্ষমতাধর অবস্থানই তাকে পশ্চিমা শক্তির প্রধান টার্গেটে পরিণত করেছে।


ট্যাগস: ইরান, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ডোনাল্ড ট্রাম্প, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত, ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর, পারমাণবিক শক্তি, রাজনৈতিক কাঠামো, ধর্মীয় নেতা।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

শিক্ষকদের পায়ে ফুল, আর সেই সঙ্গে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নিয়ে ঝড় তোলা পাঠচক্র! ঝিনাইদহ বন্ধুসভার এক অন্যরকম শিক্ষক দিবস উদযাপন, যা মন জয় করেছে সবার! ঝিনাইদহ: ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নিয়ে কবিতা-আলোচনা!

কেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি পশ্চিমা শক্তির প্রধান টার্গেট?

আপডেট : ০৩:২৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

তেহরান, ২৬ জুন ২০২৫: বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইরানের শাসনব্যবস্থা এক ভিন্ন কাঠামোর অধীন। এখানে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও, প্রকৃত ক্ষমতা থাকে একজন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দায়িত্বে রয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, যিনি ইরানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যাচেষ্টার সম্ভাবনা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানের কথিত সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়ে আছেন আমি জানি, কিন্তু এখনই তাকে মারা হবে না।” এই মন্তব্য শুধু বিতর্কই নয়, বরং ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের নিরাপত্তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

অনেকে প্রশ্ন করছেন, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নয়, বরং কেন আয়াতুল্লাহ খামেনি আমেরিকা ও ইসরায়েলের মূল টার্গেট? এর উত্তর নিহিত রয়েছে ইরানের জটিল রাজনৈতিক কাঠামো এবং খামেনির প্রভাবের গভীরতায়।

খামেনির উত্থান ও বিপ্লবী ভূমিকা:

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং শাহ রেজা পাহলভির পরিবর্তে ইসলামি প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। এই নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি, যার বিশ্বস্ত অনুসারী ছিলেন তরুণ আলি খামেনি। ১৯৩৯ সালে ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মাশহাদ শহরে জন্ম নেওয়া আলি খামেনি শৈশবে ধর্মীয় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। পরে শিয়া মুসলিমদের তীর্থস্থান কোমে গিয়ে তার চিন্তাধারায় মৌলিক পরিবর্তন আসে। ১৯৬২ সালে তিনি আয়াতুল্লাহ খোমেনির আন্দোলনে যোগ দেন এবং ইসলামী বিপ্লবের অগ্রভাগের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।

ইরানে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর খামেনি বিপ্লবী পরিষদে যুক্ত হন, পরে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন এবং ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর (IRGC) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে এই গার্ড কোর ইরানের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৮১ সালে এক বোমা হামলায় গুরুতর আহত হলেও এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও কঠোর ও দৃঢ়চেতা নেতা হিসেবে গড়ে তোলে।

আঞ্চলিক প্রভাব ও পশ্চিমা শক্তির উদ্বেগ:

আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসনামলে ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন ও গাজার মতো অঞ্চলগুলিতে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে তাকে শুধুমাত্র ইরানের নেতা হিসেবে নয়, বরং পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি প্রতিরোধের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও দেখা হয়।

সুতরাং, পশ্চিমা শক্তির কাছে প্রেসিডেন্ট নয়, আয়াতুল্লাহ খামেনিই ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে প্রধান শত্রু। তিনি শুধু রাষ্ট্রীয় প্রধান নন, একজন আদর্শিক প্রতীক—যিনি ইরানিদের আত্মপরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তার এই আদর্শিক ও প্রকৃত ক্ষমতাধর অবস্থানই তাকে পশ্চিমা শক্তির প্রধান টার্গেটে পরিণত করেছে।


ট্যাগস: ইরান, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ডোনাল্ড ট্রাম্প, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত, ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর, পারমাণবিক শক্তি, রাজনৈতিক কাঠামো, ধর্মীয় নেতা।