কলকাতা, ২৮ জুন ২০২৫: ল’ কলেজের ছাত্রী গণধর্ষণের ন্যায় বিচারের দাবিতে আজ শনিবার (২৮ জুন) দুপুর তিনটায় কলকাতার গড়িয়াহাট মোড়ে পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একটি প্রতিবাদ র্যালির আয়োজন করে। এই র্যালিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে বিজেপি কর্মীদের ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয় এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ ৩০ থেকে ৩৫ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি ও র্যালি প্রতিহত করার চেষ্টা
র্যালিকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই গড়িয়াহাট মোড়ে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। স্টিয়ারিং গ্যাস, সেল, লাঠিধারী পুলিশ এমনকি বালিগঞ্জ ব্রিজের সামনে প্রচুর র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF) মোতায়েন ছিল, যাতে কোনোভাবেই বিজেপি কর্মীরা ল’ কলেজের দিকে বা কসবা থানায় যেতে না পারে।
সংঘর্ষ ও গ্রেপ্তার
দুপুর আড়াইটা নাগাদ যখন বিজেপি কর্মীরা গড়িয়াহাট মোড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের ধাওয়া করেন। মিনিট কয়েক বাদে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এসে হাজির হন। তাকে আসতে দেখে বিজেপির সদস্যরা এক জায়গায় সমবেত হন। সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখার পর যখন তারা গড়িয়াহাট চার রাস্তার মোড়ের দিকে এগোতে থাকেন, প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেওয়া হয়।
কিন্তু কোনো বাধাই তাদের আটকাতে পারেনি। ব্যারিকেড ভেঙে যখন গড়িয়াহাট মোড়ে প্রতিবাদ শুরু করেন, সাথে সাথে চতুর্দিক থেকে পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে এবং ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। এর ফলে সারা গড়িয়াহাটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং ফোর্স একে একে জোর করে বিজেপি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে থাকেন এবং ভ্যানে তোলেন। গ্রেপ্তার হন রাজ্য সভাপতি ও মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, জগন্নাথ চক্রবর্তী, তন্ময় ঘোষ, অনুপম ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা। বেশ কিছু মহিলা কর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিজেপি কর্মীদের অবিরাম প্রতিবাদ ও দাবি
গ্রেপ্তারের পরেও বিজেপি সদস্যরা থেমে থাকেননি। কিছুক্ষণ বাদে বাদে বিভিন্ন দিক থেকে এসে গাড়ি-ঘোড়া আটকে দেন এবং ব্যারিকেড রাস্তার মধ্যে ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেন। সাথে সাথে তাদের পিছনে পিছনে ছুটতে থাকে পুলিশ ফোর্স এবং তাদেরকেও একে একে গ্রেপ্তার করতে থাকেন।
তাদের দাবি, অবিলম্বে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। বক্তারা আর জি করের ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, কীভাবে ইউনিয়ন রুমে ডেকে একটি মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছে, যা এক বছর যেতে না যেতেই ল’ কলেজে পুনরাবৃত্তি ঘটল। তারা বলেন, মেয়েদের সুরক্ষা বলে কিছু নেই এবং মুখ্যমন্ত্রী সুরক্ষা দিতে পারছেন না। অথচ প্রশাসনের লোক দোষীদের শাস্তি না দিতে পেরে, যারা দোষীদের প্রতিবাদে রাস্তায় নামছেন, তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আরও বলেন, একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মহিলাদের সুরক্ষা দিতে পারছে না, এর চেয়ে লজ্জা করার কি আছে? দেশটাকে আস্তে আস্তে পাকিস্তান বানিয়ে ফেলছে। আজ পরিবারের লোকেরা মেয়েকে কলেজে পাঠিয়ে সুরক্ষা পাচ্ছে না। চিন্তায় ও ভয়ে দিন গুনছেন।
বিজেপি কর্মীদের দাবি ও প্রতিবাদ হলো, অবিলম্বে তিন অভিযুক্তকে শাস্তি দিতে হবে। যতদিন না শাস্তি পাবে, তাদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলতে থাকবে। তারা উল্লেখ করেন, স্কুল, কলেজ ও সরকারি ডিপার্টমেন্টে সুরক্ষা বলে কিছু নেই, যা বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে। তাই আজ প্রতিবাদে মহিলারাও ধিক্কার জানাচ্ছেন এবং পরিবারের লোকেরা রাস্তায় নামছেন। একজন রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী হয়ে মহিলা সুরক্ষায় বিফল বলে তারা অভিযোগ করেন।