বরগুনা, ১২ জুলাই ২০২৫: ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে চাঁদাবাজির জেরে নির্মমভাবে খুন হওয়া ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের (৪০) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে তার নিজ জেলা বরগুনার সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে (নানাবাড়ি) পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
নিহতের পরিচিতি ও ঘটনার বিবরণ
নিহত সোহাগের দুই সন্তান রয়েছে—মেয়ে সোহানা (১৪) ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ছেলে সোহান (১১) চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায় ভাঙ্গারী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। শুরুতে অন্যের অধীনে কাজ করলেও গত পাঁচ বছর ধরে নিজে স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন।
এর আগে, গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে শতাধিক মানুষের সামনে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা রড ও বড় পাথর দিয়ে সোহাগের মাথা ও বুকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে এবং হত্যার পর উল্লাস করে তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে নিন্দা ও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
হত্যাকাণ্ডের কারণ ও আইনি পদক্ষেপ
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোহাগের সঙ্গে স্থানীয় এক যুবদল নেতা মঈনের ঘনিষ্ঠতা ছিল। একসময় সখ্যতা থাকলেও সম্প্রতি মঈন তার ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করলে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ঘটনার পর নিহত সোহাগের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিন সহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তলসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ড এবং অস্ত্র আইনে দায়েরকৃত দুটি মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দু’জন বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিহত সোহাগের পরিবার ও এলাকাবাসী দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ট্যাগস: মিটফোর্ড, চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ড, লাল চাঁদ সোহাগ, বরগুনা, মামলা, গ্রেপ্তার, যুবদল নেতা, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।