🔥 ব্রেকিং: খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুব হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পরও খুনি অধরা! ‘আধিপত্য বিস্তার, মাদক ও পায়ের রগ কাটা’ – চাঞ্চল্যকর ক্লু ফাঁস, তোলপাড় কেএমপি! 🔥

আপডেট : ০৫:০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
৫৭১ জন দেখেছে

খুলনা, ১৩ জুলাই ২০২৫, সকাল ১১:৩৪: খুলনার দৌলতপুরে যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা মাহবুবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও খুনিরা এখনো অধরা! পুলিশের একাধিক টিম মাঠ চষে বেড়াচ্ছে জানানো হলেও, হত্যাকাণ্ডের ক্লু এখনো পরিষ্কার নয়। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা দুটি প্রধান বিষয়কে সামনে রেখে জোর তদন্ত শুরু করেছেন: আধিপত্য বিস্তার এবং মাদক কারবারে জড়িতদের সঙ্গে তার পুরনো দ্বন্দ্ব! এই হত্যাকাণ্ডের ধরন খুলনার অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

গত শুক্রবার রাতে মাহবুবুর রহমানকে একাধিক পিস্তল দিয়ে গুলি করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তার পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়, যা এই হত্যাকাণ্ডের পাশবিকতা স্পষ্ট করে।

কেএমপির চাঞ্চল্যকর তথ্য:

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপকমিশনার তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, “আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এলাকার একটি গ্রুপের সঙ্গে তার (মাহবুবুর) দ্বন্দ্ব ছিল। এ ছাড়া মাদককাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার জনশ্রুতি আছে। আমরা সব বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করছি।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, “হত্যাকাণ্ডের সময়ে তিনজন সন্ত্রাসী ছিল। তাদের সবার হাতে পিস্তল ছিল। সেখানে মাহবুবকে লক্ষ্য করে তারা ৭ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। হত্যাকারীরা মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া দিয়ে মাহবুবের বাড়ির সামনে গিয়ে গুলি করে ৩০ মিনিটে হত্যাকাণ্ডটি সম্পন্ন করে তেলিগাতি হয়ে হাইওয়ে রাস্তা দিয়ে বের হয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যায়।” পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশের একাধিক সিসিক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।

পরিবারের অভিযোগ ও অন্যান্য ক্লু:

যুবদলের সাবেক নেতা মাহবুব হত্যার ঘটনায় তার বাবা আব্দুল করিম মোল্লা অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে গতকাল শনিবার দুপুরে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানান, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনার সময় মাহবুবের সঙ্গে থাকা ভ্যানচালক সোলেমানকে হেফাজতে নিলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহারের বর্ণনার পাশাপাশি এলাকায় মাদক কারবার ও আধিপত্য বিস্তারের বিরোধ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেওয়া, উঠতি চরমপন্থি কানেকশন এবং কুয়েটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরোধসহ একাধিক ক্লু সামনে রেখে মাঠে নেমেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও দৌলতপুর থানা পুলিশের একাধিক টিম।

স্ত্রীর বিস্ফোরক অভিযোগ:

মাহবুবের স্ত্রী এরিনা সুলতানা বলেন, “মানিকতলায় বিএনপির সুধীসমাবেশে হামলার ঘটনা নিয়ে মাহবুবকে হুমকি দেওয়া হতো। মাহবুবের এক বন্ধু ও স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির ওই মামলার বাদী ছিলেন। ওই মামলায় আসামি দেওয়া নিয়ে মাহবুবকে বাসার সামনে রিভলবার ঠেকিয়ে হুমকি দিয়ে গিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি অসুস্থ থাকায় মাহবুব আমার কাছে প্রথমে বিষয়টি লুকিয়েছে, কিন্তু আমি আমার বাবার কাছে শুনলে মাহবুব স্বীকার করে এবং বলে আমার কিছু হবে না, আমি কিছু করিনি, যা করেছি দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে করেছি। নিরপরাধ কাউকে মামলায় আসামি করা হয়নি। যাদের নাম বলেছিল তাদের নাম আমি এখনই বলার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় নেই।”

স্থানীয়দের দাবি:

স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় মাদক কারবার ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই এলাকারই আরেকটি গ্রুপের সঙ্গে মাহবুবুবের দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘদিনের। কুয়েটের টেন্ডার সিন্ডিকেট, মাদক ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মহেশ্বরপাশা, তেলিগাতী ও কুয়েট এলাকায় কয়েকটি গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মহেশ্বরপাশা খানা বাড়ি এলাকায় একটি বাড়ি দখল নিয়ে মাহবুবের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী সাহেদের। পরে বিএনপির সুধীসমাবেশে হামলার ঘটনায় সাহেদকে ২০ নম্বর আসামি করা হয়।

একজন যুবদল নেতা বলেন, “৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপির সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে বিশেষ সখ্য এবং উঠতি চরমপন্থি এক নেতার ভাই হওয়ায় মাহবুব ছিল বেশ বেপরোয়া। হত্যাকাণ্ডের সময় যে গাড়িটি মাহবুব নিজের গাড়ি উল্লেখ করে পরিষ্কার করছিল, সেটিও স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাহিদের কাছ থেকে জোর করে দখল নেওয়া।” তবে মাহবুবের চাচাতো ভাই আশরাফুল বলেন, “জাহিদ ভাই যুবলীগ করতেন। কিন্তু আমাদের এলাকার মানুষ হওয়ায় জাহিদ ভাই মাহবুব ভাইয়ের কাছে গাড়িটি বন্ধক রাখেন। সে হিসেবে মাহবুব ভাই গত ১৫ দিন ধরে গাড়িটি চালাত।”

পুলিশের একাধিক টিম মাঠে থাকলেও খুনিদের এখনো আটক করতে না পারায় জনমনে প্রশ্ন বাড়ছে। কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) আবু সালেহ মোহাম্মদ রায়হান জানিয়েছেন, “আমরা অনেক বিষয় সামনে নিয়ে কাজ করছি। খুলনায় আগে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে তার সঙ্গে এটার প্যাটার্ন একটু আলাদা। একাধিক পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়েছে এবং মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। আমরা সম্ভাব্য সব বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। এ ব্যাপারে এখনই বেশি তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে আশা করি খুব দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।”

মাহবুবের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। বাবাকে হারিয়ে তার দুই শিশুকন্যার আহাজারি থামছে না। ময়নাতদন্ত শেষে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর মাহবুবের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে এশার নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচন এবং দোষীদের গ্রেপ্তার কি আদৌ সম্ভব হবে? সেটাই এখন দেখার বিষয়।