Hi

০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাকসু নির্বাচন ও ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর রাজনীতির ছায়া!

  • আপডেট : ০৩:৩৪:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৯৯ জন দেখেছে

ডাকসু নির্বাচন ও ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর রাজনীতির ছায়া!

ওমর ফারুক
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির জন্মভূমি। এখান থেকেই উত্থান ঘটেছে অসংখ্য জাতীয় নেতার, এখানেই রচিত হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ, এখান থেকেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শিখা জ্বলে উঠেছে বারবার। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন শুধু একটি ছাত্র সংসদের কার্যক্রম নয়, বরং এটি দেশের রাজনীতির একটি প্রতিরূপ।

২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী/উপজাতি তরুণ-তরুণীরা। বিশেষ করে হেমা চাকমা, যিনি অতীতে ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন, কিন্তু এখন হঠাৎ করেই ‘আদিবাসী অধিকার’-কেন্দ্রিক প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এই রূপান্তর কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অবস্থান নয়, বরং তা বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করছে।

হেমা চাকমার অতীত ও বর্তমান:
হেমা চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার ২নং চেঙ্গী ইউনিয়নের মেয়ে। তাঁর বাবা অনিল চন্দ্র চাকমা ছিলেন ইউপিডিএফ–সমর্থিত জনপ্রতিনিধি। অর্থাৎ তাঁর পারিবারিক উত্তরাধিকারের মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির প্রভাব বিদ্যমান।অতীতে হেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের ছাত্রী হিসেবে ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে কাজ করেছেন। ছাত্রলীগের মতো ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনে সক্রিয় থেকে তিনি মূলধারার রাজনীতির সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান বদলে গেছে। তিনি এখন ডাকসু নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন ‘আদিবাসী অধিকারের প্রতিনিধি’ হিসেবে। এখানেই জন্ম নিচ্ছে বড় প্রশ্ন—যিনি এতদিন শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, হঠাৎ করে তাঁর আদিবাসী প্রতিনিধিত্বের দাবি কি সত্যিই আদর্শিক রূপান্তর, নাকি এটি রাজনৈতিক সুবিধাবাদের কৌশল?

পাহাড়ি প্রার্থীদের নতুন সমীকরণ:
হেমা চাকমার পাশাপাশি এবারের ডাকসু নির্বাচনে আরও দুইজন পাহাড়ি নারী প্রার্থী রয়েছেন—
রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তংচঙ্গ্যা – জেএসএস ও এনসিপি সমর্থিত।
সুর্মী চাকমা – রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, যিনি ইউপিডিএফ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
এই তিনজন প্রার্থী প্রকাশ্যে নিজেদের ‘আদিবাসী প্রতিনিধি’ হিসেবে তুলে ধরছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পাহাড়ি পরিচয়, মিথ্যাচারমূলক বৈষম্য ইস্যু সামনে এনে সিমপ্যাথি দেখিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি নিছক নির্বাচন নয়—এটি পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের কৌশলের অংশ, যেখানে জাতীয় রাজনীতির ভেতরে এবং বিশেষত ছাত্ররাজনীতির মঞ্চে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বিতর্ক ও সমালোচনা:
হেমা চাকমার রাজনৈতিক রূপান্তরকে অনেকে সুবিধাবাদী মোড়লতন্ত্র বলে আখ্যা দিচ্ছেন। কারণ, এতদিন তিনি ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রনেত্রী তাঁর সমালোচনা করে লিখেছেন—“যিনি জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে রাজনীতি করেছেন, তিনি হঠাৎ আদিবাসী অধিকারের লড়াকু মুখ কীভাবে হয়ে গেলেন?”
একইসাথে ইতিহাসবিদরা মনে করিয়ে দেন যে, ১৯৭১ সালে চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। পাকিস্তান সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদূত ও মন্ত্রী পদে পুরস্কৃত করেছিল। এই ঐতিহাসিক বাস্তবতা চলমান রেখে চাকমা জনগোষ্ঠীরা একের পর এক ষড়যন্ত্র করছেন।

আদিবাসী বনাম উপজাতি: শব্দের রাজনীতি-
বাংলাদেশের সংবিধানে ‘উপজাতি’ শব্দ ব্যবহার করা হলেও, পাহাড়ি সংগঠনগুলো সবসময় নিজেদের আন্তর্জাতিক ‘আদিবাসী’ হিসেবে পরিচয় দেয়। এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সমর্থন ও এনজিও ফান্ডিংয়ের সুবিধা আদায় করে।
ডাকসু নির্বাচনে হেমা ও রুপাইয়ার মতো প্রার্থীরা যখন নিজেদের ‘আদিবাসী প্রতিনিধি’ বলে পরিচয় দেন, তখন সেটি কেবল একটি পরিচয় নয়—বরং একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার ও বিচ্ছিন্ন করার কৌশল। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও আর্থিক সুবিধা অর্জনের করে থাকে।

জাতীয় নিরাপত্তা ও নেপথ্যের আশঙ্কা:
পার্বত্য চট্টগ্রাম বহু দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সশস্ত্র সংঘাত ও আন্তর্জাতিক চাপের কেন্দ্রবিন্দুতে। এখন সেই রাজনীতির ছায়া যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির মঞ্চে প্রবেশ করে, তবে তা নিঃসন্দেহে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন: ছাত্রলীগ থেকে হঠাৎ মানবাধিকারমুখী স্লোগানে রূপান্তর জাতীয় রাজনীতির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

আদিবাসী শব্দের অপব্যবহার: আন্তর্জাতিক ফান্ডিং ও বিদেশি মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কৌশল।

পারিবারিক উত্তরাধিকার: ইউপিডিএফ বা জেএসএস–ঘনিষ্ঠ পরিবারের সন্তানরা রাজনীতিতে প্রবেশ করলে ভবিষ্যতে তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে সংগঠনের স্বার্থ রক্ষা হতে পারে।

ছাত্ররাজনীতির স্বচ্ছতা: আদর্শিক প্রতিশ্রুতির আড়ালে গোপন এজেন্ডা ঢুকে পড়লে ছাত্রসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বৃহত্তর প্রেক্ষাপট: ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই বাংলাদেশের রাজনীতির পরীক্ষাক্ষেত্র। এখান থেকেই তৈরি হয়েছেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, তোফায়েল আহমেদ, নুরুল হক নূরসহ অসংখ্য নেতা। তাই ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে কারা দাঁড়াচ্ছেন এবং তারা কোন এজেন্ডা নিয়ে আসছেন, সেটি জাতীয় রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপজাতি তরুণীরা যদি সত্যিই ছাত্রস্বার্থের প্রতিনিধি হতেন, তবে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্যের মধ্যে ধারাবাহিকতা থাকত। কিন্তু হঠাৎ রাজনৈতিক অবস্থান বদল এবং বিতর্কিত সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ডাকসু নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সীমিত ব্যাপার নয়। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং জাতীয় ঐক্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
হেমা চাকমা ও তাঁর মতো প্রার্থীরা কি সত্যিই ছাত্রসমাজের কল্যাণে কাজ করতে চান, নাকি তারা পাহাড়ি রাজনীতির নতুন কৌশল হিসেবে ক্যাম্পাসকে ব্যবহার করছেন—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। যদি ছাত্রসমাজ স্লোগান আর মুখোশ দেখে বিভ্রান্ত হয়, তবে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হবে গোটা জাতিকেই।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষায় ছাত্রদের দায়িত্ব ছিল—প্রার্থীর অতীত, বর্তমান ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার যাচাই করা। কারণ ছাত্রস্বার্থের নামে যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সুবিধাবাদী রাজনীতি প্রবেশ করে, তবে তা দেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। কথা-বার্তায় পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ পায়, এমন উপজাতি প্রার্থী সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়া উচিত ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম, ভারতের কিছু অংশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে একটি আলাদা রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে, আর এই ষড়যন্ত্র করছে তিন দেশে থাকা চাকমারা। ঢাকসু হোক আর প্রশাসন হোক এমন কিছু উগ্র চাকমাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়, যাতে দেশ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড সহজে বাস্তুবায়নের অংশ হিসেবে। সমতল সুশীল পাবলিকের দেশপ্রেম অনুপস্থিতের কারণে তারা এইসব প্লান মাফিক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বুঝার বোধগম্যতা অর্থের বিনিময় হয়েছে। তাই সকল বাধা অতিক্রম করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সময় থাকতেই প্রতিহত করা সচেতন নাগরিকদের বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

লেখক সম্পর্কে তথ্য

পলাতক হাসিনার জন্মদিন পালন ও গোপন বৈঠক, কলেজ অধ্যক্ষ বেলাল গ্রেফতার

ডাকসু নির্বাচন ও ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর রাজনীতির ছায়া!

আপডেট : ০৩:৩৪:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডাকসু নির্বাচন ও ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর রাজনীতির ছায়া!

ওমর ফারুক
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির জন্মভূমি। এখান থেকেই উত্থান ঘটেছে অসংখ্য জাতীয় নেতার, এখানেই রচিত হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ, এখান থেকেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শিখা জ্বলে উঠেছে বারবার। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন শুধু একটি ছাত্র সংসদের কার্যক্রম নয়, বরং এটি দেশের রাজনীতির একটি প্রতিরূপ।

২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী/উপজাতি তরুণ-তরুণীরা। বিশেষ করে হেমা চাকমা, যিনি অতীতে ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন, কিন্তু এখন হঠাৎ করেই ‘আদিবাসী অধিকার’-কেন্দ্রিক প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এই রূপান্তর কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অবস্থান নয়, বরং তা বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করছে।

হেমা চাকমার অতীত ও বর্তমান:
হেমা চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার ২নং চেঙ্গী ইউনিয়নের মেয়ে। তাঁর বাবা অনিল চন্দ্র চাকমা ছিলেন ইউপিডিএফ–সমর্থিত জনপ্রতিনিধি। অর্থাৎ তাঁর পারিবারিক উত্তরাধিকারের মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির প্রভাব বিদ্যমান।অতীতে হেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের ছাত্রী হিসেবে ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে কাজ করেছেন। ছাত্রলীগের মতো ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনে সক্রিয় থেকে তিনি মূলধারার রাজনীতির সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান বদলে গেছে। তিনি এখন ডাকসু নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন ‘আদিবাসী অধিকারের প্রতিনিধি’ হিসেবে। এখানেই জন্ম নিচ্ছে বড় প্রশ্ন—যিনি এতদিন শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, হঠাৎ করে তাঁর আদিবাসী প্রতিনিধিত্বের দাবি কি সত্যিই আদর্শিক রূপান্তর, নাকি এটি রাজনৈতিক সুবিধাবাদের কৌশল?

পাহাড়ি প্রার্থীদের নতুন সমীকরণ:
হেমা চাকমার পাশাপাশি এবারের ডাকসু নির্বাচনে আরও দুইজন পাহাড়ি নারী প্রার্থী রয়েছেন—
রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তংচঙ্গ্যা – জেএসএস ও এনসিপি সমর্থিত।
সুর্মী চাকমা – রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, যিনি ইউপিডিএফ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
এই তিনজন প্রার্থী প্রকাশ্যে নিজেদের ‘আদিবাসী প্রতিনিধি’ হিসেবে তুলে ধরছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পাহাড়ি পরিচয়, মিথ্যাচারমূলক বৈষম্য ইস্যু সামনে এনে সিমপ্যাথি দেখিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি নিছক নির্বাচন নয়—এটি পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের কৌশলের অংশ, যেখানে জাতীয় রাজনীতির ভেতরে এবং বিশেষত ছাত্ররাজনীতির মঞ্চে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বিতর্ক ও সমালোচনা:
হেমা চাকমার রাজনৈতিক রূপান্তরকে অনেকে সুবিধাবাদী মোড়লতন্ত্র বলে আখ্যা দিচ্ছেন। কারণ, এতদিন তিনি ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রনেত্রী তাঁর সমালোচনা করে লিখেছেন—“যিনি জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে রাজনীতি করেছেন, তিনি হঠাৎ আদিবাসী অধিকারের লড়াকু মুখ কীভাবে হয়ে গেলেন?”
একইসাথে ইতিহাসবিদরা মনে করিয়ে দেন যে, ১৯৭১ সালে চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। পাকিস্তান সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদূত ও মন্ত্রী পদে পুরস্কৃত করেছিল। এই ঐতিহাসিক বাস্তবতা চলমান রেখে চাকমা জনগোষ্ঠীরা একের পর এক ষড়যন্ত্র করছেন।

আদিবাসী বনাম উপজাতি: শব্দের রাজনীতি-
বাংলাদেশের সংবিধানে ‘উপজাতি’ শব্দ ব্যবহার করা হলেও, পাহাড়ি সংগঠনগুলো সবসময় নিজেদের আন্তর্জাতিক ‘আদিবাসী’ হিসেবে পরিচয় দেয়। এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সমর্থন ও এনজিও ফান্ডিংয়ের সুবিধা আদায় করে।
ডাকসু নির্বাচনে হেমা ও রুপাইয়ার মতো প্রার্থীরা যখন নিজেদের ‘আদিবাসী প্রতিনিধি’ বলে পরিচয় দেন, তখন সেটি কেবল একটি পরিচয় নয়—বরং একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার ও বিচ্ছিন্ন করার কৌশল। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও আর্থিক সুবিধা অর্জনের করে থাকে।

জাতীয় নিরাপত্তা ও নেপথ্যের আশঙ্কা:
পার্বত্য চট্টগ্রাম বহু দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সশস্ত্র সংঘাত ও আন্তর্জাতিক চাপের কেন্দ্রবিন্দুতে। এখন সেই রাজনীতির ছায়া যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির মঞ্চে প্রবেশ করে, তবে তা নিঃসন্দেহে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন: ছাত্রলীগ থেকে হঠাৎ মানবাধিকারমুখী স্লোগানে রূপান্তর জাতীয় রাজনীতির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

আদিবাসী শব্দের অপব্যবহার: আন্তর্জাতিক ফান্ডিং ও বিদেশি মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কৌশল।

পারিবারিক উত্তরাধিকার: ইউপিডিএফ বা জেএসএস–ঘনিষ্ঠ পরিবারের সন্তানরা রাজনীতিতে প্রবেশ করলে ভবিষ্যতে তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে সংগঠনের স্বার্থ রক্ষা হতে পারে।

ছাত্ররাজনীতির স্বচ্ছতা: আদর্শিক প্রতিশ্রুতির আড়ালে গোপন এজেন্ডা ঢুকে পড়লে ছাত্রসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বৃহত্তর প্রেক্ষাপট: ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই বাংলাদেশের রাজনীতির পরীক্ষাক্ষেত্র। এখান থেকেই তৈরি হয়েছেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, তোফায়েল আহমেদ, নুরুল হক নূরসহ অসংখ্য নেতা। তাই ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে কারা দাঁড়াচ্ছেন এবং তারা কোন এজেন্ডা নিয়ে আসছেন, সেটি জাতীয় রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপজাতি তরুণীরা যদি সত্যিই ছাত্রস্বার্থের প্রতিনিধি হতেন, তবে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্যের মধ্যে ধারাবাহিকতা থাকত। কিন্তু হঠাৎ রাজনৈতিক অবস্থান বদল এবং বিতর্কিত সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ডাকসু নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সীমিত ব্যাপার নয়। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং জাতীয় ঐক্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
হেমা চাকমা ও তাঁর মতো প্রার্থীরা কি সত্যিই ছাত্রসমাজের কল্যাণে কাজ করতে চান, নাকি তারা পাহাড়ি রাজনীতির নতুন কৌশল হিসেবে ক্যাম্পাসকে ব্যবহার করছেন—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। যদি ছাত্রসমাজ স্লোগান আর মুখোশ দেখে বিভ্রান্ত হয়, তবে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হবে গোটা জাতিকেই।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষায় ছাত্রদের দায়িত্ব ছিল—প্রার্থীর অতীত, বর্তমান ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার যাচাই করা। কারণ ছাত্রস্বার্থের নামে যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সুবিধাবাদী রাজনীতি প্রবেশ করে, তবে তা দেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। কথা-বার্তায় পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ পায়, এমন উপজাতি প্রার্থী সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়া উচিত ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম, ভারতের কিছু অংশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে একটি আলাদা রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে, আর এই ষড়যন্ত্র করছে তিন দেশে থাকা চাকমারা। ঢাকসু হোক আর প্রশাসন হোক এমন কিছু উগ্র চাকমাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়, যাতে দেশ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড সহজে বাস্তুবায়নের অংশ হিসেবে। সমতল সুশীল পাবলিকের দেশপ্রেম অনুপস্থিতের কারণে তারা এইসব প্লান মাফিক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বুঝার বোধগম্যতা অর্থের বিনিময় হয়েছে। তাই সকল বাধা অতিক্রম করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সময় থাকতেই প্রতিহত করা সচেতন নাগরিকদের বুদ্ধিমানের কাজ হবে।