Hi

১০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইহুদি জাতি: কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি


ইহুদি জাতি: কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি

ইহুদি জাতি এক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জাতি, যাদের ওপর আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবি এবং দিয়েছেন অফুরন্ত নিয়ামত। কিন্তু তাদের অবাধ্যতা, কৃতঘ্নতা, নবি হত্যার স্পর্ধা, ধোঁকাবাজি এবং চক্রান্তের প্রবণতা তাদেরকে করেছে আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত ও অভিশপ্ত জাতি। কুরআনুল কারিম ও হাদিসে এই জাতির ধ্বংস, অপমান ও অভিশাপের বহু বর্ণনা পাওয়া যায়।

আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকৃতি ও অকৃতজ্ঞতা

আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “হে বনি ইসরাইল! আমি তোমাদের ওপর যে অনুগ্রহ করেছি তা স্মরণ করো।” (সুরা বাকারা: ৪৭)। আল্লাহ তাদের মিসর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, আকাশ থেকে মান্না ও সালওয়া দিয়েছেন, অথচ তারা এসব নিয়ামত অস্বীকার করেছে এবং অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

নবি হত্যাকারী জাতি

কুরআনে ইহুদিদের নবি হত্যার প্রবণতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “তারা নবিদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে।” (সুরা নিসা: ১৫৫)। তারা জাকারিয়া (আ.), ইয়াহইয়া (আ.) সহ অনেক নবিকে শহীদ করেছে। এমনকি মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যার চেষ্টাও করেছে। (সুরা নিসা: ১৫৭)।

আল্লাহর লানত ও অভিশাপ

তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আল্লাহ তাদের ওপর লানত দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এজন্য আমি তাদের ওপর লানত দিয়েছি এবং তাদের অন্তর কঠিন করে দিয়েছি।” (সুরা মায়েদা: ১৩)। দাউদ (আ.) ও মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.)-এর ভাষাতেও বনি ইসরাঈলের কাফিরদেরকে অভিশপ্ত করা হয়েছে। “বনি ইসরাইলের কাফিরদেরকে দাউদ ও মরিয়ম পুত্র ঈসা আ. ভাষায় অভিশপ্ত করা হয়েছে।” (সুরা আল-মায়েদা: ৭৮)। তারা এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা নবিদের জবান দিয়ে তাদের ওপর অভিশাপ দিয়েছেন।

বানর ও শূকর রূপে রূপান্তর

ইহুদিদের অবাধ্যতার ফলস্বরূপ তাদের রূপান্তরের ঘটনাও কুরআনে বর্ণিত আছে। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেছেন, “তাদের বলেছিলাম তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও।” (সুরা বাকারা: ৬৫)। অন্য আয়াতে, “আল্লাহ তাদের কাউকে বানর এবং কাউকে শূকর বানিয়ে দিয়েছেন।” (সুরা মায়েদা: ৬০)। তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, ফলে তাদের আকার ও আচরণ বিকৃত করে দেওয়া হয়।

চক্রান্ত, ধোঁকাবাজি ও স্বার্থপরতা

ইহুদি জাতির একটি বৈশিষ্ট্য হলো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করা এবং চক্রান্তের আশ্রয় নেওয়া। “তারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে।” (সুরা মায়েদা: ৬৪)। এবং “তারা কৌশল করে, কিন্তু আল্লাহ তাদের সব চক্রান্ত জানেন।” (সুরা ইবরাহিম: ৪৬)। ইতিহাসজুড়ে ইহুদিরা ষড়যন্ত্র, ব্যাংকিং ব্যবস্থা দিয়ে দুনিয়াকে কব্জা করা, সমাজকে বিভক্ত করা, যুদ্ধ বাঁধানোর মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

হাদিসে ভবিষ্যৎ ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী

রাসুল (সা.) ইহুদি জাতির ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেন, “কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না মুসলমানরা ইহুদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে।” (সহিহ মুসলিম: ২৯২২)। এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ইহুদি জাতি এক সময় চূড়ান্তভাবে মুসলমানদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। ইহুদিরাই হবে দাজ্জালের অনুসারী। “দাজ্জালের অনুসরণ করবে ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইহুদি।” (সহিহ মুসলিম: ২৯৪৪)।

বর্তমান দুনিয়ায় ইহুদিদের ষড়যন্ত্র ও ফাসাদ

বর্তমান বিশ্বে ইহুদিদের প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়:

  • আর্থিক নিয়ন্ত্রণ: বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ফেডারেল রিজার্ভ, রথচাইল্ড পরিবার, রকফেলার প্রভৃতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পরিবার ইহুদিদের হাতে নিয়ন্ত্রিত।
  • মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ: বিবিসি, সিএনএন, হলিউড, নেটফ্লিক্স-এর মতো অধিকাংশ প্রভাবশালী মিডিয়া ইহুদি মালিকানায়।
  • অশ্লীলতা ও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানো: ইহুদিরাই বিশ্বে নগ্নতা, লিবারেলিজম, নাস্তিকতা এবং ইসলাম-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
  • ফিলিস্তিনে হত্যা ও গণহত্যা: জায়নিস্ট ইসরায়েল ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনে মুসলিম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানেও তারা এই আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে এবং নতুন করে ইরানের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে।

ইহুদি জাতি এমন এক জাতি যারা আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনি, নবিদের হত্যা করেছে, আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে, চুক্তি ভঙ্গকারী এবং বিশ্বজুড়ে ফাসাদ ছড়িয়েছে। ফলস্বরূপ, তারা হয়েছে লানতগ্রস্ত, অভিশপ্ত, এবং আল্লাহর ক্রোধের শিকার। আজকের বিশ্বে তাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ তাদের সাময়িক শক্তি হলেও, ইসলামি ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য।

লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

জামালগঞ্জে ৪ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ: ১১ কৃষক পেলেন পৌনে ১৮ লাখ টাকা

ইহুদি জাতি: কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি

আপডেট : ০৫:১০:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

ইহুদি জাতি: কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি

ইহুদি জাতি এক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জাতি, যাদের ওপর আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবি এবং দিয়েছেন অফুরন্ত নিয়ামত। কিন্তু তাদের অবাধ্যতা, কৃতঘ্নতা, নবি হত্যার স্পর্ধা, ধোঁকাবাজি এবং চক্রান্তের প্রবণতা তাদেরকে করেছে আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত ও অভিশপ্ত জাতি। কুরআনুল কারিম ও হাদিসে এই জাতির ধ্বংস, অপমান ও অভিশাপের বহু বর্ণনা পাওয়া যায়।

আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকৃতি ও অকৃতজ্ঞতা

আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “হে বনি ইসরাইল! আমি তোমাদের ওপর যে অনুগ্রহ করেছি তা স্মরণ করো।” (সুরা বাকারা: ৪৭)। আল্লাহ তাদের মিসর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, আকাশ থেকে মান্না ও সালওয়া দিয়েছেন, অথচ তারা এসব নিয়ামত অস্বীকার করেছে এবং অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

নবি হত্যাকারী জাতি

কুরআনে ইহুদিদের নবি হত্যার প্রবণতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “তারা নবিদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে।” (সুরা নিসা: ১৫৫)। তারা জাকারিয়া (আ.), ইয়াহইয়া (আ.) সহ অনেক নবিকে শহীদ করেছে। এমনকি মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যার চেষ্টাও করেছে। (সুরা নিসা: ১৫৭)।

আল্লাহর লানত ও অভিশাপ

তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আল্লাহ তাদের ওপর লানত দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এজন্য আমি তাদের ওপর লানত দিয়েছি এবং তাদের অন্তর কঠিন করে দিয়েছি।” (সুরা মায়েদা: ১৩)। দাউদ (আ.) ও মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.)-এর ভাষাতেও বনি ইসরাঈলের কাফিরদেরকে অভিশপ্ত করা হয়েছে। “বনি ইসরাইলের কাফিরদেরকে দাউদ ও মরিয়ম পুত্র ঈসা আ. ভাষায় অভিশপ্ত করা হয়েছে।” (সুরা আল-মায়েদা: ৭৮)। তারা এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা নবিদের জবান দিয়ে তাদের ওপর অভিশাপ দিয়েছেন।

বানর ও শূকর রূপে রূপান্তর

ইহুদিদের অবাধ্যতার ফলস্বরূপ তাদের রূপান্তরের ঘটনাও কুরআনে বর্ণিত আছে। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেছেন, “তাদের বলেছিলাম তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও।” (সুরা বাকারা: ৬৫)। অন্য আয়াতে, “আল্লাহ তাদের কাউকে বানর এবং কাউকে শূকর বানিয়ে দিয়েছেন।” (সুরা মায়েদা: ৬০)। তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, ফলে তাদের আকার ও আচরণ বিকৃত করে দেওয়া হয়।

চক্রান্ত, ধোঁকাবাজি ও স্বার্থপরতা

ইহুদি জাতির একটি বৈশিষ্ট্য হলো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করা এবং চক্রান্তের আশ্রয় নেওয়া। “তারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে।” (সুরা মায়েদা: ৬৪)। এবং “তারা কৌশল করে, কিন্তু আল্লাহ তাদের সব চক্রান্ত জানেন।” (সুরা ইবরাহিম: ৪৬)। ইতিহাসজুড়ে ইহুদিরা ষড়যন্ত্র, ব্যাংকিং ব্যবস্থা দিয়ে দুনিয়াকে কব্জা করা, সমাজকে বিভক্ত করা, যুদ্ধ বাঁধানোর মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

হাদিসে ভবিষ্যৎ ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী

রাসুল (সা.) ইহুদি জাতির ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেন, “কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না মুসলমানরা ইহুদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে।” (সহিহ মুসলিম: ২৯২২)। এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ইহুদি জাতি এক সময় চূড়ান্তভাবে মুসলমানদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। ইহুদিরাই হবে দাজ্জালের অনুসারী। “দাজ্জালের অনুসরণ করবে ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইহুদি।” (সহিহ মুসলিম: ২৯৪৪)।

বর্তমান দুনিয়ায় ইহুদিদের ষড়যন্ত্র ও ফাসাদ

বর্তমান বিশ্বে ইহুদিদের প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়:

  • আর্থিক নিয়ন্ত্রণ: বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ফেডারেল রিজার্ভ, রথচাইল্ড পরিবার, রকফেলার প্রভৃতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পরিবার ইহুদিদের হাতে নিয়ন্ত্রিত।
  • মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ: বিবিসি, সিএনএন, হলিউড, নেটফ্লিক্স-এর মতো অধিকাংশ প্রভাবশালী মিডিয়া ইহুদি মালিকানায়।
  • অশ্লীলতা ও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানো: ইহুদিরাই বিশ্বে নগ্নতা, লিবারেলিজম, নাস্তিকতা এবং ইসলাম-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
  • ফিলিস্তিনে হত্যা ও গণহত্যা: জায়নিস্ট ইসরায়েল ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনে মুসলিম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানেও তারা এই আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে এবং নতুন করে ইরানের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে।

ইহুদি জাতি এমন এক জাতি যারা আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনি, নবিদের হত্যা করেছে, আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে, চুক্তি ভঙ্গকারী এবং বিশ্বজুড়ে ফাসাদ ছড়িয়েছে। ফলস্বরূপ, তারা হয়েছে লানতগ্রস্ত, অভিশপ্ত, এবং আল্লাহর ক্রোধের শিকার। আজকের বিশ্বে তাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ তাদের সাময়িক শক্তি হলেও, ইসলামি ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য।