নেপালে গণবিক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে জেন-জি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দেশটির সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ভেঙে পড়া, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অকার্যকর হয়ে পড়া এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অচল হয়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট এই শূন্যতায় কেবল নেপালি সেনাবাহিনীর ওপরই জনগণের আস্থা টিকে থাকে। এশিয়া ফাউন্ডেশনের ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, নেপালের ৯১ শতাংশ মানুষ সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখে।
সেনাপ্রধানের চ্যালেঞ্জ
বিক্ষোভের শুরু থেকেই নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেলকে তিনটি প্রধান দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে:
- স্থিতিশীলতা বজায় রাখা: সংবিধান ও আইনের মধ্যে থেকে দেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
- আলোচনার পথ তৈরি: রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেলকে সহযোগিতা করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা।
- সংবিধান রক্ষা: সংবিধান রক্ষা করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করা।
বিতর্ক ও প্রতীকী বার্তা
সেনা মোতায়েনে দুই দিনের বিলম্ব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়, কারণ এই দেরির ফলে আন্দোলনকারীরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো দখল করতে সক্ষম হয়েছিল। সংবিধান অনুযায়ী, সেনা মোতায়েনের জন্য প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সুপারিশ প্রয়োজন।
সেনাপ্রধান যখন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন, তখন তার পেছনে নেপালি সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহের ছবি ছিল। কেউ কেউ এটিকে রাজতন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত হিসেবে দেখলেও, সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে এটি কেবল ঐতিহ্যের প্রতীক, কোনো রাজনৈতিক বার্তা নয়।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
এই ধরনের বিদ্রোহ ভবিষ্যতে আবার দেখা দিতে পারে। তাই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে—সংবিধান রক্ষা, জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তবে সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে যেন তারা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করে জনগণের আস্থা নষ্ট না করে, আবার অতিরিক্ত সংযম দেখিয়ে রাষ্ট্রকে ঝুঁকিতে না ফেলে।