প্রদত্ত লেখাটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং পীরে কামিল, শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর প্রতি একটি গভীর এবং আবেগঘন শ্রদ্ধাঞ্জলি। এটি রচনা করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অফ গভর্নরস-এর গভর্নর, ঢাকার নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং শান্তিনগর আমিনবাগ জামে মসজিদের খতীব, ডঃ আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী। লেখাটি হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সিলেট-এর মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে।
এই স্মৃতিচারণে লেখক আল্লামা দুবাগী (রাহঃ)-এর ইন্তেকালে মুসলিম উম্মাহর যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা তুলে ধরেছেন এবং তাঁর বিশাল কর্মময় জীবনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।
আল্লামা মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রাহঃ)-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও অবদান:
- আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম: আল্লামা দুবাগী (রাহঃ) ছিলেন একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মুহাক্কিক আলেম, মুফতি, মুনাযির এবং শরীয়ত ও তরিকতের একজন মহান রাহবার। ১৯২৯ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার দুবাগ গ্রামে তাঁর জন্ম।
- বিলেতে ইসলাম প্রচার: জীবনের এক বিশাল অংশ তিনি যুক্তরাজ্যের মাটিতে ইসলাম প্রচারে অতিবাহিত করেন। সেখানে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় ‘আনজুমানে আল ইসলাহ ইউ.কে’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
- ইলমি খেদমত ও রচনাবলী: প্রবাসের শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি লেখালেখি, গবেষণা এবং দরস-তাদরিসের কাজ অব্যাহত রাখেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো, বিশেষ করে বাংলা ভাষায় লিখিত “মীলাদে বেনযীর”, বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল বিশাল এবং জ্ঞানসাধনার প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ছিল অতুলনীয়।
- প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা: যুক্তরাজ্যে মাদরাসা, মসজিদ ও খানকাহ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে লেস্টার শহরের দারুস সালাম মসজিদের খতীব হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন।
- ব্যক্তিত্ব ও আখলাক: লেখক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বর্ণনা করেন যে, আল্লামা দুবাগী (রাহঃ) ছিলেন নবী পাক (ﷺ)-এর একজন খাঁটি অনুসারী। তাঁর জীবনযাত্রা, বিনয়, এবং মেহমানদারি ছিল সলফে সালেহীনের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
লেখকের অনুভূতি:
ডঃ কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী উল্লেখ করেছেন যে, আল্লামা দুবাগী (রাহঃ)-এর লিখিত গ্রন্থ পাঠ করে তিনি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং লন্ডন সফরের সময় তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে ফয়েজ ও বরকত লাভে ধন্য হন। আল্লামা দুবাগীর মৃত্যুতে লেখকসহ দেশ-বিদেশের অগণিত ইসলামি স্কলার ও সাধারণ মুসলমান শোকাহত।
উপসংহার:
এই মহা মনিষীর মৃত্যুতে মুসলিম উম্মাহ একজন পথপ্রদর্শককে হারিয়েছে। তাঁর রেখে যাওয়া ইলমি আমানত এবং প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো যুগ যুগ ধরে ইসলামের আলো ছড়াবে বলে আশা করা যায়। লেখক মরহুমের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম এবং তাঁর সন্তানদের জন্য এই খেদমতসমূহ সঠিকভাবে পরিচালনার তাওফিক কামনা করে লেখাটির ইতি টানেন।