Hi

১০:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ড. ইউনূসের মন্তব্যের জের: উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বিকল্প মহাসড়ক বানাচ্ছে ভারত

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের মার্চ মাসে চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এই অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশকে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি চীনা অর্থনীতির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্যের পরই ভারত নড়েচড়ে বসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর যেন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়, সেই লক্ষ্যে মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত চার লেনের একটি নতুন মহাসড়ক তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর শনিবারের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এই মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল)-এর এক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, ড. ইউনূসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এবং বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতেই তারা এই নতুন মহাসড়ক নির্মাণ করবেন। ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি হবে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর প্রথম দ্রুতগতির মহাসড়ক। এর মাধ্যমে মূলত কলকাতার সঙ্গে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে সমুদ্রপথের একটি বিকল্প তৈরি হবে। তবে এর ফলে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমলেও, ভারতকে মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতার সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কালাদান মাল্টি মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টে অর্থায়ন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে রাখাইনের সিত্তে নদী বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এরপর সিত্তে বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের পালেতওয়াকে অভ্যন্তরীণ নদীপথের মাধ্যমে এবং সেখান থেকে ভারতের মিজোরামের জোরিনপুইকে সড়কপথে সংযুক্ত করা হবে। এর পাশাপাশি মিজোরামের জোরিনপুই-লংটলাই-আইজলে আরও অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণ করে পুরো অঞ্চলটিকে একটি সমন্বিত নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।

ভারতের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শিলং-শিলচরের মহাসড়কটি উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রথম দ্রুতগতির সড়ক হওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ি অঞ্চলে প্রথম কোনো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প হতে চলেছে। শিলচর মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং আসামের বারাক উপত্যকার প্রবেশদ্বার হওয়ায় এই মহাসড়কটি ওই অঞ্চলের জন্য একটি বিশাল সংযোগ স্থাপন করবে। তিনি যোগ করেন, কালাদান প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা ও ভিজাগ থেকে পণ্য উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পৌঁছানো সহজ হবে এবং এতে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এই দ্রুতগতির করিডোর সড়কের মাধ্যমে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে, যা ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর যোগাযোগের একমাত্র সরাসরি পথ হলো শিলিগুঁড়ি করিডর, যা ‘চিকেন নেক’ নামেও পরিচিত। এছাড়া মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করেও ভারত তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রবেশ করতে পারে। তবে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ভারতের নৌ চলাচল সীমিত করায়, ভারত ও মিয়ানমার কালাদান প্রকল্পকেই বিকল্প হিসেবে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিলং-শিলচরের মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই মিয়ানমারের মাধ্যমে কলকাতা ও উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যকে যুক্ত করার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হবে।

তবে শিলং-শিলচরের এই মহাসড়ক নির্মাণ ভারতের জন্য মোটেও সহজ হবে না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নির্মাণ কাজ চলাকালীন ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ ২২ হাজার ৮৬৪ কোটি রুপির এই মহাসড়কটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

হাজারো শঙ্খর ধ্বনি ও প্রদীপের আলোয় বিতর্কিত পুজোর– প্রতিমার নিরঞ্জন শোভাযাত্রা।

ড. ইউনূসের মন্তব্যের জের: উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বিকল্প মহাসড়ক বানাচ্ছে ভারত

আপডেট : ০৪:৫৩:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের মার্চ মাসে চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এই অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশকে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি চীনা অর্থনীতির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্যের পরই ভারত নড়েচড়ে বসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর যেন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়, সেই লক্ষ্যে মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত চার লেনের একটি নতুন মহাসড়ক তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর শনিবারের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এই মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল)-এর এক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, ড. ইউনূসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এবং বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতেই তারা এই নতুন মহাসড়ক নির্মাণ করবেন। ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি হবে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর প্রথম দ্রুতগতির মহাসড়ক। এর মাধ্যমে মূলত কলকাতার সঙ্গে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে সমুদ্রপথের একটি বিকল্প তৈরি হবে। তবে এর ফলে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমলেও, ভারতকে মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতার সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কালাদান মাল্টি মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টে অর্থায়ন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে রাখাইনের সিত্তে নদী বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এরপর সিত্তে বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের পালেতওয়াকে অভ্যন্তরীণ নদীপথের মাধ্যমে এবং সেখান থেকে ভারতের মিজোরামের জোরিনপুইকে সড়কপথে সংযুক্ত করা হবে। এর পাশাপাশি মিজোরামের জোরিনপুই-লংটলাই-আইজলে আরও অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণ করে পুরো অঞ্চলটিকে একটি সমন্বিত নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।

ভারতের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শিলং-শিলচরের মহাসড়কটি উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রথম দ্রুতগতির সড়ক হওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ি অঞ্চলে প্রথম কোনো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প হতে চলেছে। শিলচর মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং আসামের বারাক উপত্যকার প্রবেশদ্বার হওয়ায় এই মহাসড়কটি ওই অঞ্চলের জন্য একটি বিশাল সংযোগ স্থাপন করবে। তিনি যোগ করেন, কালাদান প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা ও ভিজাগ থেকে পণ্য উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পৌঁছানো সহজ হবে এবং এতে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এই দ্রুতগতির করিডোর সড়কের মাধ্যমে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে, যা ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর যোগাযোগের একমাত্র সরাসরি পথ হলো শিলিগুঁড়ি করিডর, যা ‘চিকেন নেক’ নামেও পরিচিত। এছাড়া মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করেও ভারত তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রবেশ করতে পারে। তবে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ভারতের নৌ চলাচল সীমিত করায়, ভারত ও মিয়ানমার কালাদান প্রকল্পকেই বিকল্প হিসেবে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিলং-শিলচরের মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই মিয়ানমারের মাধ্যমে কলকাতা ও উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যকে যুক্ত করার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হবে।

তবে শিলং-শিলচরের এই মহাসড়ক নির্মাণ ভারতের জন্য মোটেও সহজ হবে না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নির্মাণ কাজ চলাকালীন ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ ২২ হাজার ৮৬৪ কোটি রুপির এই মহাসড়কটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে।