Hi

১০:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অদৃশ্য ষড়যন্ত্র, চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার ভারতীয় পরিকল্পনা?

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে গোপনে প্রবেশ করানো হচ্ছে বহু সংখ্যক সন্দেহভাজন ভারতীয় নাগরিককে। যদিও ভারত সরকার এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানো’ বলছে, তবে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে এই প্রক্রিয়া গোপনে এবং ঝুঁকিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, ভারতীয় প্রভাবশালী মিডিয়া হাউস ইন্ডিয়া ডট কমের একটি প্রতিবেদন নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনটিতে পরোক্ষভাবে চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্স অঞ্চল ‘বেলুচিস্তানের মতো বিচ্ছিন্ন হতে পারে’ বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য শুধু বিভ্রান্তিকর নয়, বরং ভারতীয় কূটনৈতিক ও মিডিয়া মহলে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।

ইন্ডিয়া ডট কম আরও দাবি করেছে যে চট্টগ্রামে ‘বিদেশিরা বসবাস করছে’, যা বাংলাদেশি বাঙালিদের ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করার একটি মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসন। এই ধরনের প্রচারণাকে তথ্যযুদ্ধ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা, যার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশে বিভ্রান্তি, ভয় ও বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং সরকারপন্থী মিডিয়া যৌথভাবে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে ‘অস্থিতিশীল রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত হয়। এর অংশ হিসেবেই বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে পরিচয়হীন ব্যক্তিদের পাঠানো হচ্ছে, যারা নতুন করে সন্ত্রাসবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদ উস্কে দিতে পারে।

ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং চট্টগ্রামকে একটি ‘জিও-স্ট্র্যাটেজিক লিঙ্ক’ হিসেবে বিবেচনা করছে, যা চীন-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতাকে ব্যাহত করতে ব্যবহার করা হতে পারে। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারলে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক মনোযোগ দেশের অভ্যন্তরে কেন্দ্রীভূত হবে এবং আন্তর্জাতিক জোট গঠনের সুযোগ কমে যাবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সরকার ইতোমধ্যে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে শুধুমাত্র সামরিক প্রতিরোধ যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি কৌশলগত মিডিয়া প্রতিরক্ষা গড়ে তোলাও জরুরি। ভারতের তথ্যযুদ্ধের মোকাবিলায় বাংলাদেশের উচিত একটি শক্তিশালী, তথ্যভিত্তিক ও বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালানো। একইসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়টি জাতিসংঘ ও আঞ্চলিক জোটগুলোতে উত্থাপন করা উচিত।

ইন্ডিয়া ডট কমের প্রতিবেদনটিকে নিছক সাংবাদিকতা না দেখে, মোদি সরকারের বাংলাদেশবিরোধী কৌশলের একটি সরাসরি স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখছেন অনেকে। বাংলাদেশ যদি এখনই সতর্ক না হয়, তবে ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম কেবল একটি ভৌগোলিক সংকট নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সমস্যায় পরিণত হতে পারে।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

হাজারো শঙ্খর ধ্বনি ও প্রদীপের আলোয় বিতর্কিত পুজোর– প্রতিমার নিরঞ্জন শোভাযাত্রা।

দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অদৃশ্য ষড়যন্ত্র, চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার ভারতীয় পরিকল্পনা?

আপডেট : ০৭:০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে গোপনে প্রবেশ করানো হচ্ছে বহু সংখ্যক সন্দেহভাজন ভারতীয় নাগরিককে। যদিও ভারত সরকার এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানো’ বলছে, তবে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে এই প্রক্রিয়া গোপনে এবং ঝুঁকিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, ভারতীয় প্রভাবশালী মিডিয়া হাউস ইন্ডিয়া ডট কমের একটি প্রতিবেদন নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনটিতে পরোক্ষভাবে চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্স অঞ্চল ‘বেলুচিস্তানের মতো বিচ্ছিন্ন হতে পারে’ বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য শুধু বিভ্রান্তিকর নয়, বরং ভারতীয় কূটনৈতিক ও মিডিয়া মহলে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।

ইন্ডিয়া ডট কম আরও দাবি করেছে যে চট্টগ্রামে ‘বিদেশিরা বসবাস করছে’, যা বাংলাদেশি বাঙালিদের ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করার একটি মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসন। এই ধরনের প্রচারণাকে তথ্যযুদ্ধ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা, যার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশে বিভ্রান্তি, ভয় ও বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং সরকারপন্থী মিডিয়া যৌথভাবে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে ‘অস্থিতিশীল রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত হয়। এর অংশ হিসেবেই বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে পরিচয়হীন ব্যক্তিদের পাঠানো হচ্ছে, যারা নতুন করে সন্ত্রাসবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদ উস্কে দিতে পারে।

ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং চট্টগ্রামকে একটি ‘জিও-স্ট্র্যাটেজিক লিঙ্ক’ হিসেবে বিবেচনা করছে, যা চীন-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতাকে ব্যাহত করতে ব্যবহার করা হতে পারে। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারলে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক মনোযোগ দেশের অভ্যন্তরে কেন্দ্রীভূত হবে এবং আন্তর্জাতিক জোট গঠনের সুযোগ কমে যাবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সরকার ইতোমধ্যে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে শুধুমাত্র সামরিক প্রতিরোধ যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি কৌশলগত মিডিয়া প্রতিরক্ষা গড়ে তোলাও জরুরি। ভারতের তথ্যযুদ্ধের মোকাবিলায় বাংলাদেশের উচিত একটি শক্তিশালী, তথ্যভিত্তিক ও বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালানো। একইসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়টি জাতিসংঘ ও আঞ্চলিক জোটগুলোতে উত্থাপন করা উচিত।

ইন্ডিয়া ডট কমের প্রতিবেদনটিকে নিছক সাংবাদিকতা না দেখে, মোদি সরকারের বাংলাদেশবিরোধী কৌশলের একটি সরাসরি স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখছেন অনেকে। বাংলাদেশ যদি এখনই সতর্ক না হয়, তবে ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম কেবল একটি ভৌগোলিক সংকট নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সমস্যায় পরিণত হতে পারে।