Hi

১২:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঠাকুরগাঁও টিটিসি’তে ড্রাইভিং লাইসেন্সের নামে ঘুষ: দুদক অনুসন্ধান চলমান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষোভ

ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’র (টিটিসি) বিরুদ্ধে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের নামে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার, ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয় দুদক এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছিল যে, টিটিসি প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে লাইসেন্স দেওয়ার নামে টাকা নিচ্ছে। এই খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও (ফেসবুক) নেটিজেন এবং প্রশিক্ষণার্থীরা প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান, খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক ফারুক হোসেন এবং অটোমোটিভ ট্রেডের প্রধান প্রশিক্ষক সাদেকুল ইসলামের চাকরিচ্যুতি ও আইনানুগ কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শামছুর রহমান টিটিসিতে যোগদানের পর থেকে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম চললেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এর আগেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রতিবাদ জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের আশীর্বাদে সব অনিয়ম ক্ষমা পেয়ে যায় এবং তিনি এখনো আগের মতোই অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। তারা জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবি জানান।

এরই মধ্যে, নিজের অনিয়ম ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বাঁচাতে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান তার নিজস্ব ফেসবুকে জেলার গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি লেখেন, “সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ঠাকুরগাঁও টিটিসির কয়েকজনের প্ররোচনায় অর্থের লোভে, কয়েকজন হলুদ সাংবাদিক ফেসবুক/অনলাইন পত্রিকায় সম্পূর্ণ মিথ্যে, বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও টিটিসির কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তির স্বার্থে আঘাত লাগায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য কয়েকজন হলুদ সাংবাদিক দিয়ে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ করাচ্ছে। তাদের গ্রুপের একজনকে বিএমইটি কর্তৃক তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে মানিকগঞ্জ টিটিসিতে কিছুদিন হলো বদলী করেছে।”

তিনি আরও লেখেন, “ড্রাইভিং কোর্সে প্রশিক্ষণার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানামতে সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং বানোয়াট। টিটিসি কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ ব্যতীত কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় না। অতএব, ড্রাইভিং লাইসেন্স বাবদ টিটিসির পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেয়ার প্রশ্ন তোলা বা টিটিসি কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”

তার এই মন্তব্যের পর গণমাধ্যমকর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তবে, গেল কয়েক বছর ধরে লাইসেন্স বাবদ প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে ২৫০০ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের নামে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছে থেকে ৪ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। ভারি যানবাহনের জন্য ৩৫০০ টাকা ও হালকা যানের জন্য ২৫০০ টাকা খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক ফারুক হোসেন নেন। অভিযোগ, যারা টাকা দিয়েছে তারাই শুধু লাইসেন্স প্রাপ্তি পরীক্ষায় পাস করেছে এবং যারা দেয়নি তাদের অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।

এই ঘটনায় প্রতিবাদস্বরূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) টিটিসি’র ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন একটি পোস্ট করেন। এতে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অনেকে নড়েচড়ে বসেন এবং খবরটি প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোয় প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে গত ১৭ মে শোকজ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান।

এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিজেদের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতেই তারা সকলে একত্রিত হয়ে তাকে শোকজ করেছে। তবে তিনি যা সত্য তাই বলেছেন এবং দুদক তদন্ত করলেই সব বেড়িয়ে আসবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, “ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি’র) ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থী তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন এবং তাদের প্রত্যেকের কাছে ২৫০০ টাকা লাইসেন্স দেওয়া হবে মর্মে টিটিসি কর্তৃপক্ষ আদায় করে। এরইমধ্যে দুদকের কর্মকর্তারা তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নেমেছে।” তিনি আরও বলেন, “লাইসেন্স দেওয়া বাবদ প্রশিক্ষণার্থীর কাছে টাকা নিয়েছে টিটিসি কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগে দুদক কাজ করছে। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।”

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সংবাদ প্রচার ও দুদকের বক্তব্যের পর কৌশলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার নামে কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি মর্মে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে একটি লিখিত নেন। অন্যদিকে, কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী অভিযোগ করে জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ঘুষ না দিলে তাদের অকৃতকার্য করা হতো। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এটাও নিয়মিত দেন না কর্তৃপক্ষ। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ২/৩ লিটার তেল বরাদ্দ থাকলেও টিটিসি কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য আধা লিটার তেলও খরচ করে না। তারা প্রতিটি কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছে যা দেখার কেউ নেই। তাদের মতে, এখানে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে হরিলুট চলে এবং প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কিভাবে হয়েছে তা সঠিক তদন্ত প্রয়োজন। তারা মনে করেন, সরকারের ঊর্ধ্বতনরা সঠিক তদন্ত করলেই সব বেড়িয়ে আসবে এবং প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ সত্য।

এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি’র) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি এবং সাংবাদিকদের কোনো বক্তব্য দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

শিক্ষকদের পায়ে ফুল, আর সেই সঙ্গে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নিয়ে ঝড় তোলা পাঠচক্র! ঝিনাইদহ বন্ধুসভার এক অন্যরকম শিক্ষক দিবস উদযাপন, যা মন জয় করেছে সবার! ঝিনাইদহ: ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নিয়ে কবিতা-আলোচনা!

ঠাকুরগাঁও টিটিসি’তে ড্রাইভিং লাইসেন্সের নামে ঘুষ: দুদক অনুসন্ধান চলমান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষোভ

আপডেট : ১০:২৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’র (টিটিসি) বিরুদ্ধে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের নামে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার, ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয় দুদক এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছিল যে, টিটিসি প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে লাইসেন্স দেওয়ার নামে টাকা নিচ্ছে। এই খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও (ফেসবুক) নেটিজেন এবং প্রশিক্ষণার্থীরা প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান, খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক ফারুক হোসেন এবং অটোমোটিভ ট্রেডের প্রধান প্রশিক্ষক সাদেকুল ইসলামের চাকরিচ্যুতি ও আইনানুগ কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শামছুর রহমান টিটিসিতে যোগদানের পর থেকে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম চললেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এর আগেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রতিবাদ জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের আশীর্বাদে সব অনিয়ম ক্ষমা পেয়ে যায় এবং তিনি এখনো আগের মতোই অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। তারা জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবি জানান।

এরই মধ্যে, নিজের অনিয়ম ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বাঁচাতে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান তার নিজস্ব ফেসবুকে জেলার গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি লেখেন, “সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ঠাকুরগাঁও টিটিসির কয়েকজনের প্ররোচনায় অর্থের লোভে, কয়েকজন হলুদ সাংবাদিক ফেসবুক/অনলাইন পত্রিকায় সম্পূর্ণ মিথ্যে, বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও টিটিসির কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তির স্বার্থে আঘাত লাগায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য কয়েকজন হলুদ সাংবাদিক দিয়ে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ করাচ্ছে। তাদের গ্রুপের একজনকে বিএমইটি কর্তৃক তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে মানিকগঞ্জ টিটিসিতে কিছুদিন হলো বদলী করেছে।”

তিনি আরও লেখেন, “ড্রাইভিং কোর্সে প্রশিক্ষণার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানামতে সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং বানোয়াট। টিটিসি কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ ব্যতীত কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় না। অতএব, ড্রাইভিং লাইসেন্স বাবদ টিটিসির পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেয়ার প্রশ্ন তোলা বা টিটিসি কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”

তার এই মন্তব্যের পর গণমাধ্যমকর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তবে, গেল কয়েক বছর ধরে লাইসেন্স বাবদ প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে ২৫০০ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের নামে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছে থেকে ৪ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। ভারি যানবাহনের জন্য ৩৫০০ টাকা ও হালকা যানের জন্য ২৫০০ টাকা খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক ফারুক হোসেন নেন। অভিযোগ, যারা টাকা দিয়েছে তারাই শুধু লাইসেন্স প্রাপ্তি পরীক্ষায় পাস করেছে এবং যারা দেয়নি তাদের অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।

এই ঘটনায় প্রতিবাদস্বরূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) টিটিসি’র ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন একটি পোস্ট করেন। এতে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অনেকে নড়েচড়ে বসেন এবং খবরটি প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোয় প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে গত ১৭ মে শোকজ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান।

এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিজেদের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতেই তারা সকলে একত্রিত হয়ে তাকে শোকজ করেছে। তবে তিনি যা সত্য তাই বলেছেন এবং দুদক তদন্ত করলেই সব বেড়িয়ে আসবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, “ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি’র) ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থী তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন এবং তাদের প্রত্যেকের কাছে ২৫০০ টাকা লাইসেন্স দেওয়া হবে মর্মে টিটিসি কর্তৃপক্ষ আদায় করে। এরইমধ্যে দুদকের কর্মকর্তারা তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নেমেছে।” তিনি আরও বলেন, “লাইসেন্স দেওয়া বাবদ প্রশিক্ষণার্থীর কাছে টাকা নিয়েছে টিটিসি কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগে দুদক কাজ করছে। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।”

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সংবাদ প্রচার ও দুদকের বক্তব্যের পর কৌশলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার নামে কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি মর্মে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে একটি লিখিত নেন। অন্যদিকে, কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী অভিযোগ করে জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ঘুষ না দিলে তাদের অকৃতকার্য করা হতো। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এটাও নিয়মিত দেন না কর্তৃপক্ষ। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ২/৩ লিটার তেল বরাদ্দ থাকলেও টিটিসি কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য আধা লিটার তেলও খরচ করে না। তারা প্রতিটি কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছে যা দেখার কেউ নেই। তাদের মতে, এখানে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে হরিলুট চলে এবং প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কিভাবে হয়েছে তা সঠিক তদন্ত প্রয়োজন। তারা মনে করেন, সরকারের ঊর্ধ্বতনরা সঠিক তদন্ত করলেই সব বেড়িয়ে আসবে এবং প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ সত্য।

এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি’র) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি এবং সাংবাদিকদের কোনো বক্তব্য দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।