Hi

০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম মারা গেছেন: পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যার দা সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

কিশোরগঞ্জ, ১৭ জুন ২০২৫: কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯৩) মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোরে বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের বড়মাইপাড়া গ্রামে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হিলচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক নাহিদ।

জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সখিনা বেগম। তার বাবার নাম সোনাফর মিয়া এবং মায়ের নাম দুঃখী বিবি। সখিনা বেগম নিঃসন্তান ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের আগেই তার স্বামী কিতাব আলী মারা যান। নিকলীতে তাকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া গ্রামে ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের কাছে থাকতেন। সেখানেই মঙ্গলবার ভোরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

হিলচিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিয়াজ মামনুন রহমান পুটন জানান, সখিনা বেগম বড়মাইপাড়া গ্রামে প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। মঙ্গলবার ভোর ৫টার সময় তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। তিনি ছোটকাল থেকেই তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতেন এবং খেতাবপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তোতা মিয়া বলেন, গুরুই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর হিলচিয়াতে তার ভাগ্নির কাছে থাকতেন এবং সেখানেই মারা গেছেন। মঙ্গলবার আসর নামাজ বাদ গুরুই ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে সখিনা বেগমকে তার গ্রামে শাহী মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা:

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সখিনা বেগম সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে তার ভাগ্নে মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। ভাগ্নের এই অকালমৃত্যু সখিনাকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সখিনা বেগম গুরুই এলাকায় বসু বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাঁধুনির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে তিনি রাজাকারদের গতিবিধির বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। একপর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন, তবে পরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। পালানোর সময় তিনি সেখান থেকে একটি ধারালো দা নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে সেই দা দিয়েই নিকলীর পাঁচজন রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। সখিনা বেগমের ব্যবহৃত সেই দা বর্তমানে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

লেখক সম্পর্কে তথ্য

শিক্ষকদের পায়ে ফুল, আর সেই সঙ্গে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নিয়ে ঝড় তোলা পাঠচক্র! ঝিনাইদহ বন্ধুসভার এক অন্যরকম শিক্ষক দিবস উদযাপন, যা মন জয় করেছে সবার! ঝিনাইদহ: ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নিয়ে কবিতা-আলোচনা!

নারী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম মারা গেছেন: পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যার দা সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

আপডেট : ১০:৪৩:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

কিশোরগঞ্জ, ১৭ জুন ২০২৫: কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯৩) মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোরে বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের বড়মাইপাড়া গ্রামে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হিলচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক নাহিদ।

জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সখিনা বেগম। তার বাবার নাম সোনাফর মিয়া এবং মায়ের নাম দুঃখী বিবি। সখিনা বেগম নিঃসন্তান ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের আগেই তার স্বামী কিতাব আলী মারা যান। নিকলীতে তাকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া গ্রামে ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের কাছে থাকতেন। সেখানেই মঙ্গলবার ভোরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

হিলচিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিয়াজ মামনুন রহমান পুটন জানান, সখিনা বেগম বড়মাইপাড়া গ্রামে প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। মঙ্গলবার ভোর ৫টার সময় তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। তিনি ছোটকাল থেকেই তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতেন এবং খেতাবপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তোতা মিয়া বলেন, গুরুই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর হিলচিয়াতে তার ভাগ্নির কাছে থাকতেন এবং সেখানেই মারা গেছেন। মঙ্গলবার আসর নামাজ বাদ গুরুই ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে সখিনা বেগমকে তার গ্রামে শাহী মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা:

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সখিনা বেগম সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে তার ভাগ্নে মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। ভাগ্নের এই অকালমৃত্যু সখিনাকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সখিনা বেগম গুরুই এলাকায় বসু বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাঁধুনির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে তিনি রাজাকারদের গতিবিধির বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। একপর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন, তবে পরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। পালানোর সময় তিনি সেখান থেকে একটি ধারালো দা নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে সেই দা দিয়েই নিকলীর পাঁচজন রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। সখিনা বেগমের ব্যবহৃত সেই দা বর্তমানে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।