Hi

০২:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাঙ্গামাটিতে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিল বিক্ষুব্ধ জনতা, ছড়াল উত্তেজনা

রাঙ্গামাটিতে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিল বিক্ষুব্ধ জনতা, ছড়াল উত্তেজনা

রাঙ্গামাটি, ২১ জুন, ২০২৪: রাঙ্গামাটিতে এক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন কায়সারকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন উত্তেজিত একদল যুবক। শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে শহরের বনরূপায় এই ঘটনা ঘটে, যা পরবর্তীতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জন্ম দেয় এবং শহরে উত্তেজনা ছড়ায়।

বনরূপা মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে একটি ট্যাক্সিতে করে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে কায়সারকে আটকে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ছাত্রলীগের এই নেতাকে ব্যাপক মারধর করে তার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

জানা যায়, ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা একটি মামলায় কায়সার আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিছুদিন কারাগারে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে তিনি পলাতক ছিলেন এবং শুক্রবারই রাঙ্গামাটি আসেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানান। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, একটি বিয়ের দাওয়াতে এসে বনরূপা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে কায়সারকে দেখে সেখানে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন জড়ো হন। কায়সার দ্রুত পালাতে একটি ট্যাক্সিতে করে রাঙামাটি ছাড়ার সময় তাকে আটক করে মারধর করা হয় এবং তার পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সাহেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কায়সারকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ

কায়সারকে মারধরের ঘটনার পরপরই শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মারধরের সময় একদল শিবির কর্মী ছাত্রদলের দুই নেতার ওপর হামলা করলে মুহূর্তেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়।

রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর শাহ জানান, কায়সারকে গাড়ির ভেতর মারধরের সময় তিনি তাদের গাড়ি থেকে বের করতে এবং গাড়িতে আঘাত না করতে বলেন। এ সময় শিবিরের একজন কর্মী কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ও ছাত্রদলের আরেক নেতা আকাশকে ঘুষি মারেন এবং একটি বস্তু দিয়ে আঘাত করেন। খবর পেয়ে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছুটে এসে শিবির কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ইসলামী সেন্টারে ঢুকে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাহাদুর শাহ অভিযোগ করেন, শিবিরের ছেলেরা বিনা উসকানিতে তাদের ওপর হামলা করেছে এবং তারা দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অন্যদিকে, রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শাফি এই বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে দাবি করেন যে তেমন কিছুই হয়নি এবং তাদের কেউ আহত হয়েছে কিনা, সেটিও তিনি জানাতে চাননি।

জেলা জামায়াতের সিনিয়র নেতা ও শুরা সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন কায়সারকে আটক করার পর মারধর করার সময় না চেনার কারণে শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছেন এবং জানান যে শিবিরের একজন কর্মীকে বেশি মারধর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বসে বিষয়টি সমাধান করে দেবেন, কারণ ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো বিরোধ নেই, এটি নিছক ভুল বোঝাবুঝি।

রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদও জানান, ছাত্রলীগের একজনকে আটক করার সময় ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে এবং বিষয়টি তারা বসে সমাধান করে দেবেন।

অটোরিকশা ধর্মঘট

এদিকে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, দুপুরের ঘটনায় শিবির কর্মীদের হামলায় জাকারিয়া ও সাব্বির নামে দুই চালককে বিনা উসকানিতে মারধর করায় বিকাল থেকে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে রাঙ্গামাটি শহরের একমাত্র বাহন অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন চালকরা।

এই ঘটনা রাঙ্গামাটিতে রাজনৈতিক এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেকার সংঘাতের একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

জামালগঞ্জে ৪ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ: ১১ কৃষক পেলেন পৌনে ১৮ লাখ টাকা

রাঙ্গামাটিতে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিল বিক্ষুব্ধ জনতা, ছড়াল উত্তেজনা

আপডেট : ০৩:৪০:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

রাঙ্গামাটিতে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিল বিক্ষুব্ধ জনতা, ছড়াল উত্তেজনা

রাঙ্গামাটি, ২১ জুন, ২০২৪: রাঙ্গামাটিতে এক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন কায়সারকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন উত্তেজিত একদল যুবক। শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে শহরের বনরূপায় এই ঘটনা ঘটে, যা পরবর্তীতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জন্ম দেয় এবং শহরে উত্তেজনা ছড়ায়।

বনরূপা মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে একটি ট্যাক্সিতে করে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে কায়সারকে আটকে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ছাত্রলীগের এই নেতাকে ব্যাপক মারধর করে তার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

জানা যায়, ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা একটি মামলায় কায়সার আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিছুদিন কারাগারে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে তিনি পলাতক ছিলেন এবং শুক্রবারই রাঙ্গামাটি আসেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানান। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, একটি বিয়ের দাওয়াতে এসে বনরূপা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে কায়সারকে দেখে সেখানে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন জড়ো হন। কায়সার দ্রুত পালাতে একটি ট্যাক্সিতে করে রাঙামাটি ছাড়ার সময় তাকে আটক করে মারধর করা হয় এবং তার পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সাহেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কায়সারকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ

কায়সারকে মারধরের ঘটনার পরপরই শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মারধরের সময় একদল শিবির কর্মী ছাত্রদলের দুই নেতার ওপর হামলা করলে মুহূর্তেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়।

রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর শাহ জানান, কায়সারকে গাড়ির ভেতর মারধরের সময় তিনি তাদের গাড়ি থেকে বের করতে এবং গাড়িতে আঘাত না করতে বলেন। এ সময় শিবিরের একজন কর্মী কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ও ছাত্রদলের আরেক নেতা আকাশকে ঘুষি মারেন এবং একটি বস্তু দিয়ে আঘাত করেন। খবর পেয়ে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছুটে এসে শিবির কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ইসলামী সেন্টারে ঢুকে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাহাদুর শাহ অভিযোগ করেন, শিবিরের ছেলেরা বিনা উসকানিতে তাদের ওপর হামলা করেছে এবং তারা দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অন্যদিকে, রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শাফি এই বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে দাবি করেন যে তেমন কিছুই হয়নি এবং তাদের কেউ আহত হয়েছে কিনা, সেটিও তিনি জানাতে চাননি।

জেলা জামায়াতের সিনিয়র নেতা ও শুরা সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন কায়সারকে আটক করার পর মারধর করার সময় না চেনার কারণে শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছেন এবং জানান যে শিবিরের একজন কর্মীকে বেশি মারধর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বসে বিষয়টি সমাধান করে দেবেন, কারণ ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো বিরোধ নেই, এটি নিছক ভুল বোঝাবুঝি।

রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদও জানান, ছাত্রলীগের একজনকে আটক করার সময় ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে এবং বিষয়টি তারা বসে সমাধান করে দেবেন।

অটোরিকশা ধর্মঘট

এদিকে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, দুপুরের ঘটনায় শিবির কর্মীদের হামলায় জাকারিয়া ও সাব্বির নামে দুই চালককে বিনা উসকানিতে মারধর করায় বিকাল থেকে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে রাঙ্গামাটি শহরের একমাত্র বাহন অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন চালকরা।

এই ঘটনা রাঙ্গামাটিতে রাজনৈতিক এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেকার সংঘাতের একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।