Hi

০৯:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া ঠিকানা ও অনিয়ম করে বদলির অভিযোগ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ২৩ জুন ২০২৫: ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার, নিয়মবহির্ভূত বদলি এবং পারিবারিক হয়রানিমূলক মামলার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে খুলনার সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস আরার বিরুদ্ধে। ফেরদৌস আরা নিজ পরিচয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি নিজের জন্মস্থান ও পৈতৃক ঠিকানা ঘিরে একাধিক স্থানে ঠিকানা ব্যবহার করে নিয়োগ ও বদলি গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মৃত আবু বকর সিদ্দিক এবং মাতা আনজুমন আরা খানমের সন্তান ফেরদৌস আরা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার স্থায়ী ঠিকানা সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড, রসুলপুর খাঁ পাড়া। এই ঠিকানার ভিত্তিতেই তিনি ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। এরপর ২০০৯ সালের ১২ জুন পর্যন্ত তিনি রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। অথচ সরকারি বিধিমালা, কোটানীতির তোয়াক্কা না করে ২০০৯ সালের ১৩ জুন তিনি নিজের জন্মস্থান নয় এমন এলাকা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পানামি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। সেখানে দুই বছর কাজ করার পর ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল পোড়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত থাকেন। পরে ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা অফিসে পদোন্নতি পেয়ে যোগদান করেন এবং ২০২২ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরে ফেরদৌস আরা আবারও নিজের দাবিকৃত জন্মস্থান ঝিনাইদহের শৈলকুপার ফাজিলপুর ঠিকানা ব্যবহার করে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে শৈলকুপা উপজেলায় ৮ মার্চ ২০২২ তারিখে নতুন করে যোগদান করেন।

এই পুরো সময়জুড়ে তার ব্যবহৃত ঠিকানায় ছিল বিস্ময়কর বৈচিত্র্য। জাতীয় পরিচয়পত্রে কখনো সাতক্ষীরা, কখনো ঝিনাইদহের শৈলকুপার ফাজিলপুর, আবার কখনো নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার সর্বশেষ এনআইডি নম্বর ৩৭২৭৫৭৩৯৩৭-এ জন্মস্থান হিসেবে নড়াইল, স্থায়ী ঠিকানায় মির্জাপুর, কালিয়া, নড়াইল উল্লেখ থাকলেও বিভিন্ন সময় বদলির আবেদন ও মামলার নথিপত্রে ব্যবহার করেছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফাজিলপুরের ঠিকানা।

এ প্রসঙ্গে ফেরদৌস আরা বলেন, ‘আমি চাকরিজীবনে কখনো ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করিনি। আমার পৈতৃক ঠিকানা রয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায়, আবার দীর্ঘদিন সাতক্ষীরায় বসবাস করায় সেখানেও ঠিকানা যুক্ত হয়েছে। আইন মেনে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমি বদলি ও নিয়োগ পেয়েছি। আর পারিবারিক মামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না, সেগুলো আমার ব্যক্তিগত বিষয়।’

এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। অভিযোগ রয়েছে, শৈলকুপায় কর্মরত থাকাকালে ফেরদৌস আরা নিজের মা আনজুমন আরা খানম, ছোট বোন ও ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যদিও এসব মামলার একটিতেও এখন পর্যন্ত তার পক্ষে কোনো রায় আসেনি। স্থানীয়দের দাবি, এসব মামলার পেছনে ছিল পারিবারিক সম্পত্তি ও আধিপত্য বিস্তারের হিসাব।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে একাধিক ঠিকানা ব্যবহার করে বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মরত থাকতে পারেন? কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র একাধিকবার সংশোধন করে নিজের সুবিধামতো তথ্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হন?

এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন নাগরিক সমাজ ও শিক্ষক মহল মনে করছে, এটি শুধু একজন কর্মকর্তার নয়, বরং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুশাসনের ওপর সরাসরি আঘাত।

অতএব, ফেরদৌস আরার বিরুদ্ধে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার, নিয়মবহির্ভূত বদলি এবং পরিবারবিরোধী হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী ও শিক্ষক মহল।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

ব্যবসায়ীকে দাড়ি ধরে টানা-হেঁচড়া করায় আশুলিয়া থেকে নাসিম ভূঁইয়া গ্রেফতার

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া ঠিকানা ও অনিয়ম করে বদলির অভিযোগ

আপডেট : ০৩:৫৬:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ২৩ জুন ২০২৫: ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার, নিয়মবহির্ভূত বদলি এবং পারিবারিক হয়রানিমূলক মামলার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে খুলনার সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস আরার বিরুদ্ধে। ফেরদৌস আরা নিজ পরিচয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি নিজের জন্মস্থান ও পৈতৃক ঠিকানা ঘিরে একাধিক স্থানে ঠিকানা ব্যবহার করে নিয়োগ ও বদলি গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মৃত আবু বকর সিদ্দিক এবং মাতা আনজুমন আরা খানমের সন্তান ফেরদৌস আরা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার স্থায়ী ঠিকানা সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড, রসুলপুর খাঁ পাড়া। এই ঠিকানার ভিত্তিতেই তিনি ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। এরপর ২০০৯ সালের ১২ জুন পর্যন্ত তিনি রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। অথচ সরকারি বিধিমালা, কোটানীতির তোয়াক্কা না করে ২০০৯ সালের ১৩ জুন তিনি নিজের জন্মস্থান নয় এমন এলাকা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পানামি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। সেখানে দুই বছর কাজ করার পর ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল পোড়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত থাকেন। পরে ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা অফিসে পদোন্নতি পেয়ে যোগদান করেন এবং ২০২২ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরে ফেরদৌস আরা আবারও নিজের দাবিকৃত জন্মস্থান ঝিনাইদহের শৈলকুপার ফাজিলপুর ঠিকানা ব্যবহার করে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে শৈলকুপা উপজেলায় ৮ মার্চ ২০২২ তারিখে নতুন করে যোগদান করেন।

এই পুরো সময়জুড়ে তার ব্যবহৃত ঠিকানায় ছিল বিস্ময়কর বৈচিত্র্য। জাতীয় পরিচয়পত্রে কখনো সাতক্ষীরা, কখনো ঝিনাইদহের শৈলকুপার ফাজিলপুর, আবার কখনো নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার সর্বশেষ এনআইডি নম্বর ৩৭২৭৫৭৩৯৩৭-এ জন্মস্থান হিসেবে নড়াইল, স্থায়ী ঠিকানায় মির্জাপুর, কালিয়া, নড়াইল উল্লেখ থাকলেও বিভিন্ন সময় বদলির আবেদন ও মামলার নথিপত্রে ব্যবহার করেছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফাজিলপুরের ঠিকানা।

এ প্রসঙ্গে ফেরদৌস আরা বলেন, ‘আমি চাকরিজীবনে কখনো ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করিনি। আমার পৈতৃক ঠিকানা রয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায়, আবার দীর্ঘদিন সাতক্ষীরায় বসবাস করায় সেখানেও ঠিকানা যুক্ত হয়েছে। আইন মেনে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমি বদলি ও নিয়োগ পেয়েছি। আর পারিবারিক মামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না, সেগুলো আমার ব্যক্তিগত বিষয়।’

এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। অভিযোগ রয়েছে, শৈলকুপায় কর্মরত থাকাকালে ফেরদৌস আরা নিজের মা আনজুমন আরা খানম, ছোট বোন ও ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যদিও এসব মামলার একটিতেও এখন পর্যন্ত তার পক্ষে কোনো রায় আসেনি। স্থানীয়দের দাবি, এসব মামলার পেছনে ছিল পারিবারিক সম্পত্তি ও আধিপত্য বিস্তারের হিসাব।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে একাধিক ঠিকানা ব্যবহার করে বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মরত থাকতে পারেন? কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র একাধিকবার সংশোধন করে নিজের সুবিধামতো তথ্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হন?

এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন নাগরিক সমাজ ও শিক্ষক মহল মনে করছে, এটি শুধু একজন কর্মকর্তার নয়, বরং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুশাসনের ওপর সরাসরি আঘাত।

অতএব, ফেরদৌস আরার বিরুদ্ধে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার, নিয়মবহির্ভূত বদলি এবং পরিবারবিরোধী হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী ও শিক্ষক মহল।