Hi

০৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য ও দুর্নীতির অভিযোগ: সেবা প্রার্থীরা জিম্মি

গাজীপুর, ২৩ জুন ২০২৫: গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি ও অনিয়মের যেন শেষ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলেও আরেক দিকে খুলে দেওয়া হয় দুর্নীতির নতুন পথ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপে উঠে এসেছে, পাসপোর্ট খাত দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাতগুলোর অন্যতম। দালালদের সক্রিয় উপস্থিতি ও কর্তৃত্বের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পাসপোর্ট সেবা গ্রহণকারীরা।

পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, “নিজেরা আবেদন করতে গেলে নানা অজুহাত ও হয়রানির মাধ্যমে তাদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেই মুহূর্তেই পাওয়া যায়।” এ ছাড়াও পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে গড়ে ওঠা প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি কম্পিউটারের দোকানের মাধ্যমে পাসপোর্ট, এনআইডি ও ভিসার মতো সকল ধরণের কাজের আবেদন, ভুল সংশোধন ও তাদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়। এসব কম্পিউটার দোকানে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেই সহজেই হাতে পাওয়া যায় পাসপোর্ট। এমনকি সরাসরি আবেদন করলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাগণ পাসপোর্ট আবেদনকারীদের বানিয়ে ফেলেন রোহিঙ্গা।

গাজীপুরের সদর থানার মুন্সিপাড়া এলাকার হৃদয় বর্মণ এবং আরেক আবেদনকারী সন্ধ্যা বালা দাসসহ অনেকেই কয়েক দফা আবেদন করেও হয়রানির শিকার হন এবং ঘুষ প্রদান না করায় তাদের ভাগ্যে মেলেনি পাসপোর্ট।

এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাসরিন পারভীন নুপুরের নিকট তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইলে উনার প্রদানকৃত তথ্যের সাথে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। যারা পাসপোর্ট করে বিদেশ গিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্ত করবে তারাই গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা/কর্মচারী ও দালালদের নিকট জিম্মি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাসপোর্টের জন্য পুলিশ তদন্ত বাতিল করলেও এই অফিসের কিছু আওয়ামী লীগের দোসরগণ বহাল তবিয়তে থাকার কারণে ঘুষ ছাড়া পাসপোর্ট করতে পারছে না। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে এই অসৎ কর্মকর্তারা গড়ে তুলেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ। পাসপোর্ট অফিসে চলমান দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপকর্ম বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকি বৃদ্ধি করা সহ দালালদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করার ব্যবস্থা করার দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায় না বললেই চলে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের গাজীপুরের আঞ্চলিক অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন দুর্নীতি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা দেখছি, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখার পরও প্রবাসী শ্রমিকরা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে নানাভাবে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজদের কারণে একশ্রেণীর মানুষ ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে সেবা নিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সেজন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকি বৃদ্ধি করাসহ দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

দুর্নীতি, অনিয়ম ও দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার বিষয়ে গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাসরিন পারভীন নুপুরের কাছে জানতে চাইলে উনি অফিসে এসে কথা বলতে বলেন।

ট্যাগ :
লেখক সম্পর্কে তথ্য

জনপ্রিয়

ব্যবসায়ীকে দাড়ি ধরে টানা-হেঁচড়া করায় আশুলিয়া থেকে নাসিম ভূঁইয়া গ্রেফতার

গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য ও দুর্নীতির অভিযোগ: সেবা প্রার্থীরা জিম্মি

আপডেট : ০৪:১৩:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

গাজীপুর, ২৩ জুন ২০২৫: গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি ও অনিয়মের যেন শেষ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলেও আরেক দিকে খুলে দেওয়া হয় দুর্নীতির নতুন পথ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপে উঠে এসেছে, পাসপোর্ট খাত দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাতগুলোর অন্যতম। দালালদের সক্রিয় উপস্থিতি ও কর্তৃত্বের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পাসপোর্ট সেবা গ্রহণকারীরা।

পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, “নিজেরা আবেদন করতে গেলে নানা অজুহাত ও হয়রানির মাধ্যমে তাদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেই মুহূর্তেই পাওয়া যায়।” এ ছাড়াও পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে গড়ে ওঠা প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি কম্পিউটারের দোকানের মাধ্যমে পাসপোর্ট, এনআইডি ও ভিসার মতো সকল ধরণের কাজের আবেদন, ভুল সংশোধন ও তাদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়। এসব কম্পিউটার দোকানে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেই সহজেই হাতে পাওয়া যায় পাসপোর্ট। এমনকি সরাসরি আবেদন করলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাগণ পাসপোর্ট আবেদনকারীদের বানিয়ে ফেলেন রোহিঙ্গা।

গাজীপুরের সদর থানার মুন্সিপাড়া এলাকার হৃদয় বর্মণ এবং আরেক আবেদনকারী সন্ধ্যা বালা দাসসহ অনেকেই কয়েক দফা আবেদন করেও হয়রানির শিকার হন এবং ঘুষ প্রদান না করায় তাদের ভাগ্যে মেলেনি পাসপোর্ট।

এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাসরিন পারভীন নুপুরের নিকট তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইলে উনার প্রদানকৃত তথ্যের সাথে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। যারা পাসপোর্ট করে বিদেশ গিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্ত করবে তারাই গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা/কর্মচারী ও দালালদের নিকট জিম্মি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাসপোর্টের জন্য পুলিশ তদন্ত বাতিল করলেও এই অফিসের কিছু আওয়ামী লীগের দোসরগণ বহাল তবিয়তে থাকার কারণে ঘুষ ছাড়া পাসপোর্ট করতে পারছে না। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে এই অসৎ কর্মকর্তারা গড়ে তুলেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ। পাসপোর্ট অফিসে চলমান দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপকর্ম বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকি বৃদ্ধি করা সহ দালালদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করার ব্যবস্থা করার দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায় না বললেই চলে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের গাজীপুরের আঞ্চলিক অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন দুর্নীতি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা দেখছি, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখার পরও প্রবাসী শ্রমিকরা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে নানাভাবে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজদের কারণে একশ্রেণীর মানুষ ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে সেবা নিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সেজন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকি বৃদ্ধি করাসহ দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

দুর্নীতি, অনিয়ম ও দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার বিষয়ে গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাসরিন পারভীন নুপুরের কাছে জানতে চাইলে উনি অফিসে এসে কথা বলতে বলেন।