ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫ – বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আশার আলো। গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সরাসরি টেলিফোনে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। প্রায় ১৫ মিনিটের এই “উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক” ফোনালাপে উঠে এসেছে আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি, শুল্ক কমানোর সুখবর এবং গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় মার্কিন সমর্থন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, ফোনালাপে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, গণতন্ত্রে উত্তরণের রূপরেখা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা—সবকিছু নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
নির্বাচন ও গণতন্ত্রে মার্কিন সমর্থন:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচি এবং “আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের” উদ্যোগকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে নির্বাচন কমিশন “নিরলস পরিশ্রম” করছে, যা পূর্ববর্তী সরকার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিল। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এবার “তরুণ প্রজন্মই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে”।
বাণিজ্য ও ট্রাম্পের বিশেষ সুবিধা:
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য এবং রেমিটেন্সের শীর্ষ উৎস। এই প্রেক্ষাপটে উভয় নেতা আশা প্রকাশ করেছেন যে, শিগগিরই শুল্ক নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হবে, যা দুই দেশের বাণিজ্যকে আরও বাড়িয়ে দেবে।1
গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের অনুরোধে পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখায়। তিনি বলেছেন, “আমরা আপনার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছি যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য কর্মসূচির প্রতি কার্যকর প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ চূড়ান্ত করা যায়।”
রোহিঙ্গা এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশল:
ফোনালাপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক উদার সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান এবং মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে উজ্জ্বল। দুই নেতা স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্ব এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের মতো ভূ-রাজনৈতিক বিষয়েও মতবিনিময় করেছেন।2
ফোনালাপের শেষে অধ্যাপক ইউনূস পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে সাধারণ নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যাতে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রত্যক্ষ করতে পারেন। “এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে,” যোগ করেন তিনি।
এই ফোনালাপকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আগামী দিনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।