দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর, ১৩ জুলাই ২০২৫, সকাল ১১:১৫: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পে এক নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে! ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের দুটি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি, অথচ গত ৩০ জুন তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে! সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এই দুটি প্রকল্পের নামে মোট বরাদ্দের প্রথম কিস্তির ৫০ ভাগ অর্থ অগ্রিম গ্রহণ করেছেন চরআমখাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতি মো. জিয়াউল ইসলাম! বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ রাস্তাগুলোর করুণ দশায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় আটটি ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে (কাবিটা) ৪১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এতে মোট বরাদ্দ রয়েছে ১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৩২২ টাকা ৮১ পয়সা। ৭৪টি টিআর প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। সেই সাথে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার খাদ্যশস্য (গম) এর ১১টি প্রকল্পে ১১৭.৬৮০ মে.টন গম এবং ২২টি প্রকল্পে ১১৭ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিগত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণে এসব প্রকল্প দেওয়া হয়েছিল, যাতে পথচারীদের যাতায়াতে ভোগান্তি লাঘব হয়।

সরেজমিনে দুটি প্রকল্পের ভয়াবহ চিত্র:

• আকন্দপাড়া আজিজলের বাড়ি থেকে ওছিউজ্জামানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্প (বরাদ্দ: ২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭ টাকা): সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা সড়ক থেকে রাস্তাটি গ্রামের ভেতরের দিকে নেমে গেছে। পাকা রাস্তা থেকে মাত্র পঞ্চাশ ফিট দূরে রাস্তার কিছু অংশ ভেঙে গেছে। বাকি স্থানেও মাঝে মাঝে ছোট বড় গর্ত, চলাচল করা কঠিন। গত বছর বর্ষায় ভেঙে যাওয়া এই রাস্তাটিতে কোনো কাজই হয়নি! স্থানীয়রা জানান, গ্রামবাসীদের যাতায়াতে রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অথচ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হলেও কাজ ধরেনি প্রকল্পটি। চলতি বর্ষায় দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে জানায় স্থানীয়রা।
• সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়া আজিজুর ডাক্তারের বাড়ীর উত্তর পাশে পুনর্নির্মাণ প্রকল্প (বরাদ্দ: ৩ লক্ষ টাকা): ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পুনর্নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় বরাদ্দ হয় তিন লক্ষ টাকা। তার মধ্যে ৫০ ভাগ অর্থ প্রকল্প শুরুর দিকেই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছুটা ফাঁকা স্থানে একটি অর্ধভাঙা বক্স কালভার্ট নিথর দাঁড়িয়ে আছে। ওইটার দু’পাশে সংযোগ সড়ক নেই। পথচারীরা জানান, গত বছর বর্ষায় বক্স কালভার্টটির কিছু অংশসহ দু’পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। তারপর থেকে কোনো সংস্কার হয়নি।

ইউপি সদস্যের বিস্ফোরক অভিযোগ:

দ্বিতীয় প্রকল্পটির সভাপতি ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রীতিমতো বোমা ফাটান! তিনি জানান, প্রকল্পটি মূলত চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলামের দায়িত্বে রয়েছে। কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি এবং তাকে (ইউপি সদস্যকে) নামেমাত্র সভাপতি রাখা হয়েছে! রফিকুল ইসলাম বলেন, “কাগজে কলমে সভাপতি হিসেবে আমার নাম থাকলেও আমি এর আদ্যোপান্ত কিছু জানিনা। আমার নাম ভাঙিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই অলিখিতভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কাজ করলে কোনো কথা ছিল না। কাজ না হওয়ায় আমি বিপাকে রয়েছি। অগ্রিমের টাকাও চেয়ারম্যান নিজে গ্রহণ করেছেন।” তিনি আরও জানান, প্রকল্পটির কাজ এখনও শুরু করা হয়নি এবং ৩০ জুন কাজ সমাপ্ত করার শেষ সময় গেলেও চেয়ারম্যান তার তোয়াক্কা না করে কাজটি শুরু করেননি।

চেয়ারম্যানের নির্লিপ্ত জবাব:

চরআমখাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম মুঠোফোনে এই বিষয়ে বলেন, “আমার মিস্ত্রি অন্য জায়গায় কাজ করছেন। তাই কাজ করিনি। এখন কাজ করবো।” প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রশ্নে তিনি নির্লিপ্তভাবে বলেন, “সময় শেষ হোক, সমস্যা নেই।”

প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেবে?

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. খবিরুজ্জামান খান জানান, “কাজ না করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। বিগত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণে প্রকল্পগুলো দেওয়া হয়েছে, যাতে পথচারীদের যাতায়াতে ভোগান্তি লাঘব হয়। ওই প্রকল্পদু’টির চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি। সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

কাজ শুরু না হতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া এবং অগ্রিম অর্থ উত্তোলনের এই ঘটনায় জামালপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যানের এই নির্লিপ্ত জবাবে জনগণ কি আস্থা রাখতে পারবে? প্রশাসন কি তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?

ট্যাগস: #দেওয়ানগঞ্জ #জামালপুর #কাবিটাপ্রকল্প #দুর্নীতি #ইউপিচেয়ারম্যান #জিয়াউলইসলাম #প্রকল্পমেয়াদ #জনদুর্ভোগ #গ্রামীণঅবকাঠামো #অর্থআত্মসাৎ #ব্রেকিংনিউজ #জামালপুরনিউজ