মৌলভীবাজার, ১৫ জুলাই ২০২৫: অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! মাত্র একটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের চেষ্টায় মুহূর্তেই প্রাণ হারালেন চারজন তরতাজা যুবক। এমন হৃদয়বিদারক এবং মর্মান্তিক ঘটনা সম্ভবত দেশের ইতিহাসে এই প্রথম। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হরিণছড়া চা বাগানের শ্রমিক লাইনে ঘটেছে এই লোমহর্ষক ঘটনা। নিহত চারজনই ছিলেন চা শ্রমিকের সন্তান। এই ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া, চলছে মাতম।
যেভাবে ঘটলো মর্মান্তিক পরিণতি
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে চা শ্রমিক রানা নায়েক (১৭) এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি অসাবধানতাবশত একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের গর্তে পড়ে যায়। নিজের প্রিয় মোবাইলটি উদ্ধারের জন্য সে তার তিন বন্ধু শ্রাবণ নায়েক (১৯), কৃষ্ণ রবিদাস (২০) এবং নিপেন ফুলমালি (২৭) কে সাথে নিয়ে ওই গর্তের কাছে যায়।
প্রথমে রানা নায়েক নিজেই গর্তের নিচে নামে মোবাইলটি তোলার জন্য। কিন্তু নিচে নামার পরই সে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে এবং আর উপরে উঠতে পারেনি। বন্ধুদের ধারণা হয়, রানা হয়তো পড়ে গেছে অথবা অসুস্থ হয়ে গেছে। রানাকে উদ্ধার করার জন্য বন্ধু শ্রাবণ নায়েক দ্রুত গর্তের নিচে নামে। কিন্তু তারও একই পরিণতি ঘটে; সেও নিচে নামার পর অচেতন হয়ে পড়ে।
এই দৃশ্য দেখে একে একে কৃষ্ণ রবিদাস এবং নিপেন ফুলমালিও নিচে নেমে যায় বন্ধুদের উদ্ধার করতে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তারাও রানার মতো অচেতন হয়ে পড়েন এবং কেউই আর জীবিত ফিরে আসতে পারেননি। মুহূর্তের মধ্যে বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে এই চারজন তরতাজা যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
ক্ষতবিক্ষত হরিণছড়া চা বাগান
এই ঘটনা হরিণছড়া চা বাগানে শোকের মাতম শুরু হয়েছে। কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, একটি ছোট্ট মোবাইল ফোনের জন্য এতগুলো সম্ভাবনাময় জীবন এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে। নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা দেশের মানুষকে আবারও বিষাক্ত গ্যাসের ঝুঁকি এবং অসতর্কতার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করে তুললো। এমন মৃত্যু কারো জন্যই কাম্য নয়।