ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করেছে এক কর্মশালায়। গত এক বছরে জেলার ৬টি উপজেলায় ৩৬১ জন আত্মহত্যা করেছে। আত্মহননের এই সংখ্যাটি শুধু উদ্বেগজনকই নয়, সমাজের গভীর সংকটেরও ইঙ্গিত দেয়। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি, আর সদর উপজেলা রয়েছে শীর্ষে।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আত্মহত্যা প্রতিরোধ কর্মশালায় এই পরিসংখ্যান উত্থাপন করা হয়। কর্মশালায় বক্তারা আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ।
জেলা জুড়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৬২ শতাংশ আত্মহত্যার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ, আর্থিক অনটন এবং ঋণের দায়ে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী হতাশা। পরিসংখ্যানে দেখা বলা হয়েছে, আত্মহত্যার ভয়ংকর চিত্রের পেছনে এই কারণগুলোই মূল ভূমিকা রাখে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল। সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রথীন্দ্র নাথ রায়, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, সহকারী কমিশনার এসএম শাদমান উল আলম, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব সভাপতি আসিফ কাজল এবং বাসসের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি শাজাহান নবীন, বাংলাদেশ বেতারের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি আহসান কবীরসহ আরো অনেকে।
এসময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল বলেন, আত্মহত্যা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি এখন জেলাব্যাপী একটি সামাজিক সংকটে পরিনত হয়েছে। এই সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের সামাজিক সচেতনতা জাগাতে হবে। স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইন, ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচার, গণমাধ্যমে আলোচনার মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা, নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ, শিক্ষার প্রসার এবং মাদকের আগ্রাসন রোধই হতে পারে আত্মহত্যা প্রতিরোধের কার্যকর উপায়।
কর্মশালায় বক্তারা আত্মহত্যা প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান। সামাজিক-মানসিক সহায়তা, কাউন্সিলিং ব্যবস্থা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সহনশীলতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়।