গাজায় চলমান ভয়াবহ মানবিক সংকট এবং ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুললো ইউরোপের তিন প্রভাবশালী দেশ—স্পেন, ইতালি ও জার্মানি। এতদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো এবং পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ মানুষ ইসরায়েলের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সরব থাকলেও, এই প্রথম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইউরোপের এই তিন দেশের ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
টাইমস অফ ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া এক জোরালো ভাষণে ইসরায়েলকে সরাসরি ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, “মাদ্রিদ এমন কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না, যারা মানবতাকে লঙ্ঘন করে।” এর আগে স্পেন ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সম্প্রতি তেলআবিবের সঙ্গে একটি পূর্বনির্ধারিত অস্ত্র চুক্তিও বাতিল করেছে।
অন্যদিকে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন। সাধারণত ইসরায়েলপন্থী হিসেবে পরিচিত তার সরকারও এবার যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা এবং গাজার সীমান্ত অবরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরাসরি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। মেলোনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, “গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকট থেকে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা এখন একটি বাস্তব রূপ নিতে চলেছে।”
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক মার্জও এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।” তিনি বিশেষভাবে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের জীবন রক্ষায় মানবিক সহায়তা আরও জোরদার করার জন্য আহ্বান জানান। যদিও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে বার্লিন ইসরায়েলের বিষয়ে তুলনামূলকভাবে কিছুটা সংযত আচরণ করে থাকে, তবুও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বার্লিন সফরের আমন্ত্রণ জানানোয় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, ইসরায়েল সরকার যেখানে গাজায় দুর্ভিক্ষের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জোরালোভাবে অস্বীকার করছে, সেখানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ)-এরই একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, “যদি অবিলম্বে সীমান্ত অবরোধ তুলে নেওয়া না হয়, তাহলে গাজার পরিস্থিতি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।”