পরিবেশ পদক পাচ্ছেন তেঁতুলিয়ার মাহমুদুল ইসলাম মামুন: এক যুগ ধরে নিঃস্বার্থ পরিবেশ সেবার স্বীকৃতি
পঞ্চগড়, ২২ জুন ২০২৪ – পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২৪ পাচ্ছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামের কৃতী সন্তান মাহমুদুল ইসলাম মামুন। আগামী ২৫ জুন এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদক তুলে দেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গত ২ জুন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
একজন ব্যতিক্রমী পরিবেশকর্মী
মাহমুদুল ইসলাম মামুন একজন নিবেদিতপ্রাণ ও ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশকর্মী হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন ভোরবেলায় তিনি নিজের সাইকেলে বই এবং গাছের চারা নিয়ে তেঁতুলিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বেরিয়ে পড়েন। তার প্রধান লক্ষ্য শিশুদের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করা, যার জন্য তিনি নিয়মিত পাঠচক্রের আয়োজন করেন এবং অংশগ্রহণকারী শিশুদের গাছের চারা উপহার দেন। এসব আয়োজনে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরাও আগ্রহ নিয়ে অংশ নেন।
মামুন তার নিজ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন একটি অনন্য ‘প্রাকৃতিক পাঠাগার’, যেখানে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা প্রতিদিন এসে তাদের পছন্দের বই পড়তে পারে।
পরিবেশ রক্ষায় নিঃস্বার্থ উদ্যোগ
শুধু শিক্ষামূলক কার্যক্রমই নয়, পরিবেশ রক্ষায় মামুনের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি রাস্তার পাশে পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে সেগুলো ব্যবহার করে গাছের চারা তৈরি করেন। গত এক যুগ ধরে তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে, কোনো প্রকার আর্থিক সহায়তা ছাড়াই এই মহৎ কাজটি করে যাচ্ছেন। তার পরিবেশ সচেতনতামূলক সকল কর্মকাণ্ডের ব্যয়ভার তিনি বহন করেন বাড়িতে পালন করা হাঁস-মুরগি ও ছাগল থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে।
আত্মত্যাগ ও মায়ের প্রতি উৎসর্গ
নিজের কাজ প্রসঙ্গে মাহমুদুল ইসলাম মামুন জানান, “পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি নিজেকে পর্যন্ত গুছাতে পারিনি। আমি বিয়েও করিনি— ভাবি যদি করি, তাহলে হয়তো থেমে যেতে হবে। অনেকে আমাকে পাগল বলেছে, উপহাস করেছে। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি।” এই পদক প্রাপ্তিতে তিনি তার আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, “আমার এই পদক আমি আমার মাকে উৎসর্গ করতে চাই।”
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে মাহমুদুল ইসলাম মামুন রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করা অন্যান্যদের অনুপ্রাণিত করবে।