কলকাতা, ২৫ জুন ২০২৫: আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টায় গুরুসদয় রোড স্থিত ইসকনের বাসভবনের অডিটোরিয়ামে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ২৭শে জুন ইসকনের ৫৪তম রথযাত্রা উপলক্ষে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়, যেখানে বিশ্বব্যাপী ঐক্যের এক ঐকান্তিক আহ্বান জানানো হয়।
রথযাত্রার বিশেষত্ব ও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি
অন্যান্য বারের মতো এবার দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের শুভ সূচনা হওয়ায়, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭শে জুন ইসকনের রথে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তবে তিনি আগামী ৩রা জুলাই ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থাকবেন। এবারের রথের শুভ সূচনা করবেন অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। ইসকন কলকাতার উদ্যোগে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সাত দিন ধরে রথযাত্রার উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
রথের পরিবর্তন ও আধুনিক সংযুক্তি
এবারের রথযাত্রায় ইসকনের বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এসেছে। মেলায় তৈরি হচ্ছে পুরীর মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল। জগন্নাথ দেবের রথে যে বোয়িং ৭৪৭ বিমানের চারটি চাকা লাগানো ছিল, সেইগুলি এই বছর পরিবর্তন করে সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানের নতুন চাকা লাগানো হচ্ছে। প্রায় ৫০ বছর পর বোয়িং ৭৪৭ বিমানের চাকা অবসর নিলো। এই চাকাগুলোকে নিউ টাউনে জগন্নাথ মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হবে।
এবারের রথযাত্রা কলকাতার বুকে জগন্নাথের রথ টেনে নিয়ে চলবে এবং এটি মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, পৃথিবীর যতই যুদ্ধের প্রযুক্তি থাকুক না কেন, প্রকৃত শক্তি নিহিত রয়েছে ভগবানের প্রতি আত্মসমর্পণ ও শান্তির বাণী প্রচারের মাধ্যমে। এছাড়াও ইসকন একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে, যেখানে ক্লিক করলে রথের দিনে জগন্নাথ কোথায় আছেন এবং কত দূরে আছেন, তা দেখা যাবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিতি ও রথযাত্রার পথ
আজকের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাধারমণ দাস, বলরাম চৈতন্য মহাপ্রভু সহ অনেকে। তবে দীঘায় পুরীর মন্দিরের শুভ সূচনা হওয়ার ফলে ইসকনের উদ্যোক্তা রাধারমণ দাস জানান যে তিনি দীঘায় উপস্থিত থাকবেন।
২৭শে জুন সকাল থেকেই চলবে পূজার্চনা। এরপর দুপুর ১টা নাগাদ শুরু হবে রথের দড়িতে টান। জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামকে নিয়ে জয়ধ্বনি দিতে দিতে ভক্তদের সমাগমে রথ এগিয়ে চলবে ইসকন মন্দির থেকে ৩সি অ্যালবার্ট রোড, হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট, এ জে সি বোস রোড, হাজরা রোড, এস পি এম রোড, এটিএম রোড, চৌরঙ্গী রোড, এক্সাইড ক্রসিং হয়ে আউটার টার্ম রোড দিয়ে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রবেশ করবে। ২৮শে জুন থেকে ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পর, ৫ই জুলাই মাসির বাড়ি থেকে রওনা দেবে।
বিশ্বব্যাপী রথযাত্রা ও ভক্তদের সমাগম
ইসকন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ১৫০টিরও বেশি দেশে ৪ হাজারেরও বেশি স্থানে রথযাত্রা পালিত হবে, যা সম্ভব হয়েছে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। প্রতিটি শহরে জগন্নাথের রথ পরিভ্রমণ করবে।
আগের বছর কলকাতার ইসকনের রথ প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি ভক্তদের মন জয় করে নিয়েছিল। এই বছর ইসকন ২২ লক্ষেরও বেশি ভক্ত উপস্থিত হওয়ার আশা করছে। মেলায় চলবে প্রসাদ বিতরণ, নৃত্য, জগন্নাথের জয়ধ্বনি, শিশুদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কীর্তন। প্রতিদিন দুপুর ৩:৩০ থেকে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত পরিবেশন করা হবে খিচুরি প্রসাদ।
ইসকন অনুমান করছে, এবার যেহেতু দীঘায় প্রথম রথযাত্রা পালিত হচ্ছে, সেখানে আনুমানিক ২ লক্ষ লোক হবে। সেই মতোই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত ব্যবস্থা করেছেন যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
রথের গঠন ও কারুকার্য
ইসকনে জগন্নাথ দেবের রথের উচ্চতা ৩৮ ফুট, যার ছাউনি ভাঁজ করা যায়। বলরাম জিউ পথের উচ্চতা ৩৬ ফুট, এবং সুভদ্রা দেবীর রথ তিনটির মধ্যে সবচেয়ে ছোট, যার ভাঁজ করা যায় এমন ডিজাইন মজবুত ও লোহার চাকা।
বর্তমানে রথ ও চাকায় পুরোদমে রং ও কারুকার্য চলছে। রাধারমণ দাস রথের চাকায় তুলির টান দিয়ে আগামী দিনের শান্তির বার্তা জানিয়েছেন