পঞ্চগড়, ২৬ জুন ২০২৫: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও সদর উপজেলার তিনটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে। গতকাল বুধবার (২৫ জুন) ভোরে তেঁতুলিয়া উপজেলার শুকানি পাড়া এবং সদর উপজেলার টোকাপাড়া ও জয়ধরভাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করা হয়। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর টহল দল তাদের আটক করে স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে যায়। বর্তমানে আটককৃতদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
বিজিবি সূত্র মতে:
- শুকানি পাড়া সীমান্ত: বুধবার ভোরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবির আওতাধীন শুকানি বিওপি এলাকা দিয়ে ভারতীয় বিএসএফের ৪৬ ব্যাটালিয়নের ট্যাপরাভিটা ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪১ এর ৪ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে নারী, পুরুষ, শিশুসহ ৫ জনকে পুশইন করে। পরে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভজনপুর বিওপির টহল দল সীমান্তের মেইন পিলার ৪২৮ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের ধানশুকা এলাকায় তাদের আটক করে স্থানীয় বিওপিতে নিয়ে যায়।
- মহারাজা দিঘী সীমান্ত (টোকাপাড়া): একই দিন ভোরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের টোকাপাড়া বিওপির মহারাজা দিঘী সীমান্ত দিয়ে মেইন পিলার ৭৪৫ এর ৩-৪ সাব পিলার এলাকা দিয়ে নারী, পুরুষ, শিশুসহ ৬ জনকে পুশইন করে বিএসএফের ৯৩ ব্যাটালিয়নের স্থানীয় ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে টোকাপাড়া বিওপির টহল দল কমলাপাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করে স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
- জয়ধরডাঙা সীমান্ত: পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের জয়ধরডাঙা সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫৮ এর ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে বিএসএফের ৯৩ ব্যাটালিয়নের শ্যাম বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা ৭ জনকে পুশইন করে। সকালে জয়ধরডাঙা বিওপির বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।
তিন সীমান্তে আটককৃতদের পঞ্চগড় সদর ও তেঁতুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
আটকদের পরিচয় ও পূর্বের অবস্থা:
আটককৃতরা ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক ও দিনমজুরের কাজ করতেন। পরে ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে বিমানযোগে শিলিগুড়ি বাগডোগরা বিমানবন্দরে পাঠায়। সেখান থেকে তাদের সীমান্তের তিনটি পৃথক এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ।
প্রশাসনের বক্তব্য:
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুসা মিয়া বলেন, শুকানি বিওপি এলাকা দিয়ে পুশইন করা পাঁচজনকে ভজনপুর বিওপির সদস্যরা তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদেরকে আইন অনুযায়ী পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, পঞ্চগড় সদর উপজেলার দুইটি সীমান্ত দিয়ে মোট ১৩ জনকে পুশইন করা হয়েছে। বিজিবি তাদের আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে এবং আইন অনুযায়ী পরিবারের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা দিয়ে মোট ১৩ জনকে পুশইন করা হয়েছে। তিনি জানান, তারা থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করার মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন এবং পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরুল ইসলাম বলেন, নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের শুকানি ক্যাম্প এলাকা দিয়ে পাঁচজন বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর দেবনগর ইউনিয়নের ধানশুকা এলাকায় তাদের ভজনপুর বিওপির টহল দল আটক করে। তারা তেঁতুলিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করে তাদের হস্তান্তর করেছেন।
ট্যাগস: পঞ্চগড়, বিএসএফ, পুশইন, তেঁতুলিয়া, সীমান্ত, বিজিবি, আটক, শ্রমিক, দিনমজুর, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, রাহাত হোসেন রাফি।